রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ হোক সে যেন আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বোখারি : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯)। আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার দ্বারা মানুষের হায়াত লম্বা হয় এবং ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘সে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী নয় যে সম্পর্ক রক্ষার বিনিময়ে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই, যার সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরলে সে তা জোড়া দেয়।’ (বোখারি : ৫৯৯১)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথাও বলে গেছেন, প্রকৃতপক্ষে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার কৃতিত্ব তারই প্রাপ্য যে অন্য পক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও নিজের পক্ষ থেকে তা জোড়া লাগায়। পক্ষান্তরে যার সঙ্গে সম্পর্ক বহাল রয়েছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করলে তা হবে সর্বোচ্চ ভালো সম্পর্কের প্রতিদানে ভালো সম্পর্ক। এটি যদিও আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মধ্যেই পড়ে কিন্তু যে ব্যক্তি সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে এমন আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক জুড়বে তার সওয়াব অনেক বেশি এবং তার প্রতিদান অনেক বড়।
আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবদ্দশায় আমার আম্মা মুশরিক থাকতে একবার আমার কাছে আগমন করলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী, আমি কি আমার আম্মার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবো? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, তুমি স্বীয় মাতার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখো।’ (বোখারি : ২৬২০; মুসলিম : ২৩৭২)।
আত্মীয়তা-সম্পর্ক ঠিক রাখার সুফল:
ক. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা ঈমানের পূর্ণতা ও ইসলামের সৌন্দর্যের প্রকাশ। খ. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা রিজিক ও হায়াত বৃদ্ধির কারণ।
গ. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়।
ক. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা ঈমানের পূর্ণতা ও ইসলামের সৌন্দর্যের প্রকাশ। খ. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা রিজিক ও হায়াত বৃদ্ধির কারণ।
গ. আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়।
আতা বিন আবি (রহ.) বলেন, ‘আমি আমার আত্মীয়ের জন্য এক টাকা খরচ করাকে দরিদ্র ব্যক্তির জন্য এক হাজার টাকা খরচ করার চেয়ে উত্তম মনে করি। একজন তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আবু মুহাম্মদ, যদি আত্মীয়টি ধনাঢ্যতায় আমার মতো হয় তবুও? তিনি বললেন, যদি সে তোমার চেয়েও বড় বিত্তশালী হয় তবুও।’ (ইবনে আবিদ্দুনিয়া, মাকারিমুল আখলাক : ৬২ পৃষ্ঠা)।
আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে পূর্বসূরি বুজুর্গদের উক্তি- হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তোমরা তোমাদের বংশগতি বিদ্যা শিক্ষা করো, অতঃপর আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করো। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় তোমাদের একজনের সঙ্গে তার ভাইয়ের বিবাদ হবে, যদি সে জানতো তার ও এর মাঝে আত্মীয়তা-সম্পর্কের কী গুরুত্ব রয়েছে তাহলে তা তাদের এ সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত রাখতো।’ (তাফসিরে তাবারি : ১/১৪৪)।
আমর বিন দিনার (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চিত জেনো, ফরজ আদায়ের জন্য কদম ফেলার সর্বোত্তম পদক্ষপ সেটি, যা আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার জন্য ফেলা হয়।’ সুলাইমান বিন মুসা (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ বিন মুহাইরিসকে জিজ্ঞেস করা হলো, আত্মীয়তা-সম্পর্কের হক কী? তিনি বললেন, যখন সে এগিয়ে আসে তখন তাকে স্বাগত জানানো আর যখন সে পিছিয়ে যায় তখন তার পেছনে যাওয়া।’ (প্রাগুক্ত)।
আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিনষ্ট করার আরেকটি ক্ষতি হলো, আখেরাতের আগেই দুনিয়াতে এর শাস্তি প্রদান করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিনষ্ট করা ও জুলুমের চেয়ে অধিক উপযুক্ত কোনো অপরাধ নেই, যার শাস্তি দুনিয়াতে দেয়া হয়। অথচ আখেরাতের শাস্তি তার জন্য বরাদ্দই থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২০৪১৪)।
এক বর্ণনায় রয়েছে এ সম্পর্ক ছিন্নকারী যেন উত্তপ্ত বালি ভক্ষণ করে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার কিছু আত্মীয় রয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করি আর তারা তা নষ্ট করে, আমি তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি আর তারা আমার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে এবং তারা আমার সঙ্গে মূর্খতাসুলভ আচরণ করে আর আমি তাদের আচরণে ধৈর্য ধরি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ঘটনা যদি তেমনই হয় যেমন তুমি বলছো, তাহলে তুমি যেন তাদের উত্তপ্ত বালু খাওয়াচ্ছো আর যতক্ষণ তুমি তোমার এ অবস্থানে থাকবে, তোমার সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে।’ (বোখারি : ৬৬৮৯; মুসলিম : ৪৬৪০)।
No comments:
Post a Comment