গত তিনমাসে এ ধরনের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ছয়জন মুসলমানের।
এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধেই দিল্লিসহ ভারতের নানা জায়গাতেই সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিয়ে 'নট ইন মাই নেম' নাম দিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। কলকাতাতেও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতার একটি বিপনি বিতান চত্বরে কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন শুধু একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা ফেসবুক পোস্ট দেখে।
'নট ইন মাই নেম' হ্যাশ ট্যাগও চালু হয়েছে মুসলমানদের চিহ্নিত করে গণপিটুনির ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে।
কলকাতায় যারা এই প্রতিবাদ সমাবেশের উদ্যোগটা নিয়েছিলেন, তাদেরই অন্যতম অঞ্চিতা ঘটক বলছিলেন, 'চতুর্দিকে যেসব ঘটনা হচ্ছে, তাতে সত্যিই আমরা বিচলিত। আমাদের মনে হচ্ছে দেশে হিন্দুত্বের একটা আগ্রাসন শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে খুবই উগ্র জাতীয়তাবাদও তৈরি করা হচ্ছে, যার সঙ্গে আবার হিন্দু ধর্মকে জুড়ে দেয়া হচ্ছে।'
কলেজ শিক্ষক সম্রাট সেনগুপ্তের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মুসলমানদের চিহ্নিত করে গণপিটুনি দিয়ে আহত, এমনকি মেরে ফেলার ঘটনাও খুব বেশি ঘটতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, 'একটা শ্রেণির মানুষের হাতে একরকম ক্ষমতায়ন হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রচণ্ড শক্তিশালী মুসলিম বিদ্বেষ আগে থেকেই ছিল। কেন্দ্রে যে দল এখন ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের বলে বলীয়ান হয়ে ওই শ্রেণির মানুষ নিজেদের বিদ্বেষটাকে উগরে দিতে শুরু করেছে।'
সমাবেশে প্রগতিশীল লেখক-বুদ্ধিজীবি, কবি, গায়ক, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বেশ কিছু মুসলমান যুবকও উপস্থিত ছিলেন। তাদেরই একজন মুহম্মদ রাফে সিদ্দিকি।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে অন্তত আমাদের সেই ভয়টা নেই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশে আত্মীয়-বন্ধুদের কাছ থেকে যা খবর পাই, তাতে ওরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। গোরক্ষার নাম করে হোক বা অন্য যেকোনো নামেই, কেন্দ্রীয় সরকারের তো দায়িত্ব এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার। এই পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায় না, এটা আনএক্সেপ্টেবল।'
আইনজীবি অধিরাজ রায় বলছিলেন, 'এরকম একটা নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক জমায়েতের খুব দরকার ছিল, যেখানে কোনো রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক ব্যানার ছাড়া সমাজের নানা মানুষ এক জায়গায় জড়ো হবেন, একটাই দাদি নিয়ে, একটাই বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে। সেদিক থেকে এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল উদ্যোগ।'
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত সকলের বুকে ঝোলানো প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল একটাই কথা- 'নট ইন মাই নেম'।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।
No comments:
Post a Comment