প্রথমে মুসলমানদের পরিচয় জানা দরকার, মুসলমান কারা? মুসলমান তারাই, যারা ঈমানদার। মুসলমান তারাই, যারা এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী, যারা তাঁর বিধি-বিধান মেনে চলে, তাঁর পাঠানো নবীকে গ্রহণ করে আদর্শ হিসেবে। পাশাপাশি নবীর ওপর অবতীর্ণ কিতাবকে গ্রহণ করে জীবনবিধান হিসেবে। সে হিসেবে শুধু উম্মতে মুহাম্মদিই মুসলমান নয়। মুসলমান শব্দের এ ব্যাখ্যা কোরআন থেকে নেওয়া হয়েছে। খোদ নবী ইবরাহিম (আ.) তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করেছেন যেন তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের মুসলিম বানানো হয়। (দেখুন : সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৮)
আরো একটি পরিভাষা আমাদের কাছে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। সেটি হলো, বনি ইসরাইল মানে ইসরাইলের সন্তান। ইসরাইল হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর নাম। হিব্রু ভাষায় এর অর্থ আল্লাহর বান্দা। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পরবর্তী বংশধররা বনি ইসরাইল নামে প্রসিদ্ধ।
হজরত ইয়াকুব (আ.) যখন জীবনসায়াহ্নে, তখন এক প্রশ্নের জবাবে তাঁর সন্তানরা নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। (দেখুন : সুরা বাকারা, আয়াত : ১৩৩)
এটাও আমাদের কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার যে ইহুদি আর বনি ইসরাইল এক নয়। বরং ইহুদিরা বনি ইসরাইলের একটা অংশ। এরা হজরত মুসা (আ.)-এর উম্মত।
ইতিহাস সাক্ষী, কোরআনের আগের সব আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে নির্দিষ্ট যুগ, অঞ্চল ও জাতির জন্য। ফলে সেসব উম্মত পরিচিত হয়েছে নিজ জাতীয়তা দিয়ে, মুসলিম হিসেবে নয়। যেমন—হজরত ঈসা (আ.) বলেছেন, ‘আমাকে শুধু ইসরাইল বংশের হারান মেষদের কাছেই পাঠানো হয়েছে। ’ (মথি, ১৫:২৫)
তিনি তাঁর ১২ জন শিষ্যকে ধর্ম প্রচারের কাজে পাঠানোর সময় আদেশ দিয়েছিলেন—‘তোমরা অ-ইহুদিদের কাছে বা শমরীয়দের কোনো গ্রামে যেয়ো না, বরং ইসরাইল জাতির হারান মেষদের কাছে যেয়ো। ’ (মথি, ১০:৬)
কিন্তু মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনকে নির্দিষ্ট জাতি, অঞ্চল বা কালের জন্য পাঠাননি। কোরআন সর্বজনীন ও সর্বকালীন। কোরআনের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে মহান আল্লাহ বিশ্ববাসীর জন্য রাসুল ও রহমত বলেছেন (দেখুন : সুরা আরাফ-১৫৮, সুরা আম্বিয়া-১০৭)
আরো একটি বিষয় জেনে রাখা জরুরি। বিষয়টি হলো, তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাসই হচ্ছে ইসলাম। এর অনুসারী সবাই মুসলমান, যদিও তারা সবাই মুসলমান হিসেবে পরিচিতি পাননি, যৌক্তিক কারণে বিভিন্ন নামে তারা পরিচিত হয়েছেন। এ জন্য কোনো যুগের নবীকে অস্বীকার বা অমান্য করে কেউ মুসলমান থাকতে পারে না। কাজেই প্রত্যেক নবী ও তাঁর অনুসারীরা মুসলমান। নতুন নবী আসার পর তাঁকে অমান্য করলে অমান্যকারীকে মুসলমান বলা যাবে না। যেমন—হজরত ঈসা (আ.)-এর আগমনের পর ইহুদিরা আর বৈধ ধার্মিক থাকেনি, গোষ্ঠীগত নামটি থেকে গেলেও শরিয়ত অমান্যকারী বেঈমান হিসেবে তারা আল্লাহর কাছে পরিগণিত। একইভাবে মহানবী (সা.)-এর আগমনের পর পৃথিবীর আর কোনো ধর্মই বৈধ থাকেনি, কারণ তিনি গোটা জাহানের নবী। তাঁর উম্মতরাই বর্তমান মুসলমান।
এবার আসুন এ প্রসঙ্গে—বায়তুল মোকাদ্দাস কার তৈরি এবং কেয়ামত পর্যন্ত তার বৈধ মালিকানা কাদের?
এর সহজ জবাব হলো, বায়তুল মোকাদ্দাস নবী সুলাইমান (আ.) বানিয়েছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর বৈধ মালিকানা থাকবে বৈধ ধার্মিকদের হাতে। কেয়ামত পর্যন্ত এর বৈধ মালিকানা উম্মতে মুহাম্মদির। কেননা শেষ নবীর উম্মতরাই সর্বশেষ উম্মত। মুসলমানরা দখলদার নয়, বরং ফিলিস্তিন ও বায়তুল মোকাদ্দাস তাদের ধর্মীয় উত্তরাধিকার।
আজকে যদি শেষ নবী হতেন মুসা (আ.), তাহলে অবশ্যই এর বৈধ মালিকানা ইহুদিদের থাকত। কেননা শেষ নবীর উম্মতরাই শুধু নবী ইবরাহিম (আ.)-এর রাখা নাম ‘মুসলমান’ পরিচয়ে বেঁচে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। (দেখুন : সুরা হজ-৭৮)
No comments:
Post a Comment