Social Icons

Monday, November 21, 2016

আ’লীগ সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেনি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনই সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেনি, বরং বরাবরই চেয়েছে একে একটি শক্তিশালী, সুশৃঙ্খল এবং মর্যাদাপূর্ণ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সশস্ত্র বাহিনীকে কখনও আমাদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। বরং চেয়েছি শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন করে একে একটি সুন্দর সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহঙ্কার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণে এ কথা বলেন। বাসস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করেছে। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সশস্ত্র বাহিনীকে কখনও আমাদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বারবার ক্যু করে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত অফিসার-সৈনিককে হত্যা করিনি। আমরা চেয়েছি শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন করে একে একটি সুন্দর সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে এবং এই সশস্ত্র বাহিনী যেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হয়। 
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। যুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করেন। সর্বস্তরের 
মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিত বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আক্রমণে পর্যুদস্ত দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। যার ফলে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহঙ্কার। আমি তাদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি। 
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ’৭০-এর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা তখন ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যান। এরই একপর্যায়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গণহত্যা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং শেষ শত্রুটি বাংলার মাটি থেকে বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জাতির পিতাকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তাঁরই সহযোগীরা তাঁরই নির্দেশ এবং ব্যবস্থা অনুসারে এই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। যে সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার শপথ গ্রহণ করে। 
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু জাতিরাষ্ট্র পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকেও সর্বাধুনিক একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বাহিনীর যে সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা করে গেছেন তারই উপর দাঁড়িয়ে আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতার পরিচিতি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত।
প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিহত সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের অনেক শান্তিরক্ষী শাহাদাতবরণ করেছেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এই মহান দিনে আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করে তোলার জন্য তার সরকার কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশ কিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া মিঠামইনে একটি রিভারাইন ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার কাজও শুরু হয়েছে। অতি শিগগিরই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লেবুখালীতে একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হবে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্রিগেড পর্যায়ে স্পেশাল ফোর্স গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে নৌবাহিনীতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযুক্ত হয়েছে। নৌবাহিনী বহুল কাঙ্ক্ষিত সাবমেরিনও শিগগিরই কমিশনিং হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি কার্যকর ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে আমাদের সরকার বিমানবাহিনীতে যুক্ত করেছে এফ-৭ বিজি যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র। 
তিনি বলেন, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। অনেকেই (বহির্বিশ্বে) আমাকে প্রশ্ন করেন-আপনারা যে এত উন্নয়ন করছেন এর ম্যাজিকটা কী? এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন, আমার একটাই উত্তর। এখানে কোনো ম্যাজিক নেই। এটা হচ্ছে আন্তরিকতা। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির প্রতি যে কর্তব্যবোধ, সেই কর্তব্যবোধ থেকে কাজ করি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন করতে পারছে এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী মর্যাদা পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে আগত অতিথিদেরকেও তার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের অবদানের কথা পুনরায় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates