রোহিত শর্মা করেছিলেন অপরাজিত ১৭১ রান। ভারত ৩ উইকেটে ৩০৯। কিন্তু পার্থের ওয়াকায় এই রানও কম হয়ে গেল! একসময় ব্যাটসম্যানদের চোখের পানি নাকের জল যে পিচে মিলে মিশে একাকার হতো, সেখানে এক ম্যাচেই দেখা গেল তিনটি সেঞ্চুরি! রোহিতের জবাবে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ও মিডল অর্ডার জর্জ বেইলি হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। তৃতীয় উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার সেরা জুটির নতুন রেকর্ড গড়েছেন। তাতেই মাঝ পথে খেলা ভারতের হাতছাড়া। শেষ পর্যন্ত ৪ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেল ১-০তে। অভিষেক ম্যাচেই তিন উইকেট নিয়েছেন বারিন্দর স্রান। তাও নতুন বল হাতে নিজের দ্বিতীয় ওভারে এই বাঁ হাতি পেসার শিকার করেছেন অ্যারন ফিঞ্চকে। পরের ওভারেই তুলে নিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। ২১ রানে ২ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার। এরপর অবশ্য আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি স্বাগতিকদের। কারণ, স্মিথ ও বেইলি তৃতীয় উইকেটে ২৪২ রানের জুটি গড়েছেন। ২০০৩ সালে রিকি পন্টিং ও ডেমিয়েন মার্টিন ভারতের বিপক্ষেই তৃতীয় উইকেটে ২৩৪ রানের জুটি গড়েছিলেন। সেই রেকর্ড ভেঙেছেন স্মিথ ও বেইলি। যদিও বেইলি স্রানের বলে কট বিহাইন্ড হতে পারতেন। গ্লাভসে বল লেগে উইকেটের পেছনে এম এস ধোনির হাতে গেল। আপিল সেভাবে হয়নি। বেনিফিট অব ডাউট পেয়েছেন বেইলি। বেইলি ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করেছেন। স্মিথ পঞ্চম। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ভালোই পিটিয়েছেন দুজন। শেষের দিকে ভারতের হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অশ্বিনই। ১২০ বলে ১১২ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন বেইলি। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও তার শিকার হয়েছেন। শেষ ওভারে জয় যখন নিশ্চিত তখনই স্রানের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরেছেন স্মিথ। ১৩৫ বলে খেলা ১৪৯ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ার সেরা। দুই সেঞ্চুরিয়ানকে আউট করা গেলেও অস্ট্রেলিয়ার জয় ঠেকানো যায়নি।
এর আগের সময়টা ছিল রোহিত ও বিরাট কোহলির। বড় সড় ইনিংস খেলতে বিখ্যাত রোহিতের ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ভি ভি এস লক্ষ্মণের পর ভারতীয় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন। ওয়াকায় প্রথম ভারতীয় হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন। তবে রোহিত আসল কাণ্ডটা করেছেন ৩৬ বছরের এক রেকর্ড ভেঙে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি এখন তার। ১৯৭৯ সালে স্যার ভিভ রিচার্ডস ১৫৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেটা ভাঙলেন রোহিত। ৯১ রান করে আউট হওয়ার হতাশা ছিল বিরাট কোহলির। অস্ট্রেলিয়ার অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ বোলিং লাইন আপকে হতাশ করে ছেড়েছিলেন রোহিত ও কোহলি। ৩৬ রানে ভাঙল ওপেনিং জুটি। ৯ রানে বিদায় নিলেন শিখর ধাওয়ান। এরপর ২০৭ রান এসেছে রোহিত-কোহলির দ্বিতীয় উইকেট জুটি থেকে। ওয়ানডে ক্রিকেটে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির একমাত্র মালিক রোহিত সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না গত মার্চের পর থেকে। এবার ৫০ পেরিয়ে গেলেন সতর্কভাবে। ছক্কা মারলেন মাত্র একটি। তাও এই ম্যাচে অভিষিক্ত পেসার জোয়েল প্যারিসকে। সেঞ্চুরি করতেও সময় নিলেন। ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরিটা করতে রোহিত খেলেছেন ১২২ বল। ৭টি চার মেরেছেন। ছক্কা তিনটি। কিন্তু সেঞ্চুরির পর হাত খুলেছেন রোহিত। কোহলিও নিজের ২৪তম সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। যখন মনে হচ্ছে সেঞ্চুরিটা হলো বলে তখনই বিদায় নিতে হয় কোহলিকে। জেমস ফকনারকে তুলে মেরেছিলেন। বাউন্ডারি লাইনের কাছে অ্যারন ফিঞ্চ ক্যাচটা নিলেন। শেষ হলো চমৎকার একটি জুটি। ৯৭ বলে ৯১ রানের হতাশা নিয়ে ফিরতে হলো কোহলিকে। অধিনায়ক এম এস ধোনি এসে মারতে চেয়েছেন। ১৩ বলে ১৮ রান করে বিদায় নিয়েছেন। তবে ততক্ষণে ঝড় তুলতে থাকা রোহিত থামেননি। শেষের দিকে আরেক অভিষিক্ত বোলার স্কট বোল্যান্ডের দুই ওভারে তিনটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। বেচারা বোল্যান্ড ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ১০ ওভারে ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৪ রান দিলেন। শেষ ১০ ওভারে ৯৩ রান তুলেছে ভারত। আর সেঞ্চুরির পর ৭১ রান তুলতে ৪১ বল খেলেছেন রোহিত। ১৬৩ বলে ১৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১৭১ রানে অপরাজিত থেকেছেন রোহিত। তার আগের ১৫০ বা তার বেশি রানের ইনিংসগুলো হলো ২৬৪, ২০৯ ও ১৫০। কেবল শচীন টেন্ডুলকারেরই আছে ১৫০ বা তার বেশি রানের ৫টি ইনিংস। ৪টি নিয়ে তার পেছনেই গিয়ে দাঁড়ালেন রোহিত। কিন্তু এমন ইনিংস খেলার পরও পরাজিত দলের সদস্য রোহিত!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment