Social Icons

Friday, June 30, 2017

ফেসবুকে সক্রিয় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি ছাত্রলীগ ক্যাডার

২০০৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র বড়ুয়া ওরফে সৌম্য।

তাজ উদ্দিন বাবু নামে নগরীর আসকার দিঘির পাড় এলাকায় এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে ২০১৬ সালের ১ জুন আদালত তাকে (সৌম্যকে) মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। এ হত্যা মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে একটি চাঁদাবাজি মামলাও। অথচ ২০১৪ সালের নভেম্বরে তিনি ফেসবুক আইডি চালু করেছেন।

এরপর থেকে নিজের অসংখ্য ছবি ফেসবুকে লোড করেছেন। এমনকি হাতকড়া পরা অবস্থায় চা পান এবং মোবাইলে কথা বলা অবস্থায়ও তার ছবি রয়েছে।

জানা গেছে, তার ফেসবুকে থাকা সব ছবিই আদালতে মামলায় হাজিরা দিতে এসেই তোলা হয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামির ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে আদালত অঙ্গনসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন ৪৮২ নম্বর আলকরণ এলাকার সন্তোষ বড়ুয়া ছেলে সৌমিত্র।

আদালত সূত্র জানায়, তাজ উদ্দিন বাবু নামে এক ব্যক্তির বোনের সঙ্গে সৌমিত্র বড়ুয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে তাজ উদ্দিন তার বোনকে সৌমিত্রকে এড়িয়ে চলতে চাপ দেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সৌমিত্র বড়ুয়া ২০০৫ সালের ২৭ মার্চ তাজ উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার পর তাজ উদ্দিনের লাশ অভয় মিত্র ঘাটে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়ার সময় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে লাশসহ সৌমিত্রকে ধরে পুলিশে দেয়।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলার বিচার কাজ শেষ হতে লাগে প্রায় ১১ বছর পর। সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১ জুন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলামের আদালত সৌমিত্র বড়ুয়াকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।

২০০৫ সাল থেকে কারাগারে বন্দি আছেন সৌমিত্র বড়ুয়া। অথচ ফেসবুক আইডি খুলেছেন ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এরপর তিনি যতবার কারাগারে মামলায় হাজিরা দিতে এসেছেন সব সময় তিনি ফেসবুকে ছবি আপলোড করেছেন।

সর্বশেষ তিনি একটি চাঁদাবাজি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে আসেন ২৫ মে। ওই দিন তিনি চারটি ছবি তার ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেছেন। তার ফেসবুক আইডিতে ছবির পাশাপাশি লোড করেছেন নিজের হাতের লেখা অসংখ্য কবিতা। রয়েছে অসংখ্য স্ট্যাটাসও।

তার ফেসবুকের হাতে লেখা আপলোড করা একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন-‘কারাগার কি সংশোধনাগার? না মৃত্যুলোক...?’ তার আপলোড করা ছবিতে অনেকেই লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট করেছেন।

তার আপলোড করা ছবির নিচে কেউ কমেন্ট করেছেন, ‘কোর্টে আসলে মেসেজ দিস।’ কেউ লিখেছেন, ‘ফোন নাম্বার দে আমি কোর্টে দেখা করতে আসব।’ কেউ জানতে চেয়েছেন, ‘জেলখানায় চলে গেছেন কি না? তোর কোর্ট আগামী কত তারিখ?’ একজন লিখেছেন, ‘আপনাকে বাইরের জগতে দেখতে চাই। বন্দি অবস্থায় না।’ কেউ কেউ লিখেছেন, ‘কেমন আছেন। আজ কি কোর্টে এসেছিলেন। আপনি কত নাম্বারে থাকেন।’ ‘একজন লিখেছেন, ‘দাদা আপনাকে খুব মিস করছি।’  

হত্যা মামলায় সৌমিত্রের ফাঁসি হলেও চান্দগাঁও থানার অন্য একটি চাঁদাবাজির মামলায় তাকে হাজিরা দিতে প্রত্যেক তারিখে যেতে হয় আদালতে। এ সুযোগে আদালতের হাজতখানার বারান্দায় বসে সৌমিত্র মোবাইল ও ফেসবুক ব্যবহার করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে কোর্ট পুলিশ তার কাছ থেকে নেয় ‘আর্থিক সুবিধা’।

নিহত তাজ উদ্দিন বাবুর বড় ভাই এবং হত্যা মামলার বাদী জাহাঙ্গীর উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, ‘তাজ উদ্দিন বাবু হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয় সৌমিত্র বড়ুয়াকে। ফাঁসির এ আসামি এখন ফেসবুক ব্যবহার করছে। আদালতে আসা-যাওয়ার ছবি আপলোড করছে। এটা কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাহাঙ্গীর উদ্দীন। চাঁদাবাজির মামলায় হাজিরা দিতে ২৫ মে কারাগার থেকে আদালতে আসেন সৌমিত্র। সেদিনও তিনি আদালত ভবনে চারটি ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেছেন।’   

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, সৌমিত্র বড়ুয়ার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলায় ফাঁসি হয়েছে। আপিল করার পর সেই মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। চান্দগাঁও থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামি কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে রয়েছে। চাঁদাবাজির মামলায় হাজিরা দিতে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী যুগান্তরকে জানান, ‘আদালতে এসে কোনো আসামির ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। হাতকড়া পরা ওই ছবি কারাগারে তুলেছে কি না বলতে পারি না।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মজিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ‘কারাগারে কোনো বন্দি মোবাইল ব্যবহার করে না এবং করতে পারে না। আদালতে গিয়ে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে সে ক্ষেত্রে  আমাদের করার কিছুই থাকে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন দেখবে।’

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates