Social Icons

Wednesday, June 7, 2017

এবার নিজ দলের এমপিদের তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী

প্রস্তাবিত বাজেটের নানা অসঙ্গতি নিয়ে এবার নিজ দলের সংসদ সদস্যদের (মেম্বার অব পার্লামেন্ট বা এমপি) তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার প্রথম দিনে অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন সরকারদলীয় এমপিরা। তারা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে তাদের (ব্যবসায়ী) সঙ্গে বসে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ১ লাখ টাকা বিত্তবানের মাপকাঠি- অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে তীব্র সমালোচনা করেন তারা।

এছাড়া পোশাক খাতে উৎসে কর বাড়লে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়বে বলে মন্তব্য করে এই বাড়তি কর প্রত্যাহরের দাবি জানান এমপিরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির এমপিদের কড়া সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।

সঞ্চয়পত্রের ওপর বাড়তি কর আরোপ করায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বাড়তি কর আরোপ করা হয়েছে, যা মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন এক লাখ টাকা হাতে থাকা মানে, ওই ব্যক্তি যথেষ্ট সম্পদশালী। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, আজকের বাজারে এক লাখ টাকা কোনো টাকাই না। এটা বিত্তবানের মাপকাঠি হতে পারে না। যেখানে ৪ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট, সেখানে ১ লাখ টাকা বড় অঙ্ক বলে কর আরোপ করা কোনোমতেই সমীচীন হবে না বলে মনে করছি।

‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’- বাজেটের এ শিরোনাম উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, কথাগুলো বাস্তবসম্মত। তবে বাজেটের মধ্যে কিছু কিছু অসঙ্গতি আছে বলে আমরা মনে করি। বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি স্কিম করেছিলেন- পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, সেগুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে আবার বাড়তি ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে।

আ ক ম মোজাম্মেল হক আরও বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভুল বার্তা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, ব্যাংকে টাকা রাখলে সরকার টাকা কেটে নিয়ে যাবে। আমরা হয়তো সঠিকভাবে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরির শেষ জীবনে কিছু টাকা-পয়সা সঞ্চয় করে রাখেন। আর সেই সঞ্চয়পত্রগুলোর ওপর ভ্যাট আরোপ করা ঠিক হবে না। আমি মনে করি, অর্থমন্ত্রীর একটা সিলিং (সীমা নির্ধারণ) করে দেয়া উচিত যে, এত টাকা হলে কর আরোপ করা যাবে। সেখানে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত যারা ফিক্সড ডিপোজিট রাখবেন বা সঞ্চয়পত্র কিনবেন, তাদের ওপর কর আরোপ না করা। ২০ লাখের ওপরে যারা রাখবেন তার ওপর যত কর আরোপ করেন, যা করেছেন তার চেয়ে আরও বেশি কর আরোপ করলেও আমাদের আপত্তি নেই।

নিজ মন্ত্রণালয় সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, নতুন অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি করে ঈদ বোনাস দেয়া হবে। এখন থেকে সব সময়ই তারা এ বোনাস পেতে থাকবেন। দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জেলা হেডকোয়ার্টার, উপজেলা হেডকোয়ার্টারে বহুতল ভবন করে দেব। যাতে করে তারা থাকতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধের স্থানগুলো চিহ্নিত হয়েছে। সেসব জায়গার স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করব। যাতে ৫০ বছর, ১০০ বছর পরও একটা লোক দেখে বুঝতে পারেন এখানেই পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন।

মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলতে শিশুপার্ক করেছিলেন। আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে ২৩৮ কোটি টাকার মাস্টার প্লান হাতে নিয়েছি। যেন মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিকমানের সূতিকাগার গড়ে তুলতে পারি। এছাড়া সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের একই ডিজাইনের কবর করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, খালেদা জিয়া আর তার পুত্র যে কাজে পারদর্শী, সেই কথাই উনি বলবেন। কিন্তু কীভাবে চুরি হল, সেটা বলতে পারেননি। উনার মাথা খারাপ, উনাদের সময় ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট হতো। আর এখন ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট হয়। দেশের উন্নয়নের খবর রাখেন না বলেই খালেদা জিয়া ইচ্ছামতো কথা বলছেন।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যত বধ্যভূমি আছে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছে, সব জায়গায় একই ধরনের স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। সব মুক্তিযোদ্ধার কবর একই ডিজাইনে করার প্রকল্প পাস হয়েছে। যাতে ১০০ বছর পরও নতুন প্রজন্ম বুঝতে পারে এটা একটা মুক্তিযোদ্ধার কবর। পাকিস্তানি ও রাজাকারদের ঘৃণ্য কাজ স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ঘৃণাস্তম্ভ করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে মানুষ ঘৃণা জানাতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করার জন্য প্রতি জেলা-উপজেলায় স্মৃতিস্তম্ভ করার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, ‘আপনি কথায় কথায় এত ‘এক্সাইটেড’ (উত্তেজিত) না হয়ে তাদের (ব্যবসায়ীদের) সঙ্গে শান্তভাবে কথা বলেন। তাদের সঙ্গে বসে মূল্য সংযোজন করের ব্যাপারে একটি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেন। আমরা সবাই মিলে সমন্বিতভাবে বাজেট কার্যক্রমটা সফল করব।’
অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আলী আশরাফ বলেন, ‘সেভিংস থেকে আপনি কত টাকা পাবেন? কিন্তু মানুষের ভেতর একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলে, ব্যাংকে টাকা রাখলে নাকি বিনিয়োগ বাড়ে। কোন থিওরিতে এসব কথা বলেন আমরা বুঝি না। দয়া করে আপনি এগুলোতে দৃষ্টি দেন।’

অধ্যাপক আলী আশরাফ আরও বলেন, ‘বাজেট যত বড়ই হোক, এটা যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এটার কোনো অর্থই হবে না। নিষ্ফল হবে। বাজেট বাস্তবায়ন করার মধ্যেই আপনার কৃতিত্ব। সেই কৃতিত্বের জন্য আপনি আরও কথা বলেন। স্বচ্ছ হলেই তো বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হবে। সব কিছুর মধ্যে এভাবে আবেগপ্রবণ হলে চলবে না।’

জয়পুরহাটের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, একটি বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ব্যাংকে মানুষ টাকা রাখবে। এক লাখ টাকা রাখলে ৮০০ টাকা দিতে হবে। আগে ৫০০ টাকা দিতে হতো। এটা নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড চলছে। সারা দেশে আলোচনা চলছে। এটা আগে যা ছিল তাই রাখলে ভালো হয়। মানুষের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাট নিয়ে অনেকে কথা বলছে। ভ্যাট আমরা দিচ্ছি। এ ভ্যাটটি কোষাগারে জমা হয় কম। যেভাবেই হোক, এনবিআরকে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আমার ভ্যাট যাতে কোষাগারে জমা হয়, সেটি নিশ্চিত করতে অ্যাপস করা যেতে পারে। এ ভ্যাটের টাকা যদি ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়, যখন আমি সিনিয়র সিটিজেন হব, ওই টাকা পেনশন হিসেবে দেবে। তাহলে সবাই উৎসাহী হবে।

আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি বলেন, ভ্যাটের কথা এসেছে। অনেকে মনে করছেন এটা সহনীয় নয়। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এটা বিবেচনা করবেন। সবক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ না করে খাতভিত্তিক করা যেতে পারে। পোশাক খাতে উৎসে কর বাড়লে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তৈরি পোশাক খাতের এই ব্যবসায়ী।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাজেট আলোচনায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অনেক মধ্যবিত্ত সন্তান পড়ে। এ প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনলে একটা বৈষম্যের বিষয় এসে যেতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট হিলারি ক্লিনটনের যোগসাজশ তদন্তে দেশটির উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন বাংলাদেশের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ড. ইউনূসের বিষয়ে হিলারি ক্লিনটন কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তাদের সিনেট কমিটি তদন্ত করছে। পশ্চিমা বিশ্ব কিছু কিছু দেশে তাদের ডমিনেশন প্রতিষ্ঠার জন্য লোক খুঁজে বেড়ায়। আমাদের দেশে কিছু মানুষ বসে থাকে, তারা সেই তল্পিবাহক হবেন এবং দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবেন। পশ্চিমা প্রভুদের তল্পিবাহকরা আর কেউ নয়, এরা নব্য মীর জাফর। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates