Social Icons

Wednesday, December 23, 2015

সিরিয়া প্রসঙ্গে কী ভাবছে রাশিয়ানরা

রুশরা কি সিয়িয়ায় বোমা হামলা সমর্থন করে? জবাব তাদের কাছ থেকেই জেনে নেয়া উচিত। সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে অবশ্য ইতিবাচক জবাবই মিলবে। গত ৩ ডিসেম্বর পাবলিক ওপিনিয়ন ফাউন্ডেশন জানায়, ৭০ শতাংশ রাশিয়ান এই অভিযানকে সমর্থন করে (গত নভেম্বরে সমর্থনের হার ছিল ৬৪ শতাংশ)। রাশিয়ান পাবলিক ওপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার গত ৪ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ৬২ শতাংশ রুশ বর্তমান অভিযান বা আরো আগ্রাসী অভিযানের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। এরও আগে ২৯ অক্টোবর লেভাদা সেন্টার জানায়, ৫৪ শতাংশ রুশ সিরিয়ায় বোমা হামলা, সামরিক পরামর্শ এবং অস্ত্র সহায়তার বিষয়টিকে সমর্থন করে। 
যদিও মাত্র কয়েক মাস আগেই সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে জনমত একেবারে বিপরীত অবস্থানে ছিল। বাস্তবতা হলো মাত্র এক মাসের (সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর) ব্যবধানে সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে রুশদের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। গত সেপ্টেম্বরে ৬৯ শতাংশ রুশ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সরাসরি সামরিক সহায়তা করার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তবে অক্টোবরের শুরুর দিকেই দেখা যায়, ৭২ শতাংশ রাশিয়ান সিরিয়ায় বোমা ফেলার পক্ষে। প্রাথমিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তানে অভিযানের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করেই বহু রাশিয়ার সিরিয়া অভিযানের বিরোধিতা করে। আফগানিস্তানের রাশিয়ার ১৪ হাজার ৫০০ সেনা নিহত হয়। রাশিয়ানরা মধ্যপ্রাচ্যে একই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে আবারো জড়িয়ে পড়তে চায়নি। ঠিক এ কারণেই অক্টোবরে ৪৬ শতাংশ রুশ ভেবেছিলেন সিরিয়ায় জড়িয়ে পড়লে তা ‘একটি নতুন আফগানিস্তানের’ জন্ম দেবে। এক মাসের ব্যবধানে এমন ভাবনা ছিল মাত্র ১১ শতাংশ রাশিয়ানের। 
রুশদের এমন ত্বরিত মন পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমতাসীন আমলে অস্বাভাবিকও নয়। এক বছর আছে ইউক্রেনের যুদ্ধের সময়ও একই ধরনের পরিস্থিতি অর্থাৎ দ্রুত পরিবর্তনের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। 
গত বছর মার্চের গোড়ার দিকে মাত্র ২২ শতাংশ রুশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে ছিল। জুনে গিয়ে দেখা যায়, সমর্থন বেড়ে ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় এসে মনে হতে শুরু করে, বেশির ভাগ রাশিয়ানই ইউক্রেন যুদ্ধের কথা ভুলে গেছে। বেশির ভাগ রাশিয়ানই বর্তমান সীমান্ত নিয়ে সন্তুষ্ট (এ বছরের মার্চে এক জনমত জরিপে দেখা যায়, ৫৭ শতাংশ রুশ এমনটাই মনে করেন।) অর্থাৎ ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে ক্রিমিয়ার দিকে রাশিয়ার ক্রিমিয়ার দিকে সীমান্ত বাড়িয়ে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত ছিল তা নিয়ে আগ্রহী নয় তারা। ৬৪ শতাংশ রুশ মনে করেন, সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রাখা ঠিক হবে না (অর্থাৎ গত দেড় বছরে ইউক্রেনে রাশিয়ার যে ভূমিকা তাকেও খুব একটা গ্রাহ্য করে না তারা)। একইভাবে অন্য বিষয়গুলোতেও তাদের অবস্থান বেশ নমনীয়। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বা তুরস্কের সাথে সম্ভাব্য সামরিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও তাদের অবস্থান একই থাকবে। 
গত ৩১ অক্টোবর রাশিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়। ১১ শতাংশ রুশ মনে করেন এ ঘটনার জন্য সন্ত্রাসীরা দায়ী। ৩২ শতাংশ মনে করেন এর জন্য মিসরের বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থাই দায়ী। ২৫ শাতংশের মতে, দায় মিসরের নিরাপত্তা সংস্থার আর যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী মনে করে ৮ শতাংশ। ১৫ শতাংশ রুশ বিশ্বাস করেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণেই সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। তবে পরবর্তী সময় তুরস্ক রাশিয়ার জেট বিমান ভূপাতিত করলে আঙ্কারার বিরুদ্ধে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হয়। 
এত দ্রুত পরিবর্তনশীল মানসিকতাকে কী করে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? সাধারণভাবে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রচারকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। গত কয়েক বছরে পুতিনের প্রতিটি সামরিক হামলাই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেলগুলোতে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। রাশিয়ায় ৯০ শতায়শ মানুষ খবরের জন্য রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত চ্যানেলগুলোর ওপর নির্ভরশীল। ফলে এদের মতামতের পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা খুব একটা কঠিন কিছু নয়। রুশদের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধের স্মৃতি এখনো টাটকা। ‘রাশিয়া বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী’- এমন মানসকিতাই বহন করে তারা। রুশদের মানসিকতার এই দ্রুত পরিবর্তনের কারণে প্রচারণা বাড়ছে। যেকোনো ব্যক্তি আজ যা ভাবছে, কাল এর একেবারে বিপরীতটি চিন্তা করে। বাস্তবতা হলো, রাশিয়ানরা কোনো কিছুই বিশ্বাস করে না। পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে রুশদের মধ্যে বিভাজন আছে। ১০ শতাংশ আরো নমনীয় নীতি দেখতে চায়। বাকিদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো ভাবনাই নেই। 
লেভাদা সেন্টারের ড্যানিক ভলকভ বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষেরই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কোনো একটা অবস্থান গ্রহণ করার ব্যাপারে আগ্রহ নেই। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় কোনো চিহ্নিতকারী প্রতীক ছাড়াই সবুজ সামরিক উর্দি পরে কারা লড়াই করছে জানতে চাইলে রুশদের জবাব ছিল, এটা যে কেউ হতে পারে। অর্থাৎ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তারা খুব একটা আগ্রহী নয়। 
বর্তমানেও রাশিয়ানরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তাদের যা জানাচ্ছে সেটুকু জেনেই সন্তুষ্ট থাকতে চায়। টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোতে সিরিয়ায় চলমান রাশিয়ার সামরিক হামলার ব্যাপারে দেশের মানুষের সমর্থনের বিষয়টি বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠে আসে। নিজেদের কোনো স্পষ্ট চিন্তা ছাড়া টিভিতে দেখা শব্দগুলোই তাদের নিজ ভাষ্য হয়ে ওঠে। তবে যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জোরালো হওয়ার পরও এদের কেউই নিজেরা যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত নয়। 
অন্যভাবে এটাও বলা যায় যে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন যদি বর্তমান অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে শান্তি, গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৌহার্দ্য স্থাপনের প্রচার চালাতে থাকে তাহলে কয়েক মাসের মধ্যেই রুশ জনমতও সেদিকেই বাড়তে থাকবে। আবার এ-ও বাস্তবতা যে, পুতিন যদি চান, তাহলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই রুশরা সিরিয়ায় রাশিয়ার স্থলসেনাদের দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates