স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেন ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। ৪,৫০,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বৃহৎ দেশ হলেও ১কোটিরও কম জনসংখ্যা নিয়ে ইউরোপের অন্যতম কম জনসংখ্যার দেশ সুইডেন। এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ২১ জন মানুষ বসবাস করে। সুইডেনের জনসংখ্যার প্রায় ৮৫% শহরকেন্দ্রিক এবং দেশের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত শহরে বেশি মানুষের বসবাস । সুইডেনের রাজধানীর নাম স্টকহোম এবং এটি সুইডেনের সবচেয়ে বড় শহর। সুইডেন একমাত্র দেশ যেটি উনবিংশ শতক থেকেই একটি শান্তিপূর্ন দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রেখেছে এবং কোন প্রকার যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত থেকেছে। শান্তিপূর্ণ এই দেশটিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যাতে কম নয়। নির্দিষ্টকরে কোন তথ্য না থাকলেও প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি সুইডেনে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সুইডেনে প্রবেশ করা যেমন কঠিন তেমনি সুইডেনে বৈধতার প্রক্রিয়াও খুব সহজ নয়। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ার হারও কম। তবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের বাংলাদেশিদের তুলনায় অনেক ভাল রয়েছে সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বেকারত্বের হার খুবই কম। সুইডেনের বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ জিন্টু জানান, সেখানকার বাংলাদেশিরা অনেক ভাল আছে। তিনি বলেন, ‘পারস্পরিক সহযোগিতা, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটি এগিয়ে চলেছে।’ বাংলাদেশিরা যেসব দেশে রয়েছে তার মধ্যে গড় বার্ষিক আয়ের দিক থেকে সুইডেন প্রবাসীরা তিন নম্বরে, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানির পরেই অবস্থান তাদের। সুইডেনে একজন প্রবাসীর গড় বার্ষিক আয় ৮৪ হাজার ৮০২ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। জরিপে অংশ নেওয়া ৭১ শতাংশ প্রবাসী জানিয়েছে, দেশটিতে কাজের পরিবেশ ভালো। আনোয়ারুল কাদের চৌধুরী নামের এক প্রবাসীর সাথে কথা বলা হলে তিনিও ভাল জীবন-যাপনের কথা জানান।
সুইডেন বরাবরই অত্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ এবং রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীল একটি দেশ। সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও সবাই একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সাথে সাথে তাদের মধ্যে ধর্মীয় কোন ভেদাভেদ নেই বলেও জানা যায় প্রবাসীদের কাছ থেকে। সেখানকার মুসলিম ধর্মালম্বীদের বেশ বেগ পেতে হয় পবিত্র রমযান মাসে। গ্রীষ্মকালে রাত দুইটা বা তিনটায় ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে এখানে যে কারণে রমযানে দীর্ঘসময় উপবাসে থাকতে হয় রোজাদারদের। মুলত শিক্ষার্থী ভিসা (স্টুডেন্ট ভিসা), কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) নিয়ে সুইডেনে যায় বাংলাদেশিরা। তবে গত কয়েকবছর থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের জাতীয়তা গ্রহণকারী (পাসপোর্ট) অনেক বাংলাদেশিও পাড়ি জমাচ্ছেন সুইডেনে।
২০১১ এর পূর্বে সুইডেনের ইউনিভার্সিটিগুলোতে গেলেই বাংলাদেশি নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের পাওয়া যেত। ছাত্রদের উপর টিউশন ফি আরোপ করার পর পরিস্থিতি তেমনটি নেই আর। বর্তমানে সুইডেনের শিক্ষা খুবই ব্যয়বহুল। প্রতি বছর প্রায় ১০-১২ হাজার ইউরো যা ১০-১২ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ টিউশন ফি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। আর সেখানকার ছাত্রদের পড়াশুনার সময় বাদ দিয়ে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করার সময় পায়। যা দিয়ে হয়ত লিভিং কস্ট ম্যানেজ করা সম্ভব, কিন্তু টিউশন ফি না। ২০১১ সালেই সুইডেনের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নন-ইউরোপিয়ান ছাত্র ড্রপ করা হয় ৮০%, যা কল্পনাতিত। তাই উচ্চশিক্ষা অর্জনে ইদানিং আর কেউই সুইডনের দিকে পা বাড়াচ্ছেনা। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে সুইডেন কিছুটা কঠোরতা অবলম্বন করে।
দেশে খোঁজ-খবর নিয়ে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মনে হলে তবেই কর্তৃপক্ষ সেই ব্যক্তি বা পরিবারকে সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে থাকে। লেখক সাব্বির খান একটি সাক্ষাতকারে বলেন, সুইডেন বিশ্বের সেরা দেশগুলোর মধ্যে একটি। ওখানকার জীবনের জন্য প্রয়োজন অভ্যস্ততা। আর বাংলাদেশে প্রতিদিনকার জীবন প্রতিদিনের। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম কোন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সুইডেন সফর করায় অত্যন্ত খুশি সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
No comments:
Post a Comment