রিও ডি জেনিরো থেকে: করকোভাডো পাহাড়ের ৭১০ মিটার উপরে তার অবস্থান। উচ্চতা ৩৮ মিটার। পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় দাঁড়িয়ে ব্রাজিলকে যেন তিনি আশীর্বাদের ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু ব্রাজিল নয়, বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সবারই যেন অবস্থান তার এই আশীর্বাদের ছায়ায়।
পাহাড় ও সাগর ঘেরা ব্রাজিলের অন্যতম পর্যটন নগরী রিও ডি জেনিরোর যে অপরূপা চেহারা তা যেন তারই আশীর্বাদের ফল। ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের কথাই বলছিলাম। রিও নগরীর অন্যতম পাহাড়শৃঙ্গ করকোভাডোতে ৩৮ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন যীশুর এই মূর্তি। দূর থেকে মনে হয়, দুই বাহু প্রসারিত করে তিনি যেন আশীর্বাদের ছায়া দিচ্ছেন তার অনুগতদের।
দলে দলে পর্যটক প্রতিদিন গিয়ে উঠছেন তিজুকা ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কস্থ করকোভাডো পাহাড়ের ওই সর্বোচ্চ শৃঙ্গে, যেখানে ভূমি থেকে ৭১০ মিটার উপরে আরও ৩৮ মিটার উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার বা যীশু খৃস্ট। ১৯২৬ থেকে ৩১ সালের মধ্যে ফ্রেঞ্চ ভাস্কর পল লেন্ডোস্কি ও ব্রাজিলিয়ান প্রকৌশলী হেইটর দ্য সিলভা কস্টা নির্মিত ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের ওজন ৬৩৫ মেট্রিক টন। নির্মাণ সামগ্রী এত উঁচুতে নিয়ে তুলতে নির্মাণ শুরুর আগেই ভূমি থেকে পাহাড় পর্যন্ত তৈরি হয় রেলপথ।
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারকে বলা হয় ‘এ সিম্বল অব খ্রিস্টিয়ানিটি এ ক্রজ দ্য ওয়ার্ল্ড’। এটি রিও নগরী ও ব্রাজিলের কালচারেল আইকন হিসেবেও বিবেচিত হয় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে। নতুন সপ্ত আশ্চর্যের তালিকায় এটির অবস্থান।
আমেরিকা মহাদেশের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম নগরী রিওকে বলা হয় কালচারাল সিটি অব ব্রাজিল। বছরের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত উৎসব ও প্যারেডের মাধ্যমে রিও বিশ্ববাসীকে জানান দেয় ব্রাজিলের নিজস্ব সংষ্কৃতি। ২০১২ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত হয় রিও নগরীর বেশ কিছু এলাকা। শুধু ক্রাইস্ট দ্যা রিডিমারই নয়, পর্যটক আকর্ষণের আরও বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে এই নগরীতে। কপোকাভানা সমুদ্র সৈকত, সুগারলফ মাউন্টেন, মারাকানা স্টেডিয়ামসহ আরও অনেক আকর্ষণীয় স্থাপনা রয়েছে যা পর্যটকদের অহরহ টানে রিও’র দিকে।
বস্তি বলতে আমরা অনেকেই যেখানে বুঝি অপরিচ্ছন্ন ও অপছন্দের একটি স্থাপনা, সেখানে রিও’র বস্তি বা ফাভেলাও ব্যাপকভাবে টানে পর্যটকদের। ক্রাইস্ট দ্যা রিডিমারের মত এই ফাভেলা বা বস্তিকেও রিও’র অন্যতম আইকন হিসেবে দেখা হয়। এই বস্তিগুলো মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে শাসিত হওয়ার কারণে বিশ্ব মিডিয়ায়ও প্রায় সময়ই এটি সংবাদ শিরোনাম হয়ে ওঠে। ১৫৬৫ সালে পর্তুগিজদের হাতে প্রতিষ্ঠিত রিও ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ছিলো ব্রাজিলের রাজধানী। ’৬০ সালে রাজধানী স্থানান্তরিত হয় ব্রাসিলিয়ায়। চলতি বছর রিও’তে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব অলিম্পিক। অলিম্পিককে সামনে রেখে নতুন করে সাজানো হচ্ছে রিওকে।
Thursday, May 26, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment