Social Icons

Thursday, January 11, 2018

ব্রাজিলের পরিণতি থেকে রাশিয়া কি শিক্ষা নেবে ?

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সৃষ্ট অর্থ আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে সৃষ্ট অর্থের পার্থক্যটা বিশাল- দক্ষিণ আফ্রিকার সর্ববৃহত্ অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল সম্পর্কে এ কথা বলা। অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বিভিন্ন সূচক তরতরিয়ে বাড়ছিল যে দেশটিতে, সেখানে এখন চলছে প্রবল অর্থনৈতিক মন্থরতা। বিশ্বব্যাপী পরিচিত ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে পল ক্রেইগ নামক এক প্রখ্যাত অর্থনৈতিক রিপোর্টার সে জন্য অনেকটা দোষই চাপিয়ে দিয়েছেন অর্থনীতি ও সমরশক্তিতে সবচে’ প্রভাবশালী এবং মোড়লরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে। প্রমাণ স্বরূপ তিনি বিশ্ব অর্থনীতির বিষয়ে হালে দুনিয়া জুড়ে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত উইলিয়াম এ্যাংডালকে উদ্ধৃত করেছেন বারংবার। এই অর্থনীতি বিশ্লেষক সমপ্রতি খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যা, ওয়াশিংটন তার নিজের স্বার্থে কীভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্রাজিলীয় এলিটদের ব্যবহার করেছেন। যথাযথভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রোসেফকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে হেন চেষ্টা নেই যে তারা করেনি। ওয়াশিংটনের স্বার্থ সংরক্ষণের বদলে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার কাজটা সুচারুরূপে পালন করে যেতে থাকলেও রোসেফের শেষ রক্ষা হয়নি। অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে দেশবাসীকে ক্ষেপিয়ে দেওয়া হলো। ফলশ্রুতিতে মিলল, ব্রাজিলের রক্ষককে সরিয়ে দেওয়ার মৌনসম্মতি, যার মাধ্যমে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করল গণতন্ত্রের ব্যর্থতার আরেকটি নজির।

  বিশ্ব অর্থনীতির খোঁজখবর রাখা প্রত্যেকেরই উচিত এ্যাংডালের নিবন্ধ মনযোগ সহকারে পড়া। তাঁর রিপোর্টে উঠে এসেছে, রোসেফের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগই উত্থিত হয়েছে ব্রাজিলের নানাবিধ অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে, যা মূলত ইউএস ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো কর্তৃক সৃষ্ট এবং করা হয়েছিল ব্রাজিলীয় ঋণকে নামিয়ে আনতে ওয়াশিংটনের আক্রমণের অংশ হিসেবেই। এসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্রুজিরোকে আক্রমণ করা। ব্রাজিলের অর্থনৈতিক উন্মুক্ততা ব্রাজিলকে আক্রমণের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। অনেকেই এমন কথা বলতে পারেন যে, “অর্থনৈতিক উন্মুক্ততার” মূল্য দেওয়ার বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিন অবশ্যই ওয়াকিবহাল। পুতিন নিঃসন্দেহে সতর্ক ও চিন্তাশীল নেতা; কিন্তু অর্থনীতিবিদতো আর নন। নব্য উদার এলভিরা নাবিউলিনার ওপর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের। আবার ওয়াশিংটনও চায় এ ব্যক্তিই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্ব দিক। খটকাটা এখানেই। নাবিউলিনা কিন্তু আধুনিক আর্থিক তত্ত্বের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন। তাঁর “অর্থনৈতিক উন্মুক্ততার” প্রতিজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে ব্রাজিলের অর্থনীতির মতোই এমন অবস্থায় রেখেছে, যেটিকে অস্থিতিশীল করে তোলা ওয়াশিংটনের জন্য খুব একটা কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে না। কিন্তু নাবিউলিনার স্থির বিশ্বাস- আন্তঃসংশ্লিষ্ট ‘বৈশ্বিক বাজার শক্তির’ কারণেই রুবলের (রাশিয়ার মুদ্রা) মার খাওয়াটা অনিবার্য, এ নিয়ে ওয়াশিংটন কোনো আর্থিক খেলতে পারছে না।

 নাবিউলিনাকে নিয়ে রাশিয়ার সরকারপক্ষ সাফাই গাইলেও সমালোচকেরা কিন্তু ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁদের মতে, এই ভদ্রমহিলা বৈশিষ্ট্যহীন ও প্রচারপন্থি এক নব্য উদার। মূলত তিনি ওয়াশিংটনের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর ‘উপকারী নির্বোধের’ ভূমিকাটা তিনি নিজে হয়তো বুঝতে পারছেন না। রাশিয়ার অর্থনীতিকে উন্মুক্ত রাখাতে ওয়াশিংটনের সর্বসম্মত প্রশংসায় তাঁর আনন্দে আটখানা হওয়াটাও ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়। নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকলে ওয়াশিংটন সাধারণত কোনো ব্যক্তি বা দেশকে প্রশংসার সাগরে ভাসায় না। নব্য উদার হওয়ায় তিনি বুঝতে পারছেন না যে, শূন্য সুদেই রাশিয়ার বিভিন্ন উত্পাদনশীল প্রকল্পের অর্থায়ন ঘটাতে পারে কেন্দ্রীয়ব্যাংক। এর বদলে তিনি ভাবছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থনীতিতে এমনভাবে অর্থ ঢুকলে মুদ্রাম্ফীতিতে আরো উস্কে দেওয়া হবে; কিন্তু বিদেশি উত্স থেকে অর্থনীতিতে অর্থ ঢুকলে তা কখনোই হবে না।

 অর্থ অর্থই। তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিল না বিদেশি ঋণদাতারা দিল, সেটি বড় কোনো ব্যাপার নয়। উত্পাদনশীল খাতে যে কোনো অর্থ ব্যবহূত হলে, তা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক নয়। উত্স সম্পর্কে তখন প্রশ্ন না তোলাই যুক্তিযুক্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সৃষ্ট অর্থ আর বিদেশি ঋণদাতাদের সৃষ্ট অর্থের মধ্যে যে বিশাল ফারাক, তার মর্মার্থটা হলো, মার্কিন ডলার কিংবা ইউরোতে দেওয়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর ধার কিন্তু সুদসহ ওই বিদেশি মুদ্রাতেই ফেরত দিতে হবে। কিন্তু সরকারি অবকাঠামো প্রকল্পে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সৃষ্ট অর্থের বিনিয়োগ ঘটলে আদৌ পুনঃফেরত দিতে হবে না। সুদের হার সেখানে অনেক কম। প্রকৃতপক্ষে সুদের খরচ থাকে না বললেই চলে। রফতানির মাধ্যমে অর্জিত বিদেশি মুদ্রাও তাতে বেঁচে যায়। হালের রাশিয়া এ পথে নেই। বেছে নিয়েছে বিদেশি ঋণ বা বিনিয়োগের দিকে তাকিয়ে থাকার রাস্তাটা।

—ফরেন পলিসি অনুসরণে


No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates