Social Icons

Friday, January 19, 2018

বিয়ের আগে যে বিষয়গুলো জানা আবশ্যক

হুট করে বিয়ে হয়ে গেল তানজিনার। পেশায় চিকিৎসক তানজিনার বিয়ের ব্যাপারে নিজের কোন মতামত দেয়ার সুযোগ ছিল না। বাবা-মা ভীষণ চাপ দিচ্ছিলেন বিয়ের জন্য। একে তো বয়স বেড়ে যাচ্ছে, তার উপর ছোট আরো দুই বোন আছে। এসব কারণেই ওকে বিয়েতে রাজি হয়ে যেতে হলো। বিয়ে যেহেতু করতেই হবে একজনকে না একজনকে, এত ভাবাভাবির কী আছে? কিন্তু বিয়ের পরে তানজিনা তার নতুন জীবনের সাথে মানিয়ে চলতে পারছে না। এমন কি জীবনটা ওর কাছে আনন্দময় না হয়ে বোঝার মত মনে হচ্ছে। বিয়ের পরে স্বামী অনেক কিছু ওর উপরে চাপিয়ে দিয়ে নিজে ফুরফুরে হয়ে গেছে। মনের ভেতরে জমা হতে থাকে রাশি রাশি বিরক্তি, ক্ষোভ, ক্রোধ। কখনো বাবা-মায়ের উপর, কখনো স্বামীর উপর, কখনো নিজের উপরেই। কেন সে এই বিয়েতে রাজি হতে গিয়েছিল?

বিয়ের আগে হবু বর-কনে ও তাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য অনেক উচ্ছ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করে থাকেন উৎসবের দিনটির জন্য। এজন্য তাদের নানা রকম প্রস্তুতিও থাকে। কোন পার্লার থেকে কনেকে সাজানো হবে, কোথা থেকে বিয়ের পোশাক কেনা হবে, কেমন গয়না বানানো হবে, কোথায় বিয়ের পার্টির আয়োজন করা হবে, গায়ে হলুদে কী করা হবে, পান-চিনিতে কী করা হবে এমনি নানান সব আয়োজনে সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। উৎসবের আনন্দে যেন এতটুকু ঘাটতি না থাকে। কিন্তু বিয়ের আগে বর-কনের যে আগে থেকে একটা মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন থাকা দরকার, সে ব্যাপারে কারোরই যেন সচেতনতা নেই। মানসিকভাবে প্রস্তুতি বলতে অনেকে এটুকুই বোঝেন যে, ‘’হ্যাঁ, আমার বিয়ে হবে। এর জন্য আমি তৈরি।‘’ কিন্তু বিয়ের পরে সম্পর্কটি কীভাবে চালিয়ে যেতে হবে, এরপরে যে শারীরিক পরিবর্তনগুলো তৈরি হবে, দুই পরিবারের সব সদস্যদের সাথে কিভাবে মানিয়ে চলতে হবে তার জন্য হয়ত দেখা যাবে তিনি মানসিকভাবে একেবারেই প্রস্তুত নন।

বিয়ের আগে বর ও কনের উভয়েরই আগে ভেবে দেখতে হবে তিনি আসলে কেন বিয়ে করতে যাচ্ছেন? বাসা থেকে বিয়ের জন্য অনেক চাপ দেওয়া হচ্ছে, বন্ধুদের মধ্যে প্রায় সবাই বিয়ে করে ফেলছে, বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে এমন সব কারণে আপনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন, নাকি আপনার নিজেকে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সব দিক থেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত মনে হচ্ছে? নিজের কাছে এই প্রশ্নের উপর যদি হ্যাঁ পেয়ে থাকেন তবে এবার ভাবুন কাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন? শুধু এরেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রেই নয়, প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রেও এই প্রশ্নের উত্তর জানা খুব জরুরি। যদি মনে হয় আপনি তাকে খুব ভালবাসেন বলে বিয়ে করতে চান, এটাকেও ঠিক বিয়ের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ঠ কারণ বলা যাবে না। কারণ, একটি বিয়ের সম্পর্ক শুধু ভালবাসা দিয়েই চালানো যায় না। ভেবে দেখুন, ঐ ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ আপনি কতটুকু জানেন, সেগুলোর কতখানি মূল্য/গুরুত্ব আপনি দিতে পারবেন? তিনিই বা আপনার সম্পর্কে, পছন্দ অপছন্দ কতটুকু জানেন, তিনি কিভাবে আপনাকে মূল্যায়ন করেন? দুজন ভিন্ন মানুষ অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন রকমের হবে। কখনোই এমন হবে না যে তাদের সব চাওয়া-পাওয়া, চিন্তা ভাবনা ১০০% মিলে যাবে, এটা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব। কারণ, দুজন ব্যক্তি শৈশব থেকে দুটি ভিন্ন পরিবারে, ভিন্ন পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে ভিন্ন ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। নিজেদের এই পার্থক্যগুলো সম্পর্কে দুজনেই জানেন কিনা? দুজনের মধ্যে যে পার্থক্যগুলো আছে সেসব কি দুজন পারবেন মানিয়ে নিতে? বিয়ের আগে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেকেই খুঁজে বের করে নিতে হবে। আর সেজন্য বিয়ের আগে হবু বর ও কনের নিজেদের মধ্যে খোলা মনে কথা বলে নেওয়া খুব জরুরি।

বিয়ের আগে বর-কনে উভয়েরই পরস্পরের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয়ের উৎস ও পরিমান, ক্যারিয়ার ও লক্ষ্য সম্পর্কে, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দর্শন, ব্যক্তির নিজের বা তার পরিবারের কারো কোন ধরনের অসুস্থতা আছে কি না, যা তাদের পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু রোমান্টিক আলাপ না করে পরিবারে কোন সংকট দেখা দিলে কীভাবে সেটা সামলাবেন, দুজনের মধ্যে মত বিরোধ হলে তা সহজভাবে নিষ্পত্তি কীভাবে করবেন, সংসারের জন্য কে কতটুকু খরচ করবেন, সংসারে কার কতটুকু ও কী দায়িত্ব থাকবে, সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা এমনি নানা সব বিষয় নিয়ে বর ও কনে কথা বলতে পারে। এতে তার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে, এই ব্যক্তিকে বিয়ে করা তার জন্য ভাল হবে কি না। 

এসব প্রশ্ন করার মানেও এটা নয় যে, আপনি বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন। এসব প্রশ্নের কোন নির্দিষ্ট জবাব নেই। ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি তার নিজের দৃষ্টিভংগীর দিক থেকে এসব প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিয়ে থাকবেন। বরং এমন প্রশ্নের সম্মখিন হলে আপনার সঙ্গী-সঙ্গীনী বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে সচেতন ও প্রস্তুত হবেন। খোলা মনে ও সৎভাবে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা দুজন দুজনকে চিনতে সাহায্য করবে। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবার পরে সমস্যা তৈরি হবার চেয়ে, আগেই সমস্যা সম্পর্কে আন্দাজ করে তা সে সম্পর্ক আর না বাড়ানো বেশি ভাল। এর চেয়েও আরো ভাল যদি সে সমস্যা সমাধানের উপায় হবু বর-কনে দুজনের জানা থাকে। তাতে বিয়ের পরে জীবনটা বোঝা মনে না হয়ে বরং উলটো মনে হবে বোঝা কমে গেল আর সেটা দুজনের বেলাতেই।

বিয়ের আগে আপনার সঙ্গী সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জেনে রাখা উচিত:

প্রেমের বিয়ে কিংবা পারিবারিক বিয়ে হউক, সকল ক্ষেত্রেই বিয়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। আগে থেকে চেনা মানুষ কিংবা অচেনা মানুষের দুটি সম্পর্কের অনেক মিল অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু এই মিল অমিলের মাত্রা যদি এতটাই হয়ে থাকে যে তা সহ্য করা কঠিন তবে সে সম্পর্কটুকু সমান্তরালে যাওয়া বেশ দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই বিয়ের আগে সকলেরই কিছু বিষয় জানা থাকা উচিত।

১. নাক ডাকার অভ্যাস
অনেক ছেলেরই নাক ডাকার অভ্যাস রয়েছে। প্রেম করার সময় এই বিষয়টি আপনার জানা থাকার কথা না। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সারাবিশ্বে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যে, নাকডাকার কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। তাই
দাম্পত্য জীবন শুরুর আগে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। এই
আলোচনাটুকু আপনার দাম্পত্য জীবনের জন্য সুখকর হবে।

২. পোশাক পরিচ্ছদ

আপনার চলাফেরায় হয়তো সাধারণ একটি ভাব রয়েছে অথচ আপনার সঙ্গী পছন্দ করেন একটু ফ্যাশেনেবল চলাফেরা। আপনার এই সাধারণ চলাফেরা আপনার সঙ্গীর চোখে ভালো নাও লাগতে পারে। তাই বিয়ের আগে আপনার চালচলন সম্পর্কে আপনার সঙ্গীকে জানান। কেননা বিয়ের পরে আপনার এই সাধারণ চলাচলটুকু তাকে বিব্রত করতে পারে। আপনার সঙ্গী আপনার সম্পর্কে আগে থেকে এই বিষয়ে জানা থাকলে তিনি বিষয়টি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

৩. খাদ্যাভ্যাস
সম্পূর্ণ অপরিচিত দুজন মানুষের বন্ধনের ফলে তাদের খাদ্যাভ্যাসের অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু অমিলের পরিমাণটুকু যদি বেশি হয়ে থাকে তবে তা দুশ্চিন্তার কারণই হয়ে দাঁড়াবে। মনে করা যাক আপনার সঙ্গী চাল বেশি সিদ্ধ খেতে পছন্দ করেন কিন্তু আপনি আরো কম সিদ্ধ ভাত খেতে ভালোবাসেন। প্রথম একদিন দুইদিন বিষয়টি আপনার কাছে তেমন সমস্যা মনে হবে না। কিন্তু নিয়মিত এভাবে হয়তো আপনাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এটি চরম আকারে চলে যেতে পারে। তাই এই ছোটখাট বিষয়গুলো আপনাদের উভয়েরই জানা থাকা উচিত।

৪. জীবনের পরিকল্পনা
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংসারে সমস্যা দেখা দেয় এই বিষয়টির উপর নির্ভর করে। সংসার শুরুর পর আপনি চাচ্ছেন আপনার পরিবারকে সাথে নিয়ে থাকতে অথচ আপনার সঙ্গী চাচ্ছেন তিনি আলাদা থাকবেন। এই দোটানা থেকে শুরু হবে দাম্পত্য কলহ। পরিশেষে দেখা গেল দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ। এমনটি আমরা কেও কামনা করি না। তাই সংসার শুরুর আগে আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলুন। তাকে জানান আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates