অভিবাসী ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ার কঠোর অবস্থান বিপাকে ফেলেছে দেশটির অবৈধ অভিবাসীদের। আবার অনেকসময় এই কারণে বৈধ অভিবাসীদেরও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকদের বৈধতা দিতে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ই-কার্ড দেয়া করা শুরু করে মালয়েশিয়া। গত ৩০ জুলাই এই কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আর এই বৈধতা দেয়ার দুই কর্মসূচি ই-কার্ড ও রি-হায়ারিং এ নিবন্ধিতদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই বেশি।
শেষ হওয়া ই-কার্ড কর্মসূচিতে নিবন্ধিতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই বাংলাদেশের। চলমান রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত নিবন্ধিতদের মধ্যে ২ লাখ ৯৩ হাজার জন বাংলাদেশি। রি-হায়ারিং কর্মসূচি চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাংলাদেশ থেকে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকরা বৈধ হতে উৎসাহী। তাই তারা যেন নিঃসঙ্কোচে চলমান রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারে এজন্য মালয়েশিয়ার প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার অভিবাসন দপ্তরের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলীর সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ এই অনুরোধ জানিয়েছে।
১ জুলাই অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের আটক অভিযান শুরুর পর সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছেন মুস্তাফার আলী। তিনি এ পর্যন্ত আটক অবৈধ বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা, নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা, আটক ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ, অভিযানের কারণ ও বিদেশি শ্রমিক বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন।
মুস্তাফার আলী বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনীতিকদের জানান, অবৈধ বিদেশি শ্রমিক বিরোধী অভিযানে দুই সপ্তাহে সাড়ে চার হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১ হাজার ২৮৬ জন বাংলাদেশের নাগরিক। ই-কার্ডে নিবন্ধিত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের ৫৭ শতাংশ বাংলাদেশের। এ ছাড়া রি-হায়ারিং কর্মসূচিতে নিবন্ধিত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। মালয়েশিয়া বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চায়। তাই তারা আর ই-কার্ডে সময় বাড়াবে না।
অবৈধ শ্রমিকবিরোধী অভিযানের নিয়মিত কার্যক্রম চলবে। তবে রি-হায়ারিং কর্মসূচি এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে। বাংলাদেশের লোকজনকে ওই কর্মসূচিতে নিবন্ধিত হতে উৎসাহিত করতে বলেছে মালয়েশিয়া। এ ছাড়া অবৈধ শ্রমিকবিরোধী অভিযানে আটক বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গটি তুলেছে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আটক লোকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভ্রমণ পাস দেবে হাইকমিশন।
তবে ই-কার্ড প্রক্রিয়ায় সব অবৈধ শ্রমিক বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এমনটা নয়। শুধুমাত্র যারা বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন, পাসপোর্ট আছে কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, কমপক্ষে ছয় মাস অবৈধ অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল, কোন ধরনের অপরাধের রেকর্ড নেই, বয়স ৪৫ বছরের কম এবং আগের প্রতিষ্ঠান থেকে ইমিগ্রেশনে কোন অভিযোগ নেই- কেবল তারাই এ বিশেষ সুযোগ পেয়েছে। ই-কার্ডের মেয়াদ এক বছর। আর এই সময়ের মধ্যেই চলমান রি-হায়ারিং প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বৈধতার আওতায় আসতে পারবে শ্রমিকরা।
এই ই-কার্ডের মেয়াদ থাকবে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে রি-হায়ারিং পদ্ধতিতে শ্রমিককে নির্দিষ্ট মালিকের মাধ্যমে বৈধ ভিসা করতে হবে। তবে ই-কার্ড সংগ্রহে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছ থেকে অসহযোগিতা পাওয়ার অনেক অভিযোগ ছিল প্রবাসীদের। এছাড়া এখানেও ই-কার্ড করে দেয়ার নামে অনেক দালালের প্রতারণার শিকার হয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকরা। নকল কার্ড দেয়ার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। এ সমস্যাগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হলে আরও অনেক অবৈধ বাংলাদেশি বৈধ হওয়ার সুযোগ পেতো বলে মনে করছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা।
No comments:
Post a Comment