আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কতিপয় মৌলিক প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৃষ্ট বিতর্কসমূহ নিয়েও আলোচনা চলছে। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান নীতি এবং এর প্রতি পাশ্চাত্যের চ্যালেঞ্জ, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভূমিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশেষত দক্ষিণ-চীন সাগরের উত্তেজনা, ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্টের অপসারণ-পরবর্তী লাতিন আমেরিকার শক্তিমান দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া এবং সর্বোপরি ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক স্ট্রাটেজিক সম্পর্কের কারণে সৃজিত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উত্তেজনা প্রভৃতি ইস্যুসমূহের কারণে অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মনে করছেন যে, পৃথিবী পুনরায় স্নায়ুযুদ্ধের কবলে পড়েছে। অনেকে ভাবছেন যে, উল্লিখিত ইস্যুসমূহ এতই তাত্পর্যপূর্ণ যে, যেকোনো মুহূর্তে সেগুলো আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক মহাযুদ্ধের সৃষ্টি করতে পারে। আবার অনেকে এমনও মন্তব্য করছেন যে, বিশ্বযুদ্ধ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ভিন্ন প্রকৃতি, পরিধি ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আধিপত্য বলয় গড়ার লক্ষ্যে সাবেক দু’পরাশক্তি সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে আফ্রো-এশীয় ও লাতিন আমেরিকীয় রাষ্ট্রগুলোকে মৈত্রীবন্ধনে যুক্ত করার যে নীতি গ্রহণ করে, তা স্নায়ুযুদ্ধ নামে খ্যাত। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলেও রাশিয়া পুরাতন পরাশক্তির শৌর্য-বীর্য নিয়ে তার মৈত্রী দেশগুলোসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যকে এমনভাবে চ্যালেঞ্জ করছে, যা স্নায়ুযুদ্ধের পুনরাবর্তনের দৃশ্যই প্রতিভাত করছে।
ইউক্রেন-সংলগ্ন ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার নীতি যুক্তরাষ্ট্র সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ করেছে। রাশিয়াকে ন্যাটো জোটের পর্যবেক্ষক-সদস্যপদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং রাশিয়ার প্রতি অর্থনৈতিক অবরোধ চালু করা হয়েছে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়াও বান্টিক সাগর ও কৃষ্ণসাগর এলাকায় সামরিক মহড়া জোরদার করে স্নায়ুযুদ্ধের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। প্রথমদিকে অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ ক্রিমিয়ার স্নায়ুযুদ্ধের পূর্বাভাস উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা তাদের অবস্থান বদলে ফেলে বিশ্ব যে স্নায়ুযুদ্ধের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে, এমন বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সরানোর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার পাশ্চাত্য মিত্রদেরকে নিয়ে বাশার-বিরোধীদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এর বিপরীতে পরবর্তীতে রাশিয়া বাশারকে রক্ষা করার আপসহীন পাল্টা ঘোষণা দিয়ে বাশার-বিরোধীদের উপর আক্রমণ শুরু করে। আঞ্চলিক মিত্র ইরান এবং অন্যরা রাশিয়ার আক্রমণে সমর্থন ও সহযোগিতা করে। অবস্থা বেগতিক দেখে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে মিলে সিরিয়া থেকে আইএস বাহিনীকে হঠাতে সহযোগিতার আলোচনা শুরু করে। কিন্তু এ পর্যন্ত দুই পরাশক্তির সহযোগিতার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। দুই পরাশক্তি জেনেভাতে কয়েক দফা মিলিত হয়ে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে এবং আইএসকে উত্খাত করতে উদ্যোগী হলেও কার্যত তা ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া সম্প্রতি হাংচৌ শহরে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে ওবামা এবং পুতিন যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ‘গঠনমূলক বৈঠকে’ মিলিত হন। কিন্তু দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও সেগেই লেভরভ বার বারই কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তারা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা অকার্যকর হয়ে যায়। গত ২৬ আগস্ট জেনেভায় এ দুই নেতা পুনরায় মিলিত হয়েও ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর এবং ৯ সেপ্টেম্বর জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনাও ব্যর্থ হয় এবং তারা পুনরায় কোনো চুক্তি সম্পাদনে অপারগ হন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় আলোচনা হলেও মৌলিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আবারো তারা ব্যর্থ হয়েছেন। সিরিয়ায় শেষ কথা হলো বাশারের বিরুদ্ধে সক্রিয় আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার আরব মিত্রদের সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। সিরিয়ায় সাবেক দুই পরাশক্তির পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেশটির শান্তি প্রতিষ্ঠায় মারাত্মক রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এ গৃহযুদ্ধে মস্কো সমর্থন দিচ্ছে প্রেসিডেন্ট বাশার ও তার বাহিনীকে, আর ওয়াশিংটন সমর্থন দিচ্ছে বাশার বিরোধী বিদ্রোহীদেরকে।
দক্ষিণ চীন সাগরে আঞ্চলিক বৃহত্ শক্তিগুলোর উত্তেজনাপূর্ণ নীতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার স্বার্থরক্ষার সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছে। এক্ষেত্রে তার ‘পাইভোট টু এশিয়া’ নীতি এখন অধিকতর গুরুত্বসহকারে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও কৌশলগত কারণে দক্ষিণ চীন সাগরের আধিপত্য বিস্তার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বৃহত্ শক্তিবর্গের একটি অগ্রাধিকারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ এলাকায় চীন একাধিক কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে চীনের বাণিজ্যিক ও সামরিক তত্পরতা বৃদ্ধি করছে। ভিয়েতনামসহ প্রতিবেশী কতিপয় দেশ এ অঞ্চলের জলসীমায় মালিকানা দাবি করছে। এ নিয়ে চীনের সঙ্গে ফিলিপাইন, ব্রুনেই, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়ারও বিরোধ এখন তুঙ্গে। দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্য দিয়ে ভারতের বাণিজ্যের প্রায় ৫০ শতাংশই সম্পন্ন হয়। ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষার খাতে এবং ভারতের স্বার্থে ভারত ও ভিয়েতনাম প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছে। ২০১৪ সালে ভিয়েতনামের নৌবাহিনীর টহলযান কিনতে ১০ কোটি ডলার সাহায্যের ঘোষণা দিয়ে অত্রাঞ্চলে ভারতের স্বার্থের গুরুত্ব তুলে ধরে। ১৯৬২ সালে ভারত ও চীনের সংক্ষিপ্ত সীমান্ত যুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত চীন ও ভারতের চলমান স্নায়ুযুদ্ধের সম্প্রসারণ হিসেবে ভারত-ভিয়েতনামের সম্পর্ককে বিবেচনা করা যায়। গত ৩ সেপ্টেম্বর (২০১৬) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভিয়েতনাম সফরকালে দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্যের ঘোষণা স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে মার্শাল পরিকল্পনা, ট্রুমান ডকট্রিন ও কমিকনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যেন।
গত ২৯ আগস্ট ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বেশ ঘটা করে সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ‘লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট’ বা লেমোয়া (LEMOA) চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত মহাসাগর এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের গুরুত্বপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করে। অনেক বিশ্লেষক এ চুক্তিকে চীন ও সমুদ্রের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ কার্টার ও মনোহর পারিকর পেন্টাগনে প্রত্যয়দীপ্ত ও ঔদ্ধত্য মিশ্রিত ভঙ্গিতে দুটি বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন লেমোয়া চুক্তি স্বাক্ষরের প্রেক্ষিত ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল, এ এক নব স্নায়ুযুদ্ধে বিশ্ব প্রবেশ করেছে। লেমোয়া স্বাক্ষরের পর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একে-অপরের ঘাঁটি, স্থল, নৌ ও আকাশ পথ ব্যবহার করতে পারবে। ভারতের একটি পত্রিকার মতে, ‘এখন থেকে ভারতের কোনো বিমান ঘাঁটিতে আমেরিকান এফ-২২ বিমান নামা অথবা ভারতীয় কোনো এয়ারক্রাফটের সান ডিয়েগো ক্যালিফোর্নিয়া বা জাপানের ওকিনাওয়ায় নামা উঠার ব্যাপারটিকে খুব স্বাভাবিক বলেই মনে হবে।’ এ চুক্তি স্বাক্ষরের মুহূর্তে আমেরিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনকেরি বাংলাদেশ ও ভারতে সফর করে অত্রাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের দাপট রক্ষার বিষয়টিকেই জানান দিয়ে গেছেন। এ চুক্তির বিষয়ে ‘ফোর্বস’ এর সমরবিষয়ক লেখক চার্লস তিফিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তির মাধ্যমে চীনকে মোকাবিলা করতে চায় এবং এশিয়াকে ঘেরাও করতে চায়। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কৃত্রিম দ্বীপ ও বিমান ঘাঁটি নির্মাণের প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া হলো এ লেমোয়া চুক্তি। এখন যুক্তরাষ্ট্র শীঘ্রই তার নৌবহরের ৬০ ভাগ জাহাজ ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় মোতায়েন করবে এবং অত্রাঞ্চলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বৃহত্ শক্তির আধিপত্যকে মোকাবিলা করতে।’ এখন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল হলো সাগরসমূহের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা এবং এভাবেই এশিয়াকে ঘিরে ফেলা। সম্ভবত ১৯ শতকের মার্কিন নৌ-কৌশলবিদ আলফ্রেড থাযার মাহান তাঁর ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘দ্য ইন্টারেস্ট অব অ্যামেরিকা ইন সি পাওয়ার’ এর মাধ্যমে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা আজ সত্যে পরিণত হচ্ছে। তাঁর মতে যে দেশ সমুদ্র করায়ত্ত করতে পারবে, সে বিশ্ব শাসন করতে পারবে। ফলে বড় শক্তি হওয়ার ইচ্ছে থাকলে কোনো দেশকে আশেপাশের জলসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বর্তমান বিশ্বের প্রথম নৌ-শক্তিসম্পন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর দ্বিতীয় নৌ-শক্তিসম্পন্ন দেশ চীনকে চ্যালেঞ্জ করে বর্তমান যুগের স্নায়ুযুদ্ধের নতুন প্রকৃতি বিকশিত করছে। রাশিয়া, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের লেমোয়া চুক্তির বিপক্ষে যাবে বলে ভারতের অনেক অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদ থাকলেও মোদীর সরকার বৈশ্বিক আধিপত্য বিস্তারের বৃহত্তর লক্ষ্যে চীন, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাষ্ট্রগুলোর বিপক্ষে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। স্পষ্টত যুক্তরাষ্ট্র ভারত, জাপান অষ্ট্রেলিয়া তাদের মিত্রদেশসহ রাশিয়া, চীন, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবাদী রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ হিসেবে স্নায়ুযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
অতিসম্প্রতি তুরস্কের সরকার উত্খাতে ব্যর্থ সাময়িক (৭) অভ্যুত্থান এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট-এর অপসারণের পর এ দুটি ঘটনার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য-নির্মিত সম্পর্ক ভেঙে গেছে এবং তুরস্ক নতুনভাবে রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান মিলে এখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষিত রচনা করছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফের অপসারণকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডোর ও বলিভিয়ার রাষ্ট্রদূতদেরকে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাতে বলা হয়েছে। লাতিন নয়, এ অভ্যুত্থান লাতিন আমেরিকার বিরুদ্ধে আমেরিকার বামপন্থি রাষ্ট্রগুলো মতে এ অভ্যুত্থানের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এটা দিলমার বিরুদ্ধে, ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে লাতিন আমেরিকায় গণতন্ত্র, শান্তি, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন এবং সংহতির বিরুদ্ধে। স্পষ্টত লাতিন আমেরিকায় এখন স্নায়ুযুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করছে।
উপরি উক্ত ঘটনাবলির বিশ্লেষণে অনেকে বলছেন, বিশ্ব এখন স্নায়ুযুদ্ধের যুগ অতিক্রম করে একটি প্রত্যক্ষযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, ইতোমধ্যেই বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তবে তার প্রকৃতি একটু ভিন্ন ধরনের। লাতিন আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাসহ সর্বত্র এখন স্পষ্টত দুটি ভাগে বিশ্বশক্তিসমূহ বিভক্ত হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত আধিপত্য রক্ষায় লড়াই চলছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যার প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য অনেকটা স্নায়ুযুদ্ধের সঙ্গে মিলে যায়। তবে অত্রাঞ্চলের আধিপত্যের লড়াইকে ভুলভাবে পরিচালনা করলে যেকোনো মুহূর্তে তা বিপর্যয়কর মহাযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করবে। তাই বলা যায় ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বিশ্বযুদ্ধ।
এখন জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, ইইউসহ আঞ্চলিক ও বিশ্বশক্তিধর রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর গুরুদায়িত্ব কীভাবে যুদ্ধমান অবস্থান নিরসন করা যায়। কীভাবে প্রতিটি অঞ্চলের শত্রুতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সীমিত পর্যায়ে রাখা যায় এবং কীভাবে সকল দেশের স্বার্থের যৌক্তিক বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বিশ্বকে তৃতীয় মহাযুদ্ধের সর্বাত্মক ধ্বংস থেকে রক্ষা করা যায়। এই একটি লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে এখন আন্তর্জাতিক সমাজকে।
লেখক : প্রফেসর, আন্তর্জাতিক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments:
Post a Comment