বেশ কয়েক বছর ধরেই পর্যটনের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠেছে মালয়েশিয়া। প্রতি বছরই সেখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী যাচ্ছে । মালয়েশিয়ায় গিয়ে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার দৌড়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে নেই। প্রায় শতভাগ ভিসা সম্ভাবনা , ভালো মান, তুলনামূলক কম টিউশন ফি, কাজের সুযোগ এবং জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম হওয়ায় মালয়েশিয়া এই মুহূর্তে শিক্ষাগ্রহণের জন্য অন্যতম আদর্শ দেশ । এছাড়া, মালয়েশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মোনাশ, ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের মতো বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ক্যাম্পাস রয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার পড়াশুনার খরচ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে হওয়ায় দ্রুত শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে মালয়শিয়া।
বর্তমানে ১০০ টিরও বেশি দেশের ৫০ হাজারের বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশের গত দুই বছরের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার ৫৩৪ জন, এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজার ৪৪১ জন উচ্চ শিক্ষার জন্য গেছে। কিন্তু মালয়শিয়ার এই বিপুল সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বক্ষন পর্যাপ্ত তথ্য বা কাগজপত্র না থাকায় প্রতিনিয়তই আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে নানামুখী বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের পর থেকে শিক্ষার্থীদের হয়রানি আরো বেড়ে গেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের ‘আই-কার্ড’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। বিদেশী শিক্ষার্থীদের শিক্ষানবিস বৈধ ডকুমেন্ট হিসেবে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নিবন্ধিত হওয়ার মাধ্যমে আই-কার্ড সুযোগটি দেয়া হবে শিক্ষার্থীদের। বিষয়টি আপাতত অভিবাসন বিভাগের গ্যাজেটিং-এ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গত রবিবার এক বিবৃতিতে অভিবাসন বিভাগের প্রধান জেনারেল মোস্তফার আলি বলেন, “উচ্চশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিবন্ধিত বিদেশী শিক্ষার্থীরা ইমিগ্রেশন এক্ট ১৯৫৯/৬৩ এবং ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩ অনুযায়ী সনাক্তকরণ ‘আই-কার্ড’ ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।’’
মালয়শিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গ্যাজেটের মাধ্যমে বিদেশী শিক্ষার্থীরা আই-কার্ড একটি সনাক্তকরণ ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। তবে এটি শুধু বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, পাসপোর্টের বিকল্প বলে বিবেচ্য হবে না। মোস্তফার আলি সংবাদ মাধ্যমকে আরও জানান যে, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাসপোর্টের পরিবর্তে আই-কার্ড কে বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ পৌঁছে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আই-কার্ডকে সাজানো হবে নতুন এবং ভিন্নরূপে যাতে করে এর অপব্যবহার না হয়। এতে থাকবে বায়োমেট্রিক চিপ এবং স্থায়ী সনাক্তকরন নাম্বার যা দেখে সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহজেই সনাক্ত করতে পারবে।’
তবে এই আই-কার্ড বিতরণ শুরু করার কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি। তারপরও নিশ্চই সেদেশের হয়রানি হওয়া শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
No comments:
Post a Comment