অস্টাদশী এক ডিভোর্সি কন্যার বিয়ে দিতে পাত্রের খোঁজ চেয়ে স্থানীয় পত্রিকায় ‘ব্যতিক্রমি এক বিজ্ঞাপন দিয়ে হৈ চৈ ফেলেছেন এক বাবা। এর আগেও বারকয়েক মেয়ের বিয়ে দিতে পাত্রের সন্ধানে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তিনি। কোন সাড়া না মেলায় এ দফায় চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে নজড় কাড়তে গিয়েই এই আলোচনার শুরু ।
কিছুদিন আগে বিজ্ঞাপনটি দেওয়া হয়েছে সংবাদপত্রে। বিজ্ঞাপনদাতা পিতা জানিয়েছে মেয়ের বিয়ে হয়েছিল গত বছর। তাঁকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হয়নি। ছ’মাসের মধ্যেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
কোলকাতার একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের প্রকাশিত বিজ্ঞাপন ও মেয়ের বাবাব উদ্ধৃতি দিয়ে ইন্ডিয়া টাইমস লিখেছে ” একে মেয়ে, তাও আবার ডিভোর্সি! কন্যার ফের বিয়ে দিতে তাই বিজ্ঞাপনে লিখতে হয়েছে, ফুলশয্যা হয়নি!
কন্যাদায়গ্রস্থ ঐ বাবার কাছে প্রশ্ন ছিলো, ডিভোর্সের পরে বিয়ে তো স্বাভাবিক। ফুলশয্যার কথা কেন উল্লেখ করতে হল? উত্তরে বাবা বলেন, ‘‘এর আগে অন্যভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখেছি। কোনও উত্তর আসেনি। এখন তো এসবই প্রধান হয়ে উঠছে। ফুলশয্যা যে হয়নি, বাধ্য হয়ে তাই জানাতেই হল।’’
এ ঘটনার পর মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান সুনন্দা মুখোপাধ্যায় এ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে একটি দৈনিকে লিখেছেন, ‘‘বাবাও পিতৃতন্ত্রেরই বাহক। অক্ষতযোনি হলে তবেই যে মেয়েকে অন্য ঘরে নেবে, তা অধিকাংশেরই চেতনে রয়েছে।’’ বিবাহ বিচ্ছেদের পর বিয়ে দিতে হলে কেন ফুলশয্যা বা তার নেপথ্যে শারীরিক নৈকট্যের সম্ভাবনার কথা পাত্রপক্ষকে জানাতেই হবে?
ডিভোর্সের পর মেয়েদের বিয়ে নিয়ে সমাজের ছুঁতমার্গ অনেকটা কমেছে বলে মনে করছেন সুনন্দা। তবে তাঁর মতে, যা কমেনি, তা হল শরীর নিয়ে কিছু ‘ট্যাবু’।
মনোবিদদের একাংশের বক্তব্য, প্রেমের বিয়ে হলে বাবা-মায়ের এই চিন্তাটা থাকে না যে মেয়েকে স্বামী একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তে কীভাবে গ্রহণ করবেন। কিন্তু বিজ্ঞাপন দিয়ে আবার বিয়ে দিতে হলে বাবা-মা ভাবেন, যেহেতু আগের স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল, তাই নতুন ঘরে সমাদর পাবেন না নববধূ।
সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ এই মনোভাব প্রসঙ্গে বিধবাবিবাহ প্রচলনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত বাল্যবিধবাদের জন্য নয়, কেবল অক্ষতযোনি বিধবাদের জন্যই পুনর্বিবাহ সমাজ তখন মেনে নিয়েছিল।’’
শাশ্বতীর কথায়, ‘‘পিতৃতন্ত্রের বাহক ওই পিতাও জানেন যে অন্য পুরুষ তাঁর মেয়ের কৌমার্যকেই বেশি গুরুত্ব দেবেন। সাধারণভাবে বিজ্ঞাপনে দেখা যায়— নামমাত্র বিবাহ। এক্ষেত্রে সেটাই আরও বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।’’
সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায় জানিয়েছেন, ‘‘শুধু শারীরিক সম্পর্কের ফলে হাইমেন ছিঁড়ে যায়, এমন ধারণাই তো ভুল। সাইকেল চালানো, জিমন্যাস্টিকস, নাচ— আরও অনেক কারণে তা অক্ষত থাকে না। এক্ষেত্রে পিতৃতন্ত্রের ফাঁদে পড়েই এমন শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।’’
কন্যাদের এই অপমানের শেষ হবে কবে? সমাজবিজ্ঞানী বা মনোবিদদের একাংশের মতে, সেই দিনের প্রতীক্ষা দীর্ঘ। আরও বড় লজ্জা এই যে প্রশ্নটা করতে হচ্ছে একবিংশ শতকেও!
No comments:
Post a Comment