ইন্দোনেশিয়ার তোরাজন এলাকার পুরনো প্রথার এটিও একটি, যেখানে মৃতরা জীবিতদের সঙ্গেই বসবাস করে। কেউ মারা যাওয়ার অনেক মাস পর, অনেক বছর পর শেষকৃত্য হয়। এ মধ্যবর্তী সময়ে নানা হারবাল ও রাসায়নিক দিয়ে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে পরিবারের সঙ্গেই রাখা হয়। তাকে দিনে দুবার খাবার দেয়া হয়, এমনটি টয়লেটের জন্যও রুমে এক কোনে একটি পাত্র রাখা হয়।
এমনই এক বাড়ির ছোট মেয়ে মামাক লিসা বিবিসিকে বলেন, তার (মৃত ব্যক্তি) সঙ্গে হৃদয়ের আবেগের খুব সম্পর্ক আছে। আমাদের সেই সম্পর্ক এখনো আছে। বাবার মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা আমার দুঃখবোধ কাটাতে অনেক সাহায্য করছে। আমার বাবা যে মারা গেছেন সে কষ্টের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে আমি সময় পাচ্ছি। ’ তিন বছর আগে নিহত এক ব্যক্তির পুত্রবধূ বলছেন, যখন তাকে দেখতে পাই তখন মনে হয় তিনি আমাদের কত ভালোবাসতেন।
যখন চূড়ান্তভাবে মৃতদের বিদায় জানানো হয় তখন অনুষ্ঠান হয় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। আত্মীয়স্বজনরা আসেন। অনেক টাকা পয়সাও খরচ করা হয়। আবার এ শেষকৃত্য কিন্তু চূড়ান্ত বিচ্ছেদ নয়। কয়েক বছর পর পর নানা উপলক্ষে কফিন খুলে মৃতদেহ বের করা হয়। বন্ধু আর আত্মীয়রা তাকে নানা খাবার দেন, পরিষ্কার করে একত্রে তার সঙ্গে ছবিও তোলেন।
পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতি বা ধর্মেই মৃত্যুকে মনে করা হয় শুধু শারীরিক বিনাশ। যা এই জগতের শেষ, আর অন্য আরেক জগতের শুরু। ইন্দোনেশিয়ার এই প্রথা সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী আন্দি তান্দি লোলো বলেন, ‘সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখলে এটি জীবিত ও মৃতদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার মতো ব্যাপার।’ তবে এ প্রাচীন প্রথাটি এখন ক্রমেই বিলুপ্তির পথে।
No comments:
Post a Comment