প্রথম ভালবাসার সম্পর্কটি সবসময়ই হয়ে থাকে একটু অন্যরকম। বেশী প্রিয়, বেশী ভালো লাগার ও বেশী আবেগের। বলা হয়ে থাকে, ‘প্রথম প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্কটি কখনো ভোলা যায় না।‘ কথাটি সত্য। জীবনে প্রথমবারেরে মতো কাউকে ভালোবাসার অনুভূতিগুলো নিজের কাছেই খুব বিশেষ হয়ে থাকে। সাধারণত প্রথম ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয় না। প্রথম ভালোবাসার সম্পর্কটি ভেঙে যাবার পরে দ্বিতীয়বারের মতো ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ানোর জন্য প্রয়োজন অনেক বেশী মানসিক শক্তি, সাহস এবং বিশ্বাস। জীবনের অন্যতম অবেগের একটি অধ্যায়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই নতুন সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক ভীতি কাজ করে মনে।
তবে, পুনরায় কাউকে ভালোবাসা ও তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর ব্যাপারটির ক্ষেত্রে থাকে অনেক ভিন্নতা। নতুন সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে আকর্ষণ ও আবেগের চাইতেও বেশী কাজ করে অভিজ্ঞতা। এছাড়াও নানান দিক থেকেই দ্বিতীয় ভালোবাসার সম্পর্কটি হয়ে থাকে অনন্য। কী সেই সকল দিকগুলো? এখানে তুলে ধরা হলো তেমনই কিছু দারুণ ইতিবাচক দিক।
মানসিক কষ্ট সারিয়ে তোলে
প্রথম ভালোবাসার সম্পর্কটি ভেঙে যাবার পরে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে অনেকটা সময় পার করতে হয়। নতুন করে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ানোর ফলে সেই কষ্টটা অনেকাংশেই দূর হয়ে যায়। নতুন করে কাউকে ভালোবাসার অনুভূতি, তার কাছ থেকে পাওয়া মানসিক সমর্থন, মানসিক দৈন্যতা কাটিয়ে উঠতে অনেক বেশী সাহায্য করে থাকে।
মানসিকভাবে অনেক শক্ত করে তোলে
ভেঙে যাওয়া পুরনো সম্পর্কের অভিজ্ঞতার ফলে ইতিমধ্যেই মানসিকভাবে আগের চাইতে অনেক বেশী পরিপক্বতা চলে আসে নিজের মাঝে। তবে দ্বিতীয় সম্পর্কে জড়ানোর পর সেই মানসিক শক্তিটা বৃদ্ধি পায় অনেকখানি। কারণ তখন ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যায় শর্তবিহীন ভাবে।
সম্পর্কে ভালোবাসার প্রাবল্যতা
প্রথম ভালোবাসার সম্পর্কটি ভেঙে যাবার ফলে হৃদয় ভাঙার কষ্টটা তৈরি হয়। কিন্তু দ্বিতীয় সম্পর্কে জড়ানোর পর সেই সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসাটা থাকে অনেক বেশী। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে, প্রথম সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসার যে কমতিটুকু থাকে, দ্বিতীয় ভালোবাসার সম্পর্কে সেই কমতিটুকুন পূরণ হয়ে যায়।
সুরক্ষিত সম্পর্ক
প্রথম ভালোবাসার সম্পর্কের চাইতে দ্বিতীয় ভালোবাসার সম্পর্কটি অনেক বেশী সুরক্ষিত হয়ে থাকে। সময় নিয়ে এবং বুঝেশুনে পুনরায় সম্পর্কে জড়ানোর ফলে সম্পর্কের গুরুত্ব ও গভীরতা পূর্বের চাইতেও অনেক বেশী হয়ে থাকে। যার ফলে দ্বিতীয় সম্পর্কটি প্রথম সম্পর্কের চাইতেও অনেক বেশী নিখুঁত হয়ে গড়ে ওঠে।
ভালো বোঝাপড়া
বহুল প্রচলিত একটা প্রবাদ হচ্ছে, “Experience makes a man perfect.” অভিজ্ঞতার মাঝে দিয়েই প্রতিটি মানুষ তার জীবনের শিক্ষাগুলো গ্রহণ করে থাকেন। পূর্বের সম্পর্কে যে ভুলগুলো ছিল, খুঁজলে দেখা যাবে তার মাঝে অন্যতম ছিল বোঝাপড়ার সমস্যা। দ্বিতীয়বার সম্পর্ক তৈরি ক্ষেত্রে সেই কমতি ও ভুলটা কাটিয়ে উঠে নিজেকে অনেকটাই পরিণত করে ফেলা সম্ভব হয়। যে কারণে, দ্বিতীয় সম্পর্কে দু’জনের মাঝে বোঝাপড়ার ব্যাপারটি থাকে চমৎকার।
কম তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি হয়
প্রথম সম্পর্ক থাকাকালীন অবস্থা থেকেই বেশ কিছু ব্যাপারে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়ে যায়। তার মাঝে অন্যতম হলো, কোন ব্যাপারগুলো নিয়ে অহেতুক তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয় সেটা বোঝা। এর ফলে সচেতনভাবেই দ্বিতীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে না। জানা থাকে বলে, যে সকল ব্যাপারে ঝগড়া ও তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে সেই সকল বিষয়ে কথা বলা এড়িয়ে যাওয়া যায় সহজেই।
প্রতিশ্রুতি বদ্ধতা
অবচেতনভাবেই দ্বিতীয় সম্পর্কের মাঝে প্রতিশ্রুতি বদ্ধতা বেশী কাজ করে। প্রথম সম্পর্ক ভেঙে যাবার ফলে মনের মাঝে একটি ভীতি সবসময় কাজ করে। ‘যদি এই সম্পর্কটিও ভেঙে যায়!’ এমন মানসিক ভীতি থেকেই প্রতিশ্রুতি বদ্ধতার ব্যাপারটি চলে আসে।
একে অপরের প্রতি বিশ্বাস
প্রতিকূল সময় ও মানসিক অবস্থা পার করার ফলে বেশ কিছু বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়ে যায়। যেমন: কোন পরিস্থিতিতে, কোন পরিবেশে, কোন সমস্যার ক্ষেত্রে কী করা প্রয়োজন এবং কীভাবে সেগুলো সামলানো যাবে! দ্বিতীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গীর সাথে সকল পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেক ভালোভাবে ও দক্ষতার সাথে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। এতে করে সম্পর্কের মাঝে পারস্পরিক বিশ্বাস বোধ তৈরি হয়।
সম্পর্ক হয় দীর্ঘস্থায়ী
কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয় যে, সম্পর্কটি আজীবনের জন্য স্থায়ী হবে কিনা! তবে পূর্বের সম্পর্কের ফলে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়ে যাওয়ার ফলে দ্বিতীয় ভালোবাসার সম্পর্কটি হয় মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী। প্রথম সম্পর্কের মতো নাজুক হয় না মোটেও।
No comments:
Post a Comment