মোহাম্মদ আনিসুর রহমান --------কাজ না পাওয়ায় সৌদি আরবে প্রায় ৫ মাস ধরেই বিভিন্ন স্থানে অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছেন ১৮ জন বাংলাদেশী শ্রমিক। যাদের বেশির ভাগই পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে দিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রিয়াদের কামরান খালিজ নামে একটি আবাসিক হোটেলে আটকে থাকা এসব শ্রমিকেরা মোবাইলে এক জাতীয় দৈনিককে জানান, তারা দিনের পর দিন এ দেশে এসে বেকার বসে আছেন। এখন পর্যন্ত কোথায় তাদের কাজ দেয়া হবে বা আদৌ তাদের নামে আকামা বের হবে কি না সে ব্যাপারে দূতাবাস বা রিক্রুটিং এজেন্সি তুর্কি অ্যাসোসিয়েটের মালিক সাহাবুদ্দিন কিছুই বলছেন না। তিনি শুধু খাবারের টাকা অথবা বাজার পাঠিয়ে বলছেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যেই তোমাদের সবার আকামা বের হয়ে যাবে’। এ কথা তিনি গত ৫ মাস ধরেই বলছেন বলে অভিযোগ তাদের।
শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে এজেন্সি মালিক সাহাবুদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। শ্রমিকেরা জানান, তিনিও সৌদিতে আছেন।
ওই হোটেলে অবস্থানরত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থানার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, এজেন্সির মালিক আমাদের এনে ৫ মাস ধরে ফেলে রেখেছেন। রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সাহাবুদ্দিনের কথায় আমরা আর আশ্বস্ত হতে পারছি না।
তিনি বলেন, ঘর থেকেই তো আমরা কেউ বের হতে পারছি না। যদি আমাদের আকামা না লাগে তাহলে দ্রুত আমাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কারণ আমরা যে টাকা খরচ করে এসেছি তার বেশির ভাগ টাকাই সুদে নিয়েছি। কেউ কেউ আবার প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়েছে।
এখন ব্যাংকের লোকজন বাড়িতে গিয়ে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। স্ত্রী সন্তানেরা না খেয়ে আছে। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এক মুহূর্ত আর এ দেশে বেকার থাকব না। যদি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও দূতাবাস আমাদের কাজ দিতে ব্যর্থই হয় তাহলে দেশে ফেরত পাঠাক। এ দেশের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। আমাদের মতোই অনেক শ্রমিক বেকার। দেশে চলে যেতে পারলে অন্তত রিকশা চালিয়ে হলেও সংসার চালাতে পারব। আর কিছু না পারি অন্তত ব্যাংকের লোনটা তো পরিশোধ করতে পারব। তবু তো বেকার থাকতে হবে না।
বর্তমানে ওই হোটেলে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন সাইদুল, জুয়েল, রফিক, শামীম, জিয়ারুল, মোজাম্মেল, জুনায়েদ, জাহাঙ্গীর, সেলিম, মহসীন, আরিফ, সানাউল্লাহ, রিপন ও দিদারুল হক। বাকি তিনজনকে এজেন্সির মালিক ভুয়া আকামা দিয়ে কাজ দিয়েছেন। তাদেরকেও ভুয়া আকামা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা কেউ রাজি হননি বলে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের অভিযোগ।
শ্রমিকেরা জানান, ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সাহাবুদ্দিন ও তাদের মনোনীত মধ্যস্বত্বভোগী হুমায়ুন কবিরের মাধ্যমে তারা চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব এসেছেন। আসার সময় তাদের বলা হয়েছিল, প্রত্যেকের বেতন হবে এক হাজার রিয়াল। এরমধ্যে ২০০ রিয়াল খাবার খরচ। কাজ দেয়া হবে ক্লিনারের। কর্মঘণ্টা হবে ৮ ঘণ্টা। কিন্তু ৫ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনো আমাদের কোনো কাজ দেয়া দূরের কথা, রাস্তায় বের হওয়ার আকামাই দিচ্ছে না।
No comments:
Post a Comment