Social Icons

Friday, June 30, 2017

ব্রাজিলে ১৬৯০-এর দশকে মিনাজ জেরাইস শহরে বেশ কিছু স্বর্ণখনি আবিষ্কৃত হয়।

১৫০০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউ পরিচালিত একটি পর্তুগিজ নৌবহর বর্তমানের ব্রাজিলে এসে পৌঁছায় এবং পর্তুগালের রাজা প্রথম মানুয়েলের নামে ভূখণ্ডটিতে পর্তুগালের অধিকার দাবি করে। সে সময় পর্তুগিজরা ব্রাজিলে বসবাসরত প্রস্তর যুগের আদিবাসীদের সাথে পরিচিত হয়। এসকল আদিবাসীদের বেশিরভাগ-ই কথা বলতো তুপি-গুয়ারানি পরিবারের বিভিন্ন ভাষায়, এবং আদিবাসী গোত্রগুলো পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিল।

১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলে প্রথম পর্তুগিজ উপনিবেশটি গোড়াপত্তন হয়। তবে ১৫৩৪ সালে ডম তৃতীয় জোয়াউঁ কর্তৃক সমগ্র অঞ্চলটি ১২টি পৃথক বংশানুক্রমিক নেতৃত্বে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রথাটি সমস্যাপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের রাজা পুরো উপনিবেশ প্রশাসনের জন্য একজন গভর্নর-জেনারেল নিয়োগ দেন। পর্তুগিজরা কিছু আদিবাসী গোত্রকে নিজেদের দলে নেয়। অপরদিকে বাকিদেরকে তারা দাস হিসেবে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে। এছাড়াও কিছু কিছু গোত্রকে দীর্ঘ যুদ্ধে হারিয়ে ও রোগ বিস্তারের মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়। ইউরোপীয় রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় সেসকল আদিবাসীদের জানা ছিল না, তাই খুব সহজেই তাঁরা রোগাক্রান্ত হয়। ১৬শ শতকের মধ্যভাগে ঔপনিবেশিকেরা উত্তর-পূর্ব উপকূলের ভালো মাটি ও ক্রান্তীয় জলবায়ুর সুযোগ নিয়ে সেখানে চিনির প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে। সে সময় চিনি ছিল ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য। আন্তজার্তিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার  সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্তুগিজরা আফ্রিকান দাসদেরও ব্রাজিলে নিয়ে আসা শুরু করে।


ব্রাজিলীয় চিত্রশিল্পী ভিক্তর মিরিইলেসেরঅঙ্কিত ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ব্রাজিলের প্রথম খ্রিষ্ঠীয় গণ-নৈশভোজের চিত্র
ফরাসিদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে পর্তুগিজরা তাঁদের দখলকৃত ভূখণ্ড ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত করতে থাকে। ১৯৫৭ সালে তাঁরা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত রিউ দি জানেইরু ও ১৬১৫ সালে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাউঁ লুইসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে তাঁরা আমাজন অরণ্য অভিমূখে অভিযান শুরু করে ও ঐ অঞ্চলে অবস্থিত ব্রিটিশ ও ওলন্দাজ উপনিবেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। নিয়ন্ত্রণ লাভের পর পর্তুগিজরা অঞ্চলগুলোতে নিজেদের গ্রাম ও দুর্গ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকে আরও সুসংহত করে। ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের এ অভিযান সর্ব দক্ষিণে বিস্তৃত হয়। সেখানে রিও দে লা প্লাতা নদীর তীরে তাঁরা সাক্রামেন্তো শহরের গোড়াপত্তন করে, বর্তমানে যা উরুগুয়ের অংশ।
১৭ শতকের শেষভাগে ব্রাজিলের চিনি রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে, তবে ১৬৯০-এর দশকে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে বেশ কিছু স্বর্ণখনি আবিষ্কৃত হয়। পর্তুগিজ ভাষায় বান্দিরাঞ্চিস (Bandeirantes) নামে পরিচিত এই পর্তুগিজ স্কাউটরা বর্তমান ব্রাজিলের মাতু গ্রসো ও গোইয়াস অঞ্চলে স্বর্ণখনির সন্ধান পান। তৎকালীন সময়ে জায়গাটির নামকরণ করা হয় মিনাজ জেরাইস (বাংলা অর্থ ‘সাধারণ খনি’), যা বর্তমানে ব্রাজিলের একটি প্রদেশ। স্বর্ণখনি আবিস্কারের ফলে চিনি রপ্তানি কমে যাওয়া থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে পর্তুগিজ উপনিবেশ রক্ষা পায়। এছাড়াও স্বর্ণখনিতে কাজের উদ্দেশ্যে সমগ্র ব্রাজিলসহ পর্তুগাল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী এ অঞ্চলে পাড়ি জমায়। এই সময় দেশের অভ্যন্তরভাগে বসতি স্থাপিত হয় এবং অর্থনীতি ও জনসংখ্যার প্রধান কেন্দ্র দেশের উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে স্থানান্তরিত হয়।
স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকগণ এ অঞ্চলে পর্তুগিজ উপনিবেশের সম্প্রসারণে বাঁধা প্রদান করে আসছিল। ১৪৯৪ সালে স্পেন অধিকৃত ভূখণ্ডে পর্তুগিজদের উপনিবেশ সম্প্রসারণ রোধে উভয়পক্ষের মধ্যে তোর্দিজিলাস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৭ সালে স্পেনীয়রা পর্তুগিজ অধিকৃত বান্দা ওরিয়েন্টাল নিজেদের দখলে আনতে সমর্থ হয়। যদিও পরবর্তীকালে এ বিজয় নিষ্ফল বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ ঐ বছরেই পর্তুগিজ ও স্পেনীয় সাম্রাজ্যের ভেতর প্রথম সান লিদিফোনসো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুসারে এ অঞ্চলের পর্তুগিজদের সম্প্রসারিত সকল অঞ্চলে পর্তুগালের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়। বর্তমান ব্রাজিলের সীমানাও মূলত এই সম্প্রসারিত ভূখণ্ডের সীমানার প্রতি লক্ষ্য রেখেই নির্ধারিত হয়েছে।

৮০৮ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ রাজ পরিবার, পর্তুগালে অনুপ্রবেশকৃত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীকে তাড়ানোর চেষ্টা করছিল। সে সময় নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী পর্তুগালসহ মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ স্থানেই নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিল। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে রাজ পরিবার নিজেদেরকে ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরুতে সরিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে এটি সম্পূর্ণ পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৮১৫ সালে ডম ষষ্ঠ জোয়াউঁ, তাঁর অকর্মক্ষম মায়ের পক্ষে রিজেন্ট হিসেবে ব্রাজিলকে পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে উন্নীত করে পর্তুগালের সাথে একত্রিত একটি সার্বভৌম যুক্তরাজ্যীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম হয় ইউনাইটেড কিংডম অফ পর্তুগাল, ব্রাজিল, অ্যান্ড দি আলগ্রাভিস ১৮০৯ সালে পর্তুগিজরা ফরাসি গায়ানা দখল করে (যদিও পরবর্তীকালে ১৮১৭ সালে তা ফ্রান্সের কাছে ফিরিয়ে দেয়)। এছাড়ারও ১৮১৬ সালে ইস্টার্ন স্ট্রিপও তাঁরা নিজেদের দখলে নেয়, ও কিসপ্লাতিনা নামে নামকরণ করে। কিন্তু ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিল এ অঞ্চলটির ওপর তার নিয়ন্ত্রণ হারায়, এবং অঞ্চলটিতে উরুগুয়ে নামের একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়।







No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates