Social Icons

Thursday, July 20, 2017

এয়ারবাসও যাচ্ছে ধোলাইখালে

বিমানের নিজস্ব দুটি এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলাচলের অযোগ্য দেখিয়ে এয়ারক্রাফট দুটি কেটে তিন টুকরো করে বিক্রি করা হবে। আন্তর্জাতিক দরপত্র দিয়েও ক্রেতা না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

ল্যান্ডিং গিয়ার, ইঞ্জিন এবং বডি ও সিটসহ অন্যান্য অংশ ভাগ করা হবে। প্রতিটি অংশ বিক্রির জন্য আলাদা দরপত্র ডাকা হবে।

খবর পেয়ে স্থানীয় আগ্রহী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা উড়োজাহাজ দুটি কেটে টুকরো করে পুরান ঢাকার ধোলাইখালে নিতে চান। বিমান তাতে রাজিও হয়েছে।

এর আগে ডিসি-১০ এয়ারক্রাফট এভাবে কেটে পানির দামে বিক্রি করা হয়েছিল। ডিসি-১০’র স্থানও হয়েছিল ধোলাইখালের ভাঙ্গারির দোকানে। এয়ারবাস দুটির অবস্থাও খুবই খারাপ। কোনোভাবেই উড়োজাহাজ দুটি অবিকৃত রেখে বিক্রি করা সম্ভব নয় বলে জানা গেছে।

বিমানের পরিচালক প্রশাসন মমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিমানের ডিসি-১০ যেভাবে বিক্রি করা হয়েছিল, এ দুটি এয়ারবাসও একই কায়দায় বিমান থেকে ফেইজ আউট করে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে প্রথমেই বিক্রি করা হবে এয়ারবাস দুটির খোলনলচে ও স্পেয়ার পার্টস। দ্বিতীয় ধাপে বিক্রি করা হবে ইঞ্জিন। সর্বশেষ ল্যান্ডিং গিয়ারের জন্য ডাকা হবে আলাদা দরপত্র।

তিনি বলেন, উড়োজাহাজ দুটির উড্ডয়ন মেয়াদ গত বছর আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শেষ হয়। এরপর এগুলো উড্ডয়ন উপযোগী রাখতে হলে ডি-চেক (বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ) করাতে হতো। এতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হতো। পুরনো ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এয়ারক্রাফট দুটির পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। প্রতি ফ্লাইটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হতো। এসব কারণে ডি-চেকের আগেই ব্যয়বহুল এ উড়োজাহাজ দুটি বহর থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের প্ল্যানিং বিভাগের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, লিজের মেয়াদ শেষে এয়ারবাস দুটি কেনার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তবে বিমানের সিন্ডিকেট ইচ্ছাকৃতভাবে এ ভুল করেছিল। এয়ারক্রাফট দুটি কেনার সময় বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর ভাগ গেছে অনেক উপরে। যে কারণে এ বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি।

 তিনি বলেন, ওই সময় এয়ারবাস দুটি না কিনলে লিজদাতা কোম্পানি বিমানের কাছে ফেলে রেখে যেত। কারণ ওই দুই এয়ারবাস বিশ্বের অন্য কোনো দেশে বিক্রি করার মতো অবস্থা ছিল না।

এ কারণে তারা নানা কৌশলে বিমানকে কিনে নিতে বাধ্য করে। ফলে বিমানকে বিশাল অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হয়। কেনার সময় এক দফা এবং বিক্রির সময় আরও এক দফা গচ্চা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

জানা গেছে, দুটি এয়ারবাসের এয়ারফ্রেম ও ল্যান্ডিং গিয়ার বিক্রির জন্য ৭ জুলাই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিমান। দরপত্রে এয়ারফ্রেম ও ল্যান্ডিং গিয়ার ‘যেখানে, যে অবস্থায় আছে’ ভিত্তিতে বিক্রির কথা বলা হয়।

 বিমানের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক সম্ভার) মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই দরপত্রে বলা হয়, এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ উড়োজাহাজ দুটির (নিবন্ধন নং যথাক্রমে এস২-এডিএফ//এমএসএস-৭০০ এবং এস২-এডিকে//এমএসএন-৫৯৪) দুটি এয়ারফ্রেম ও দুই লটে মোট ছয়টি ল্যান্ডিং গিয়ার বিক্রি করা হবে।

এর মধ্যে তিনটি ল্যান্ডিং গিয়ার সচল রয়েছে। উড়োজাহাজ দুটি ক্রয়ে আগ্রহীদের ১০ আগস্টের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে।

এর আগে পুরো উড়োজাহাজ বিক্রির জন্যও দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কেউ সাড়া দেয়নি। এ কারণেই এখন এয়ারবাস দুটি কেটে একেকটি অংশ আলাদাভাবে বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।

বিমানের সাবেক পরিচালক ড. সফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বহরে এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ উড়োজাহাজ যুক্ত হয় ১৯৯০ সালে। সে সময় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পূর্ণ নতুন অবস্থায় দুটি এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ কেনা হয়। কেনার আগে এয়ারক্রাফটটি লিজ নেয়া হয়েছিল। লিজের মেয়াদ শেষে এয়ারক্রাফটটি কেনা হয়। কেনার পর একটি উড়োজাহাজ দুবাইয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে অচল হয়ে যায়।

পরে আরও একটি এয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজ পাঁচ বছরের চুক্তিতে লিজ নেয়া হয়। পরে যা কিনে নেয় বিমান। এ উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন অনুপযোগী হয়ে প্রায় দুই মাস সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পড়েছিল।

এছাড়া ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অপর একটি এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ উড়োজাহাজের বডিতে ফাটল ধরে। ওই সময় উড়োজাহাজটিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া বিমানের প্রকৌশল বিভাগের অদক্ষতা, সোনা চোরাচালানিদের বিমান কাটাছেঁড়া, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চেক লিস্ট অনুযায়ী যথাযথ মেরামত না করার কারণে এয়ারবাস দুটি বিমানের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে বহর থেকে এয়ারবাস দুটি ফেজ আউট (বহর থেকে বাদ) করা হয়।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশিষ রায় চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, লিজে নেয়া উড়োজাহাজ দুটি পরবর্তী সময়ে বিমানের কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। যে দামে বিমান ওই এয়ারবাস দুটি কিনেছিল, একই দামে আরও ভালো বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ কেনা যেত।

তিনি বলেন, লিজদাতা কোম্পানি বিমানকে লক্কড়-ঝক্কড় এয়ারবাস দুটি গছিয়ে দিয়ে বিশাল টাকা আয় করেছে। তার মতে, এসব এয়ারক্রাফট যাচাই-বাছায়ের জন্য বিমানের শীর্ষ ম্যানেজমেন্টে বিশেষজ্ঞ ও স্কিল (দক্ষ) জনবল নেই। বিমান ইচ্ছা করেই দক্ষ জনবল নিচ্ছে না।

লিজ শেষে যদি ওই সময় এয়ারবাস দুটি ফেরত দেয়া হতো, তাহলে আজকের এই করুণ পরিণতি হতো না। শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও পর্যদ সদস্যদের এ দেউলিয়াত্ব বিমানের জন্য সত্যি দুর্ভাগ্য।

এর আগে ডিসি-১০ বিক্রি হয়েছিল সোয়া দুই কোটি টাকায়। প্রথমে বিক্রি হয় ইঞ্জিন, যার প্রতিটিতে ৭৫ হাজার ডলার দর মিলেছে। একটি ডিসি-১০ বিমানে তিনটি ইঞ্জিন থাকে।

সে হিসাবে শুধু একটি ডিসি-১০ এর ইঞ্জিন বিক্রি করা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাকি অংশ যেমন বডি, সিট ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সব একসঙ্গে ৪২ লাখ টাকা বিক্রি হয়। অর্থাৎ একটি ডিসি-১০ নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২ কোটি ২২ লাখ টাকা।

বিমানকর্মীরা বলেছেন, ৩০০ কোটি টাকার একটি ডিসি-১০ বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র সোয়া ২ কোটি টাকায়। একই করুণ পরিণতি ঘটার আশঙ্কা আছে এয়ারবাস দুটির ভাগ্যে।

এত সস্তায় বিমান কিনে কী কাজে লাগানো যায়? এ সম্পর্কে ড. সাফিকুর রহমান বলেন, এর আগে রাফি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ডিসি-১০ নিলামে কিনে নেয়। তারা নিজেদের কারখানাতেই উড়োজাহাজের বডি ও অন্যান্য অংশ যেমন অ্যালুমনিয়াম ও কপার গলিয়ে কেজি দরে বিক্রি করেছে। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল না।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates