গত নভেম্বরে ব্রাজিল নারী ফুটবল দলের কোচ হলেন এমিলি লিমা। আর এতেই রচিত হলো ইতিহাস। এই প্রথম ব্রাজিল নারী দলের দায়িত্ব পেলেন কোনো নারী। দায়িত্বটাকে যে উপভোগ করছেন, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রথম পাঁচ মাসেই। এখন পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে লিমার দল। সব কটিতেই জয়!
কোচ হিসেবে আলো ছড়াচ্ছেন, তবে ভাগ্য সহায় থাকলে হয়তো এখনো মাঠে বল পায়ে দেখা যেত ৩৬ বছর বয়সী লিমাকে। হাঁটুর চোট যে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই অবসর নিতে বাধ্য করেছে তাঁকে। তবে এরই মধ্যে অনেক কিছু করেছেন। ১৩ বছর বয়সে ক্লাব ফুটবলে নাম লেখানো, ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-১৭ দলে সুযোগ পাওয়া। ক্লাব ফুটবল খেলেছেন স্পেন, পর্তুগাল ও ইতালিতে। যৌথ নাগরিকত্বের সুবাদে পর্তুগালের জাতীয় দলেও খেলেছেন এই উইঙ্গার। তবে নিজের সেরাটা দিচ্ছেন যেন ডাগআউটে বসেই।
মজার ব্যাপার, কোচিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার কথাই আগে কখনো ভাবেননি লিমা। এই চিন্তাটা মাথায় ঢুকিয়েছেন তাঁর ভাই ওয়েবার, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল ফুটবল প্রশাসনে কাজ করার। কিন্তু আমার ভাই সব সময় বলত, আমি ভালো কোচ হব। সে ভেবেছে, টেকনিক্যাল দিকগুলোয় আমার জোর দেওয়া উচিত। সে আমাকে এ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।’ ভাইয়ের জোরাজুরিতেই ২০১০ সালে সাওপাওলোর পর্তুগিসা ক্লাবে সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে তো ক্লাব অ্যাটলেটিকো জুভেন্টাসের কোচই হয়ে গেলেন।
সেই ধারাবাহিকতায় এখন জাতীয় দলের কোচ। সেখানেও পাচ্ছেন সাফল্য, যা আরও অনুপ্রাণিত করছে লিমাকে, ‘এখন পর্যন্ত সবকিছু ইতিবাচক হচ্ছে। খেলোয়াড়েরা সবকিছু ভালোভাবে বুঝছে, আর সেটাই আরও বেশি পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করছে।’ তবে সাফল্যটা যাতে দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে জন্য আরও বড় পরিকল্পনা আছে। জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ নারী দলের কোচ ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাও কাজে লাগছে এখানে, ‘বয়সভিত্তিক দলগুলোকে একটা প্রক্রিয়ায় আনা হচ্ছে। এতে আমাদের সবগুলো দলের খেলার ছন্দটা একই রকম থাকবে, খেলোয়াড়েরা যাতে পরবর্তী ধাপে এসে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।’
প্রতিনিয়ত পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ফুটবল। এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিজের আদর্শদের কাছেই প্রেরণা খোঁজেন লিমা, ‘লুইস ফেলিপে স্কলারি যখন পালমেইরাসে ছিলেন, তখন থেকেই তাঁকে আমি পছন্দ করি। যেভাবে তিনি খেলোয়াড়দের সামলাতেন, তাঁর অনুশীলনের পদ্ধতি—সবকিছু। আমি তিতেকেও অনেক দিন ধরে অনুসরণ করছি। গার্দিওলা ও মরিনহোর ব্যাপারেও প্রচুর পড়ি। তাঁরা যা করেছেন, অসাধারণ।’
তবে স্কলারি কিংবা গার্দিওলাদের চেয়েও লিমার কাজটা কঠিন। তাঁকে যে শুধু মাঠের সাফল্য নিয়ে ভাবলেই চলে না, অনেক চোখ রাঙানো ও ভ্রু কোঁচকানোকেও উপেক্ষা করতে হয়। এর মধ্যেও সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন লিমা, ‘প্রথাগতভাবে পুরুষদের কাজ মনে করা হয় যেগুলোকে, সেখানে নারীদের প্রতিদিন যোগ্য প্রমাণ করতে হয়।’
সেটিই করে যাচ্ছেন এমিলি লিমা। ফিফাডটকম।
No comments:
Post a Comment