Social Icons

Sunday, July 23, 2017

বিনিয়োগ ও রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা সেনেগাল

আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্তের একটি দেশ সেনেগাল। আটলান্টিকের পূর্ব কিনারা ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে এই সম্ভাবনাময় দেশটি। আয়তন এক লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার সাতশত বাইশ বর্গ কিলোমিটার। সেনেগালের অফিশিয়াল ভাষা ফ্রেন্স হলেও স্থানীয় অনেক গুলো ভাষা আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রচলিত ভাষা হচ্ছে ওলফ। সেনেগালীদের মুদ্রার নাম কমুটেট ফাইনেনসিয়ার আফ্রিকানি ফ্রান্সি, সংক্ষেপে যা জফ হিসেবে প্রচলিত।  বাংলাদেশের ১.৩ গুন আয়তনের দেশটিতে জনসংখ্যা এক কোটি ত্রিশ লাখের মত। এদের শতকরা ৯৪ ভাগ মুসলমান, ৫ ভাগ খ্রিষ্টান এবং অবশিষ্ট এক ভাগ অন্যান্য ধর্মের। সেনেগালের মুসলিমরা শুধু নামে মুসলমান এমন নয় বরং তারা যথেষ্ট ধার্মিক। ধর্ম চর্চা ও জ্ঞান আহরনের উদ্দিপনা তাদের বৈশিষ্ট। সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করা এখানকার মানুষের অন্যতম প্রধান পেশা। নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
দেশটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন হয় আম। চাষ হয় প্রচুর ক্যাসোনাট। কৃষির জন্য প্রচুর জমি পড়ে থাকলেও কৃষিকাজের জন্য তেমন আগ্রহী নয় তারা। বিভিন্ন দিক দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সেনেগালের রয়েছে যথেষ্ট মিল। এর মধ্যে ধর্ম, খাদ্যাভাসে মিল হলো অন্যতম। তাছাড়া সেনেগালের আবহাওয়া অনেকটা সহনীয়। আফ্রিকা নিয়ে চিন্তা করলে অনেকেরই চোখে ভেসে ওঠে বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ পিছিয়ে পড়া জনপদের চিত্র। যদিও বিষয়টি একেবারে মিথ্যে নয়। তবে আফ্রিকা জুড়ে থাকা ঘন বন-জঙ্গল থেকে অক্সিজেনের সরবরাহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য বেঁচে থাকার ফুসফুস জোগায়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নিয়ে মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকা সেনেগালের রয়েছে কৃষি, শিল্প, ট্যুরিজমসহ বিভিন্ন ধরণের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। যা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের জন্য অনন্ত সম্ভাবনার এক গন্তব্য। গভীর কালো দীঘির কথা তো আমরা সবাই শুনেছি, দেখেছিও। শুনেছি টলটলে নীল জলের কথা। কিন্তু গোলাপি রঙের পানি, গোলাপি পানির জলাশয়ের কথা আমরা ক’জন শুনেছি? আমরা শুনি বা নাই শুনি, পৃথিবীতে কিন্তু সত্যিই আছে গোলাপি জলের জলাশয়। লেক রেতবা আফ্রিকার দেশ সেনেগালের একটি লেক। লেকের এক পাশে পাহাড়। আরেক পাশে আটলান্টিক মহাগর। মাঝখানে সরু একটি করিডোর। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় লেকটির পানির রং থাকে গোলাপি। মাথার উপরে নীল আকাশ, নিচে গোলাপি হ্রদ- সব মিলিয়ে এক অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত দৃশ্য। এ দৃশ্য টেনে আনে দেশ বিদেশের পর্যটক। কেপ ভার্ত উপদ্বীপে প্রকৃতির অপার সৃষ্টি লেক রেতবা।
হ্রদের তীরে লবণের পাহাড়, লেকের গোলাপি জলরাশি এবং অন্য পাড়ের সোনালি বালুকাবেলা তৈরি করে এ অপার্থিব সৌন্দর্য। গোলাপি রং ছাড়াও লেকটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর লবণাক্ততা। লেকটির কোথাও কোথাও লবণাক্ততার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যায়। সমুদ্রের একেবারে কাছে হওয়ায় করিডোরের মাটি চুইয়ে লবণ পানি হ্রদে আসে। অতিরিক্ত লবণের কারণে এ হ্রদে তেমন কোনো জলজ প্রাণী নেই। চার/পাঁচ প্রজাতির মাছ থাকলেও সেগুলো আকারে স্বাদু পানির লেকের চেয়ে অনেক ছোটো। তবে এসব মাছের রয়েছে শরীর থেকে মাত্রাতিরিক্ত লবণ বের করে দেওয়ার ক্ষমতা।মাছ বা কোনো জলজ প্রাণী নেই বলে লেক রেতবার কোনো অর্থনৈতিক গুরুত্ব নেই, এমনটা নয়। লেকটি সেনেগালের লবণের চাহিদা পূরণ করে থাকে। সেনেগাল থেকে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে তা রপ্তানিও হয়। মূলত স্থানীয় অধিবাসীরা লেকের নিচ থেকে হাতে এবং বেলচা দিয়ে লবণ সংগ্রহ করে। তবে হ্রদটিকে ঘিরে কমতি ছিলো না রহস্য-রোমাঞ্চ-বিস্ময়ের। লবণ আহরণের জন্য বিখ্যাত লেক রেতবাকে ভাবা হতো অভিশপ্ত। তবে এখন স্থানীয়দের কাছে সেটা আশীর্বাদ। মাছ সংরক্ষণে লবণ আহরণের উৎকৃষ্ট জায়গা এটি।
হ্রদের পানি গোলাপি হলেও সেখানকার লবণ কিন্তু ঝকঝকে সাদা। আফ্রিকার দেশ সেনেগালের মানুষ ব্যবহারেও অনেক আন্তরিক। এ বিষয়ে ভয়েস বাংলার কথা হয় সেনেগাল প্রবাসী মোঃ নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি সেনেগালে ঔষধ শিল্পের চিফ অব দ্যা প্যারেন্টাস এসএ হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুশাসনের কারণে সব সময় ভালো পরিবেশ বিরাজ করে সেনেগালে। এখানকার প্রায় সব মানুষই আচার আচরণে অনেক শান্ত শিষ্ট। সবাই সবার সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করে থাকে। তবে এখানে এখনও আনেক মানুষ কবিরাজী চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল। এটা তাদের ট্রাডিশনাল ব্যবস্থা। এর পেছনে কারণও আছে আর তা হলো সেনেগালে চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি।
সেনেগালের সরকারী পর্যায় থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। গ্রাম থেকে শহর প্রত্যেক বাড়িতে সরকারী ভাবে পানি বিতরণের ব্যবস্থা আছে। তবে অর্থের বিনিময়ে পানি কিনে নিতে হয়।’ সেনেগালের শহরগুলো অনেক সুন্দর। শহরগুলো বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। যেহেতু আধুনিক অট্টালিকা এখনও সেনেগাল সেভাবে গড়ে উঠেনি। তাই রাতের সেনেগাল অপরুপ জোসনার খেলায় মেতে উঠে। সেনেগালের রাস্তাঘাট অনেক ভালো। এবং অনেক প্রসারিত। আমাদের দেশে টোল প্লাজায় গাড়ি থামিয়ে টোল দিতে হয় সেনেগালে তেমন নয়। আফ্রিকার মানুষের জীবন যাত্রায় মধ্যবিত্তের কোন অস্তিত্ব নেই। তেমনি সেনেগালও ব্যতিক্রম নয়। সেনেগালে দুই শ্রেনির মানুষ দেখা যায়। তারা হয় উচ্চবিত্ত আর না হয় নিম্নবিত্ত। আর এখানে একেক জনের তিন চারটা করে স্ত্রীও আছে । ছেলে মেয়েও তাদের অনেক
তাদের জীবনে যা আয় তাই ব্যয়, এভাবেই জীবন কেটে যায়। তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি দেখা যায় না। এই সেনেগাল অপার সম্ভাবনা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রপ্তানি বাণিজ্যসহ বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানীর সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে সেনেগাল।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates