কুয়েতে ২০০৮ সালে শ্রমিক ধর্মঘটসহ বাংলাদেশি শ্রমিকদের উচ্চ অপরাধের হারের কারণে শ্রমিক ভিসা স্থগিত হয়ে যায়। গেল বছরের মার্চ মাসে কুয়েত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুলাইমান আল-ফাহাদ বাংলাদেশ সফর করেন। এরপর একই বছরের জুনে কুয়েতে শ্রমবাজার আবার খুলেছে। কিন্তু চিহ্নিত দালাল চক্রের কারসাজির কারণে কুয়েতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার আবার নষ্ট হতে চলেছে। এ জন্য দায়ী একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট ভিসা বাণিজ্য করে চলেছে। এসব নানা কারণে কুয়েতের শ্রমবাজার নিয়ে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্রমবাজার চালু হওয়ার পর গত দুই বছরে ৫০ হাজার বাংলাদেশি নতুন ভিসা নিয়ে কুয়েতে গেছেন। প্রথমদিকে দালালরা কুয়েতে পাঠানোর জন্য জনপ্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিতেন। কিন্তু বর্তমানে নিচ্ছেন সাত লাখ টাকা। এর কম হলে কাউকে পাঠাচ্ছেন না। নাটোরের মহিদুল ইসলাম কুয়েত থেকে ভয়েস বাংলাকে বলেন, কুয়েত আসতে আমার প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখানে এসে আমাকে যে কাজ দেয়া হয়েছে তাতে খেয়ে পড়ে খুব বেশি কিছু আমি করতে পারব না। প্রকৃতপক্ষে কুয়েতে শ্রমিক পাঠানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। ফলে কুয়েতে যেতে ভিসার জন্য আকাশচুম্বী মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।এদিকে ভিসার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করে থাকেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে যেমন শ্রমবাজার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তেমনি বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগও বাড়ছে।
কাতারে বাংলাদেশি জনশক্তির নিয়ে কাজ করছে একজন ব্যক্তি জানান, নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে নেওয়া হবে। প্রথম শ্রেণির এই নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে সরকারি কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য, যেখানে সরকারের ২৫ শতাংশের কম শেয়ার নেই, হাসপাতাল, ক্লিনিক, মেডিকেল সেন্টার, ল্যাবরেটরিজ, ফার্মেসী এবং হোম চিকিৎসা কেয়ার অন্তর্ভুক্ত। এই বিভাগে এছাড়াও ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, বিনিয়োগ কোম্পানি, হোটেল, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বেসরকারী বিদ্যালয়, ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট “শিক্ষণ কর্মীদের” ও নার্সারি রয়েছে।
প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি হল উৎপাদন ক্ষেত্রের সুবিধা প্রদানকারী, কুটির শিল্প, স্থানীয় এবং বিমান সংস্থাগুলি, বায়ু ও সমুদ্র ভ্রমণ সংস্থাগুলি, এর পাশাপাশি প্রকৌশল, আইনি ও আর্থিক পরামর্শদাতা অফিস। তালিকায় স্থানীয় এবং বিদেশী মিডিয়া আউটফিট, কৃষি, শিকার, পশুসম্পদ, প্রিন্ট মিডিয়া, স্যাটেলাইট চ্যানেল, রেডিও স্টেশন, ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট ম্যাগাজিন, অনুমোদিত গাড়ী বিক্রেতা এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ কুয়েত দ্বারা অনুমোদিত মুদ্রা বিনিময় কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত। নিয়োগকর্তাদের দ্বিতীয় বিভাগে মোট কাজের পরিমাণের মাঝে ২৫ শতাংশ কাজ কর্মীদের জন্য পারমিট পেতে পারে। দ্বিতীয় বিভাগের ক্ষেত্রে কুয়েত বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, পাবলিক টেন্ডারের কেন্দ্রীয় সিস্টেম দ্বারা এক, দুই এবং তিন হিসাবে শ্রেণীভুক্ত কোম্পানীর পাশাপাশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির মালিক এবং সীমিত অংশীদারী সংস্থাগুলি অন্তর্ভুক্ত।
শেয়ারহোল্ডার সংস্থাগুলি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাথে নিবন্ধিত অনুমোদিত ব্রড সংস্থা, কুয়েত ফায়ার সার্ভিস ডিরেক্টরেট দ্বারা অনুমোদিত অগ্নিনির্বাপক সংস্থা, সিভিল এভিয়েশন জেনারেল ডিপার্টমেন্ট, স্বাস্থ্য ক্লাব এবং ইনস্টিটিউট, সিনেমার, ১০০০ বর্গ মিটারের বেশি যায়গা নিয়ে গঠিত মার্কেট প্লেস, শিল্পের জন্য জনসাধারণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিল্প, এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিকারী সংস্থাগুলিও দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। শ্রমিকদের নিয়োগ করার জন্য এই উপরে উল্লিখিত দুটি শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা ক্যাটাগরিতে প্রয়োজনীয় মোট কর্মীদের মাঝে সর্বাধিক ২৫% কর্মী এই কাজের পারমিট পেতে পারেন। যা নিয়োগকারীদের চাহিদা বিবেচনা করে সংখ্যায় চার থেকে অধিক নয়। ঐ শ্রমিকেরা প্রাসঙ্গিক প্রবিধানের উপর ভিত্তি করে সরকারি চুক্তিগুলির জন্য কাজ পারমিটগুলি পেতে পারেন।
কুয়েত প্রবাসী সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ভয়েস বাংলাকে জানান, ‘এক শ্রেণির দালালের কারণে আমাদের শ্রমবাজার আবারও হুমকির মুখে পড়তে পারে। এই দালালরা নিজেরা কুয়েতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু হাজার হাজার বাংলাদেশির জীবন তাদের কারণে হয়েছে বিপন্ন। তবে আশার কথা কুয়েত সরকার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জনবল নিতে চায়। এক্ষেত্রে আমরা জনশক্তি রপ্তানীর ক্ষেত্রে লাভবান হব।তার জন্য আমাদের কুয়েত দূতাবাসকে সবসময় কুয়েত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা উচিত। তাহলে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কুয়েতে কাজের যে সুযোগ বাড়বে তাতে আমরা লাভবান হতে পারব।
No comments:
Post a Comment