Social Icons

Thursday, January 11, 2018

ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ - আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংক ।


আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ, বাজার বিনিময়ের ভিত্তিতে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম, ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। দেশটির যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যা এর অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, সামনের কয়েক দশকে ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম অর্থনীতির একটি হিসেবে পরিণত হবে। এর বর্তমান গড় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হচ্ছে ১০,২০০ মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ৬৪তম। ব্রাজিলের বৃহৎ ও উন্নত কৃষি, খনিশিল্প, উৎপাদন ব্যবস্থা, এবং সেবাখাত রয়েছে। সেই সাথে দেশটিতে শ্রমিকের প্রাচুর্যও বিদ্যমান। ব্রাজিলর রপ্তানিখাত অত্যন্তু দ্রুত বিস্তৃত ও বিকশিত হচ্ছে, এবং টাইকুনের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করছে।জিলের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গাড়ি, ইথানল, টেক্সটাইল, পাদুকা, লৌহ আকরিক, ইস্পাত, কফি, কমলার রস, সয়াবিন, এবং কর্নড বিফ। দেশটি ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ ও পণ্যবাজারে নিজের উপস্থিতি আরও বিস্তৃত করে চলেছে। এছাড়াও ব্রাজিল উত্থানশীল অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর সংগঠন ব্রিকের সদস্য।


১৯৯৪ সাল থেকে মুদ্রা হিসেবে ব্রাজিলীয় রিয়াল ব্যবহার করে আসছে। ১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া, ১৯৯৮ সালে রাশিয়া, এবং এর রেশ ধরে বহুস্থানে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মুদ্রা নীতি সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে। বিনিময়ের হারের অব্যাহত দরপতনের ফলে সৃষ্ট মুদ্রা সংকট মোকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িকভাবে মুদ্রা বিনিময় হার নির্দিষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে ব্রাজিল পুনরায় মুক্তবাজার বিনিয়ময় হারে ফিরে যায়। অর্থনৈতিক জটিলতা কাটিয়ের ওঠার জন্য ব্রাজিল ২০০২-এর মধ্যভাগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৩০.৪ বিলিয়ন ডলারের একটি রেকর্ড পরিমাণ ঋণ সহায়তা লাভ করে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকলেও ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যংক ২০০৫ সালেই আইএমএফ-এই ঋণ পরিশোধ করে। সাম্প্রতিককালে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির যেসকল বিষয় মোকাবেলা করেছে তার মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের পুজির পরিমাণ আনুমানের চেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জটিলতা। এর ফলেই ঐ সময়কালে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলীয় রিয়ালের দরপতন ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকৃত অর্থ অনুমানের চেয়ে কম হারে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছিল। ২০০৭ সালে এর আনুমানিক পরিমাণ ছিল ১৯৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।বর্তমানে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদী ঋণে সুদের পরিমাণ মুদ্রানীতির আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশটির মুদ্রস্ফীতির হার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিবহন -
ব্রাজিলে বিস্তুত ও বৈচিত্রময় পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান। জনপরিহন ও পণ্যপরিবহনে মূলত সড়ক পথই ব্যবহৃত হয়। ২০০২ সালের হিসাব অনুযায়ী ব্রাজিলের বিদ্যমান সড়ক পথের মোট দৈর্ঘ্য্য ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার (১২ লক্ষ ৩০ হাজার মাইল)। ১৯৬৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছরে দেশটিতে পাকাকৃত সড়কের দৈর্ঘ্য্য ৩৫,৪৯৬ কিলোমিটার (২২,০৫৬ মাইল) থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৮৪,১৪০ কিলোমিটার (১,১৪,৪২৫ মাইল)। সড়ক পথের সম্প্রসারণের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় ১৯৪৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে ব্রাজিলের রেলপরিবহন ব্যবস্থার পরিধি সংকুচিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে দেশটির রেললাইনের সর্বমোট দৈর্ঘ্য্য ছিলো ৩১,৮৪৮ কিলোমিটার (১৯,৭৮৯ কিলোমিটার), এবং ২০০২ সালে এসে এই দৈর্ঘ্য্য হয় ৩০,৮৭৫ কিলোমিটার (১৯,১৮৬)। রেলওয়ে ব্যবস্থার বেশিরভাগ অংশ সরকারি মালিকানাধীন ফেডারেল রেইলরোড কর্পোরেশনের আয়ত্তাধীন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে সরকার ৭টি লাইন বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়। সাঁউ পাইলু মেট্রা ব্রাজিলের প্রথম পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থা। অন্যান্য পাতাল রেল পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে আছে রিউ দি জানেইরু, পর্তু আলেগ্রে, হেসিফি, বেলু হরাইজন্তে, ব্রাসিলিয়া, তেরেসিনা, ফর্তালিজা, এবং সালভাদোর। ব্রাজিলে প্রায় ২,৫০০ বিমানবন্দর ও বিমান অবতরণের স্থান রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সাঁউ পাউলু শহরে কাছে অবস্থিত সাঁউ পাউলু-গুয়ারুলহোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দেশটির অভ্যন্তরীন জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক পরিবহনের একটি বড় ও বৈচিত্রময় অংশ এই বিমানবন্দরে সম্পন্ন হয়। এছাড়াও আন্তজার্তিকভাবে এই বিমান বন্দরটি ব্রাজিলকে বিশ্বের সকল বড় শহরগুলোর সাথে যুক্ত করেছে।


উপকূলের পরিবহন সংযোগগুলো দেশটির স্বত্বন্ত্র অংশ। বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের সান্তোশের বন্দরগুলো মুক্তভাবে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। ব্রাজিলের ৩৬টি গভীর-জল বন্দর রয়েছে যার মধ্যে সান্তোশ, ইতাজাই, রিউ গ্রাঁদ, পারানাগুয়া, রিউ দি জানেইরু, সেপেতিবা, ভিতোরিয়া, সাউপে, মানাউশ, এবং সাঁউ ফ্রান্সিসকো দু সুই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জনপরিসংখ্যান ২০০৮ সালের গণনা অনুযায়ী ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২২.৩১ জন, এবং পুরুষ ও নারীর অনুপাত ০.৯৫:১। মোট জনসংখ্যার ৮৩.৭৫% ভাগ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ বাস দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব (৭ কোটি ৯৮ লক্ষ) ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (৫ কোটি ৩৫ লক্ষ)। যদিও ভৌগোলিকভাবে দেশটির সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে এর মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল, যা ব্রাজিলের মোট ভূখণ্ডের ৬৪.১২% ভাগ দখল করে আছে, কিন্তু সে অঞ্চলগুলোতে বসবাসকৃত মানুষের সংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৯১ লক্ষ। মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় ১৯৪০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। যদিও এ সময় জন্মহারও সামান্য পরিমাণে হ্রাস পায়। ১৯৪০-এর দশকে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ২.৪%। ১৯৫০-এর দশকে এসে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩.০%; ও ১৯৬০-এর দশকে এই হার ছিল ২.৯%। এ বছরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৪৪ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ বছরে উন্নীত হয়।[১০৯] ২০০৭ সালে এসে ব্রাজিলের মানুষের গড় আয়ু হয় ৭২.৬ বছর। ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৫০-৫০-এর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৩.০৪%। ২০০৮ সালে এসে এ হার দাঁড়ায় মাত্র ১.০৫%-এ। ধারণা করা হয়, এমনভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রাজিলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক অঙ্কে পৌঁছাবে, এবং হার হবে -০.২৯%।


ব্রাজিলের ইন্সটিটিউট অফ জিওগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের ২০০৮ সালের গণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যার ৪৮.৪৩% ভাগ (প্রায় ৯ কোটি ২০ লক্ষ) নিজেদেরকে শেতাঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করেছে; এবং ৪৩.৮০% ভাগ বাদামী (মিশ্র) (প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ), ৬.৮৪% কৃষ্ণাঙ্গ (১ কোটি ৩০ লক্ষ), ০.৫৮% এশীয় (১১ লক্ষ), এবং ০.২৮% নিজেদের আমেরিন্ডিয়ান (৫ লক্ষ ৩৬ হাজার) হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে ০.০৭% (প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার) মানুষ নিজেদের বর্ণ পরিচয় দেয়নি। ২০০৭ সালে জাতীয় ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে ব্রাজিলে ৬৭টি ভিন্ন উপজাতীয় গোত্রের অবস্থান উল্লেখ করা হয়, যাঁদের সাথে কোনো রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ নেই। ২০০৪ সালে যোগাযোগহীন এসকল গোত্রের সংখ্যা ছিল ৪০। ব্রাজিলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অযোগাযোগকৃত মানুষের বাস করে বলে ধারণা করা হয়। ব্রাজিলের বেশিরভাগ মানুষ দেশটির আদিবাসী জনগণ, পর্তুগিজ উপনিবেশক, এবং আফ্রিকান দাসদের বংশদ্ভূত। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজদের আগমনের পর থেকে এই তিন জাতির মাঝে বৈবাহিক সম্পর্কের সৃষ্টি হতে থাকে, যা ব্রাজিলকে একটি বৈচিত্রময় জাতিসত্ত্বা উপহার দিয়েছে। ব্রাজিলের বাদামী বর্ণের জনগোষ্ঠীর (পর্তুগিজ ভাষায় এদেরকে ‘প্রাদু’ (prado) নামে সম্বোধন করা হয় বিভিন্ন ভাগের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাগ গুলোর মধ্যে আছে শেতাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাবোক্লু’ (Caboclo), শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বংশদ্ভূত ‘মুলাতু’ (Mulatto), এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত ‘কাফুজু’ (Cafuzo)। বেশিরভাগ কাবোক্লু জনগণ দেশটির উত্তর, উত্তর-পূর্ব, এবং মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে। গরিষ্ঠ সংখ্যাক মুলাতু জনগণ বাস করে বায়া ও থেকে পারাইবা পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘেঁষে চলে আসা পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল, উত্তর মারানাউঁ, দক্ষিণ মিনাস জেরাইস এবং পূর্ব রিউ দি জানেইরু অঞ্চলে। ১৯শ শতক থেকে অভিবাসীদের জন্য ব্রাজিলের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ১৮০৮ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ব্রাজিলে বিশ্বের ৬০টি দেশ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের আগমন ঘটে। এসকল অভিবাসীর বেশিরভাগই এসেছিল পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, জাপান, এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। ২০০৮ সালে ব্রাজিলে সার্বিক নিরক্ষরতার হার ছিল ১১.৪৮%, এবং তরুণদের ভেতর (বয়স ১৫–১৯) এই হার ছিল ১.৭৪%। এই হার সবচেয়ে বেশি ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (২০.৩০%), যেখানে বেশ বড় সংখ্যক গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস। গড় হিসাবে নিরক্ষতার হার গ্রামীণ জনগণের মাছে বেশি (২৪.১৮%) ও শহুরে জনগোষ্ঠীর মাঝে কম (৯.০৫%)। সূত্র: ডব্লিউ পি, বিডিটুডেজ/আরএ/১০ জানুয়ারি, ২০১৮

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates