কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গাতে নীল ছবির শুটিং চলছে। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বেশ কিছু জায়গাতেই হয় এমন শুটিং হয়। নামী কলেজের ছাত্রী ও গৃহবধূরা এসব নীল ছবিতে অভিনয় করছেন। শুধুমাত্র হাতখরচার জোগান বাড়াতে নীল ছবির দুনিয়ায় পা রাখছেন তারা। পুলিশ কর্তারা এমনটাই দাবি করেছেন।
সম্প্রতি নীল ছবির শ্যুটিংয়ের সময় সল্টলেক থেকে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে সাত নারী ছিলেন। পুলিশ বলছে, শধু কলকাতা নয়, শিলিগুড়ি, দিঘা, মেদিনীপুর, বহরমপুর, জলপাইগুড়ি, বারুইপুর, সোনারপুর, ডায়মন্ডহারবারে রমরম করে চলছে নীল ছবির শুটিং। অনেক সময়ে পুলিশ জানতেই পারে না। চোরাগোপ্তা ভাবে শুটিং সেরে ফিরে যায় গোটা ইউনিট।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় যারা ব্লু-ফিল্মে কাজ করেন তাদের বেশির ভাগেরই অন্য পেশা রয়েছে। গোয়েন্দা দপ্তরের এক পদস্থ অফিসারের কথায়, শতাংশের হিসেবে খুব কম হলেও গৃহবধূরাও আসেন এই পেশায়। বাড়তি আয় তো বটেই, কোনও কোনও ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মজা নিতেই অনেকে ‘অভিনয়’ করতে চলে আসেন। অন্য এক পুলিশ অফিসার জানাচ্ছিলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই তারা অভিযোগ পাচ্ছিলেন কলকাতার একটি নামী কলেজের বেশ কিছু ছাত্রী কলেজে আসার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দিন নানা সময়ে। কিন্তু, কোথায় যায়, কেন যায় সে ব্যাপারে কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। অভিযোগ পেয়ে খোঁজখবর করতেই জানা গেল, তারা শহরের একটি অভিজাত এলাকায় এক ফ্ল্যাটে যায়। পরে অভিযান চালিয়ে জানা যায়, ওই ফ্ল্যাটে ব্লু-ফিল্মের শুটিং হত। কলেজছাত্রীদের পাশাপাশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে কল সেন্টার কর্মী, এমনকী থিয়েটার শিল্পীও— নানা পেশার ভিড় জমেছে এখন ব্লু ফিল্মের দুনিয়ায়। বয়স যত কম, নির্মাতাদের কাছে তার চাহিদা তত বেশি। দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি আবেদনের উন্নত মাত্রাবোধও এ ক্ষেত্রে বিচার্য। কাজ পাওয়ার জন্য এগুলি অগ্রাধিকার পায়। শুধু কাজ পাওয়া নয়, পারিশ্রমিকও সেই হিসেব করেই হয়। বয়স কিন্তু তাদের ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যেই। নীল ছবির শুটিং-এ গ্রেপ্তর হওয়া এক তরুণী পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, তিনি পেশায় থিয়েটার কর্মী। মফস্বলের একটি নাট্যদলে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সিনেমাতেও কাজ করতে চেয়েছিলেন। খোঁজখবর করতে করতে যোগাযোগ হয় এক জনের সঙ্গে। তিনিই সিনেমার নাম করে নীল ছবিতে নামান ওই তরুণীকে। টাকাপয়সা মন্দ নয়। প্রতি দিনের হিসেবে কাজ করলে প্রায় হাজার আড়াই টাকা পারিশ্রমিক মেলে। আর ঘণ্টাকয়েকের কাজ শেষে ফিরে যাওয়া যায় থিয়েটারের আশ্রয়ে।
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এক একটা ক্লিপের জন্য দেড় থেকে তিন হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক পান। দিনে অনেকে দু’-তিনটে ক্লিপে অভিনয় করেন।
পুলিশের দাবি সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসেন। সচ্ছল পরিবারের পাশাপাশি দরিদ্র পরিবার থেকেও অনেকে এই ছবিতে কাজ করেন। এমনকী, কলেজ পড়ুয়ারাও শুধুমাত্র হাতখরচার জোগান বাড়াতে নীল ছবির দুনিয়ায় পা রাখছে। পুলিশের সূত্রটি জানাচ্ছে, অনেক সময় না জেনেও কেউ কেউ এই পেশায় পা দিচ্ছেন। তাদের বলা হচ্ছে টেলি ফিল্মের কাজ হবে, অথচ কাজে নেমে তিনি দেখলেন পোশাকহীন হয়েই অভিনয় করতে হচ্ছে। টাকা নিয়েছেন বলে, কাজ শেষ করতেও হচ্ছে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে। এমনটাও অনেকে জানিয়েছেন পুলিশি প্রশ্নের মুখে।
Wednesday, December 23, 2015
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment