ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা আর্জেন্টিনার বলে জাতিসঙ্ঘ রায় দিয়েছে। তবে এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে ব্রিটেন। জাতিসঙ্ঘের এ সংক্রান্ত কমিশন নিছক একটি উপদেষ্টা সংস্থা বলে উল্লেখ করে ব্রিটেন বলেছে, এ কমিশনের সুপারিশ মেনে নেয়া বাধ্যতামূলক নয়। জাতিসঙ্ঘ কমিশনের রায়ের ফলে আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ মীমাংসার সুরাহা হবে বলে মনে করা হচ্ছিল।
ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ আর্জেন্টিনার পানিসীমার মধ্যে অবস্থিত বলে রায় দিয়েছে সংস্থাটি। ফকল্যান্ড নিয়ে আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। আর্জেন্টিনার দাবি ওই দ্বীপপুঞ্জের মালিক তারা। অপর দিকে ব্রিটেনও একে নিজের বলে দাবি করছে।
২০০৯ সালে আর্জেন্টিনার এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেয় জাতিসঙ্ঘ। মহিসোপানটির সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে আর্জেন্টিনা। এ রায়ের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার মালিকানার দাবি সঠিক বলে প্রমাণিত হলো বলে মনে করছে দেশটি। ফকল্যান্ড আর্জেন্টিনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দণি আটলান্টিক সাগরে দেশটির ৩৫ শতাংশ এলাকা বেড়ে যাবে। আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুসান মালছরা রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা আর্জেন্টিনার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ আমরা আমাদের মহিসোপানের বহিঃসীমা নির্ধারণে দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা করে আসছি। এ রায় আবার নিশ্চিত করল, ফকল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার আমাদের।’ তবে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফকল্যান্ডের ব্রিটিশ সমর্থিত সরকার। তাদের ধারণা, এ রায়ের ফলে দ্বীপপুঞ্জের প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার হারাবে তারা। ফকল্যান্ডের আইন পরিষদের সভাপতি মাইক সামারস বলেন, ‘আমরা মনে করি, মহিসোপানটির বাস্তব দিকের কথা বিবেচনা করে জাতিসঙ্ঘ রায়টি দেয়নি।’
ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান দণি আটলান্টিক মহাসাগরে। দীর্ঘদিন ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকা ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের আয়তন ১২ হাজার ১৭৩ বর্গকিলোমিটার। আর্জেন্টিনার মূল ভূখণ্ড থেকে এটি প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার এবং যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর্জেন্টিনা উপকূলের কাছে অবস্থিত হওয়ায় উনিশ শতকের শুরু থেকেই এই দ্বীপগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করে আসেছে আর্জেন্টিনা। এগুলিকে ‘মালবিনাস দ্বীপপুঞ্জ’ নামে ডাকে দেশটির অধিবাসীরা।
১৮৩৩ সালে এখানে ব্রিটিশদের বসতি ও নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়। তখন থেকেই যুক্তরাজ্য দ্বীপগুলোর ওপর আর্জেন্টিনার দাবি অগ্রাহ্য করতে থাকে। আশির দশকের দিকে ফকল্যান্ডকে কেন্দ্র করে ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। ১৯৮২ সালের ২ এপ্রিল এক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ড দখল করে নিলে ব্রিটেনের সাথে দেশটির যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধে আর্জেন্টিনা ব্রিটেনের কাছে পরাজিত হয় এবং যুক্তরাজ্য দ্বীপটির ওপর তার কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।
যুদ্ধ চলে ৭৪ দিন। এ যুদ্ধে আর্জেন্টিনার ৬৫৫ জন ও ব্রিটেনের ২৩৬ জন সেনা প্রাণ হারায়। ব্রিটিশ সেনারা দ্বীপটি দখলের পর ১০ হাজার আর্জেন্টিনীয়কে বন্দী করে। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। আর্জেন্টিনা যুদ্ধে পরাজিত হলেও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের মালিকানার দাবি ত্যাগ করেনি।
No comments:
Post a Comment