কেমন আছেন ব্রাজিলের ফেইরা ব্যবসা করা বাংলাদেশিরা ? দূরত্ব বা ভৌগোলিক দিক দিয়ে আমেরিকার কাছাকাছি দেশ ব্রাজিল । ভাষা এবং সংস্কৃতিতে আমেরিকার থেকে অনেকটাই আলাদা।
ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো মানুষ চেনে ফুটবলের বদৌলতে। অনেক বিখ্যাত ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে লাতিন আমেরিকা।
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু,বলিভিয়া, উরুগুয়ে , চিলি, ভেনিজুয়েলা সবগুলোই লাতিন আমেরিকার দেশ। ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি ব্রাজিল। আমাদের বাংলাদেশেও ব্রাজিলের ভক্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়। অবাক বিষয় হলেও সত্য, প্রায় ৩ মিলিয়ন তথা ৩০ লাখ লেবানিজের বসবাস ব্রাজিলে। মূলতঃ তাদের কল্যানেই শিল্পনগরী পারানাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রির এক বিশাল জগত। এক হাজারের ওপর বাংলাদেশি কর্মরত আছেন পারানা অঞ্চলে । বাংলাদেশিদের কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম ও সততার প্রশংসা করেছেন পারানা অঞ্চলের বেশ কয়েকজন মালিক।
অপর দিকে ব্রাজিলের সাও পাওল শহরে শহরে বসবাস করেন অনেক বাংলাদেশী যাদের মধ্যে অনেকেই ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে ফেইরা ব্যবসা করছেন। এক কথায় মেলায় ছোট ছোট বক্স বসিয়ে বিভিন্ন আইটেমের ব্যবসা করছেন।
বলা চলে এই ব্যবসা করে আজ প্রায় সবাই স্বাবলম্বী ।এই সপ্তাহে ব্রাজিলের পারানা সিটির রাজধানী কুরিচিবা তে এসেছিলেন এই রকম কিছু বেবসায়ি । তার মধ্যে আমরা কথা বলেছি ২ জনের সাথে। একজন হল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ খাইরুল হাসান নীরব । তিনি ব্রাজিলে এসেছেন ২০১২ সালে ।কিছু দিন হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে এখন সে ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে ফেইরার আয়োজক হিসেবে কাজ করছেন। সেই সাথে একজন সফল ব্যবসায়ী।
ওয়ার্ল্ড নিউজ বি বি -- কেমন আছেন ? কিভাবে ব্রাজিলে এসেছেন ? আপনার ব্রাজিলের জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন ।
খাইরুল হাসান নীরব --- আলহামদুলিলহ অনেক ভাল আছি। আমি মুলত ২০১২ সালের শেষের দিকে ব্রাজিল এসেছি। বাংলাদেশ থেকে দুবাই, আর্জেন্টিনা , বলিভিয়া হয়ে ব্রাজিল আসা।
ব্রাজিলে আসার পরে কিছুটা সমস্যা হলেও কিছু দিন পর সব ঠিক হয়ে যায় । আর সমস্যা হয়ারি কথা কেননা আমাদের ভাষা আর ব্রাজিলের ভাষা অনেক বেবধান ।আমি এখন ব্রাজিলের বড় বড় ফেইরা আয়োজক দের সাথে পাটনারে কাজ করছি।পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে তাদের সমস্ত চাহিদা পুরন করছি।
ওয়ার্ল্ড নিউজ বি বি -- ব্রাজিলে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশী আছেন তাদের মধ্যে ২/১ জন বলে ব্রাজিলে কাজ নাই। আপনি কি মনে করেন ?
খাইরুল হাসান নীরব --- ভাই এক গাছের সব ফল এক রকমের হয় না ।কিছু না কিছু পরিবর্তন থাকেই ।
আমার জানা মতে আর দেখা যারা ব্রাজিলে ফেইরা করেন তারা মাসে কমপক্ষে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা ইনকাম করেন। এমনও বাংলাদেশী ভাই আছেন যারা মাসে ৫/১০ লক্ষ টাকাও ইনকাম করেন।
আর শুধু ব্রাজিল না সারা পৃথিবীতেই অর্থ নৈতিক মন্ধা তাই সব দেশেই চাকুরির বেতন কম। ব্রাজিলে ব্যবসা করতে অনেক টাকা মূলধন দরকার হয়না। শুধু মেধা থাকলেই হয়। সাও পাওল তে অনেক বাংলাদেশি সফল ব্যবসায়ী রয়েছেন। যাদের দেখলেই বুঝতে পারবেন।
আমরা এই নিয়ে কথা বলছি সিলেট এর ব্রাজিল প্রবাসী মোঃ সামসুজামান এর সাথে ।তার মুখের হুবহু কথা আমরা তুলে ধরলাম।
মোঃ সামসুজামান ----- ভাই আমি ১৬ হাজার রিয়েস নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি ।এর মাঝে ১০ হাজার রিয়েস এর মাল একবার পুলিশ নিয়ে গেছে । কিন্তু আমিতো লক্ষ লক্ষ রিয়েস রুজি করেছি ।দেশে ঘর করছি। বিয়ে করেছি । মাসে আমার ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা রুজি। পুলিশ এর চিন্তা করে ব্যবসা করা যায় ? আমি অনেক ভাল আছি। আমাদের সিলেটের অনেকেই ব্রাজিলে সফল ব্যবসায়ী । আমি বলবো যারা ব্রাজিলে এখনও চাকুরি করেন তারা যেন তা ছেরে এসে ব্যবসা করেন ।আসা করি তারাও আমার মত এক জন ভাল সফল ব্যবসায়ী হবেন এক দিন।
চাকুরির জগত থেকে দূরে থেকে যারা ব্যবসায়ির খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তারাই খুব ভালো আছেন অর্থনৈতিকভাবে। নিয়ম অনুয়ায়ী ব্রাজিলিয়ান প্রভাবশালী লোকজন মেলা বা বাজারের ইজারা নিয়ে থাকে প্রশাসনের কাছ থেকে এবং তাদের কাছ থেকেই ৩ থেকে ৪ দিনের জন্য বিশেষ মূল্যে পোস্ট কিনে নিতে হয় বাংলাদেশিদের। আলাদা করে সরকারকে টেক্স দিতে হয় না
ব্রাজিলে দূর দূরান্তের মেলায় যেসব বাংলাদেশিদের ব্যবসা জমজমাট, তাদের প্রায় সবারই আইটেম দুই নম্বর মাল, অর্থাৎ নাইক-এ্যাডিডাস সহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল প্রোডাকশনের রকমারী পন্যসামগ্রী। দেখতে এবং ব্যবহারে অরিজিনাল পণ্যের মতো হওয়াতে রীতিমতো ‘হট বিজনেস’ এই সেক্টরে, যার টোটাল প্রোডাকশনও ব্রাজিলেই। চাইনিজদের স্টাইলে বাংলাদেশিরাও কয়েকটি ফ্লোরসহ ভবন ভাড়া নিয়ে দিনরাত প্রোডাকশনে যায় এ ক্ষেত্রে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে হয় যথারীতি, তবে মেলায় ১ বার যদি মাল পুলিশ নিয়ে যায়, তা পরের ২ মেলাতেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।
পার্টনারশিপে ব্যবসা করলে চোখ বন্ধ করেই মাস শেষে আসে মিনিমাম ১ হাজার ইউএস ডলার আর অংশীদারিত্ব বাদ দিয়ে চোখ-কান খোলা রেখে একক ব্যবসায় মাসে ১০ হাজার ইউএস ডলারও খুব কঠিন নয়। সাও পাওলোর ডাউনটাউনে ‘ব্রাইস’ এলাকাটি যেন ‘বুড়িগঙ্গার ওপাড় জিঞ্জিরা’। এককথায় ‘ক্রাইম জোন’। সব হয় এখানে, পাওয়া যায় সব কিছুই। ব্রাইস-এর অন্ধকার জগতে অন্যান্য দেশিদের সাথে অবাধ বিচরণ বেশ কিছু বাংলাদেশির। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্থানীয় পুলিশের একটি অংশ নিয়মিত কমিশন পেয়ে থাকে সাও পাওলোর ‘জিঞ্জিরা’ খ্যাত ‘ব্রাইস’ এরিয়া থেকে।
No comments:
Post a Comment