বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হয়। তবে অধিকাংশ কারণগুলো খুব জটিল নয়। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জালাল উদ্দিন।
প্রশ্ন : মাথাব্যথা অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা। সাধারণত কী কী কারণে এই মাথাব্যথা হতে পারে?
উত্তর : মাথাব্যথার বহুবিধ কারণ রয়েছে। মাথার বাইরের অংশ থেকে শুরু করে, এর অভ্যন্তরের যেকোনো জায়গা থেকে মাথাব্যথার উৎপত্তি হতে পারে। এবং মাথার আশপাশে যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে, যেমন চোখ কান, ঘাড় এসব জায়গার ব্যথাও মাথাব্যথার মতো অনুভূত হতে পারে। উৎস হচ্ছে অন্য জায়গায় তবে মাথাব্যথার অনুভূতি হতে পারে। সব মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মাথাব্যথায় ভুগে থাকে। তবে অধিকাংশ মাথাব্যথাই খুব ক্ষতিকর নয়। আবার মারাত্মক রোগ মাথাব্যথার কারণে হতে পারে। যেমন ধরুন, মস্তিষ্কের ভেতর কোনো টিউমার হলে, সেটাও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। মহিলাদের একধরনের মাথাব্যথা হয়, এখানে তীব্র মাথাব্যথা হয়, বমি হয়, মাথাব্যথা শুরুর আগে চোখে ঝাপসা দেখে- এই ধরনের মাথাব্যথাকে মাইগ্রেন বলে। এ ছাড়া মস্তিষ্কের টিউমারের জন্য মাথাব্যথা করে। এ ছাড়া মহিলাদের আরেকটি মাথাব্যথা হয়, আমাদের যেমন রক্তের চাপ আছে তেমনি চোখেও চাপ রয়েছে, একে ইন্টাওপুলার প্রেসার বলে। মাথার ভেতরেও একধরনের তরল রয়েছে, তার একটা চাপ আছে, সেই চাপ বাড়লে একধরনের মাথাব্যথা হয়। একে ইডিওপ্যাথিকইন্টার ক্রেনিয়াল হাইপারটেনশন বলে।
প্রশ্ন : ব্যথার ধরন দেখে কি বোঝার উপায় আছে মাথাব্যথা কেন হচ্ছে?
উত্তর : যেকোনো ব্যথা বা রোগে প্রথমেই চিকিৎসককে নির্ণয় করতে হয়, বিষয়টি জটিল কি না। জটিল মাথাব্যথা কোনগুলো সেগুলো চিকিৎসকের জানা প্রয়োজন। যেমন : মাথাব্যথার সঙ্গে যদি বমি হয়, মাথাব্যথার সঙ্গে যদি জ্বর থাকে, যদি অজ্ঞান হয়ে যায়, মাথাব্যথার সঙ্গে যদি শরীরের একটি অংশ অবশ হয়ে যায়- এগুলো জটিল বিষয়। হয়তো মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তপাত হলো, রোগীর হয়তো জ্ঞান আছে, তবে তীব্র মাথাব্যথা ও বমি হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তপাতের একটি রোগ রয়েছে। এটি জটিল অবস্থা। একে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে; নয়তো মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।
প্রশ্ন : দুশ্চিন্তা থেকে মাথাব্যথা হয় এবং এটি অনেক প্রচলিত। এই মাথাব্যথাটি বোঝার কি কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : আসলে চিকিৎসকের কাছে স্বল্পমেয়াদি তীব্র ব্যথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে রোগীর কাছে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রায়ই মাথাব্যথা হয়, দীর্ঘমেয়াদে, অনেক বছর, এটি সম্ভবত দুশ্চিন্তার জন্য মাথাব্যথা।
আর বয়স্ক মানুষ হঠাৎ অল্প দিন ধরে মাথাব্যথা হচ্ছে, বমি হচ্ছে, এখানে মস্তিষ্কের টিউমার বা অন্য কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন আছে।
প্রশ্ন : মাথাব্যথার ব্যবস্থাপনা আপনারা কীভাবে করেন?
উত্তর : মাথাব্যথার ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসা আসলে কারণের ওপর নির্ভর করে। দুশ্চিন্তার কারণে যে মাথাব্যথা, সে ক্ষেত্রে কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওই সব রোগীর ঘুম কম হয়। তাঁরা সব সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। সে ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ রয়েছে সেগুলো দেওয়া হয়। বিভিন্ন রকমের ঘুমের ওষুধ রয়েছে, তাঁদের সেগুলো দেওয়া যেতে পারে। আবার যাদের দুশ্চিন্তার কারণে মাথাব্যথা হয়, তাদের দেখা যায় রক্তচাপ সামান্য বেশি। তাদের উদ্বেগের জন্য হৃদ স্পন্দনের হার বেশি। এগুলো কমিয়ে দিলে তারা সহজ বোধ করে, মাথাব্যথা কমে।
মাইগ্রেনের আলাদা ব্যবস্থাপনা রয়েছে। মাইগ্রেনের আলাদা ওষুধ রয়েছে। তার মধ্যে দুই রকমের ব্যবস্থাপনা রয়েছে। একটি ব্যবস্থাপনা হচ্ছে, যখন মাথাব্যথা হয়, তখন কতগুলো ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। আর মাসে যদি তিন বা চারবার হয়, সেটা কমিয়ে দেওয়ার জন্য আরেক ধরনের ওষুধ রয়েছে সেটি দেওয়া হয়। আর যদি এটা কোনো নির্দিষ্ট কারণে হয়, যেমন ধরুন, মস্তিষ্কের টিউমার, সেই ক্ষেত্রে টিউমারের চিকিৎসা করতে হয়।
প্রশ্ন : ব্যথার কিছু ধরনের কথা বলছিলেন রেফার্ড পেইন, সেগুলো ব্যবস্থাপনা কীভাবে করেন?
উত্তর : এর মধ্যে একধরনের ব্যথা রয়েছে যেটা মুখে হয়; ট্রাইজিমিনাল নিউরালজিয়া। এটি একটি স্নায়ুর ব্যথা এবং এই রোগে তীব্র ব্যথা হয়। ব্যথাটা হয়তো খুবই স্বল্পস্থায়ী, তবে রোগীর জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক। ধরেন, মুখের ডান বা বাম পাশে হয়। হয়তো ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড থাকে। তবে দিনে ৩০ থেকে ৫০ বার হচ্ছে। সেটার জন্য বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রশ্ন : অনেক সময় কি এ রোগে দাঁতে ব্যথা নিয়ে আসে রোগী?
উত্তর : আপনি ঠিকই বলেছেন, এ রোগে অনেক সময় আমরা এ রকম পেয়েছি যে তিনি ধরে নেন তাঁর দাঁতের জন্য এ রকম হয়েছে। এ রকম হয়েছে যে ওপরের পাটির হয়তো সবগুলো দাঁত উনি তুলে ফেলেছেন। এরপর এসে হয়তো স্নায়ু চিকিৎসকের কাছে এসে বলছেন, আমি তো সব দাঁতগুলো ফেলে দিয়েছি, তবে ব্যথা তো কমে না। আসলে এই রোগীর ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া ছিল। তার দাঁতে আদৌ কোনো সমস্যা ছিল না হয়তো।
প্রশ্ন : এই রোগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা আপনারা কীভাবে করেন?
উত্তর : স্নায়ুর ইমপালস যেটি তৈরি করে রাখে, সেটি দমন করে রাখার জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে। আসলে এখানে যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়, ঘটনাচক্রে সেগুলো আবার মৃগীরোগীর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। সেই জাতীয় কিছু ওষুধ ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে মাইক্রোভাসকুলার সার্জারি ব্যবহার করা হয়। সেগুলো উন্নত বিশ্বে হয়। আমাদের দেশে এখনো চালু হয়নি।
No comments:
Post a Comment