ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গত আট বছরে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন ৯৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশী। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন তারা। অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। ইউরোপে অনুপ্রবেশকারী এসব নাগরিককে ফিরিয়ে আনার চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। তা না হলে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করার কথা জানিয়েছে ইইউ।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী প্রায় ৯৩ হাজার বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে দেবার বিষয়ে সময়সীমা বেঁধে দিতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ-সংক্রান্ত একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসপিওতে সময়সীমা (টাইম লাইন) প্রস্তাব করেছে ইইউ। আর এ নিয়ে পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অবৈধ বা অনিয়মিত বাংলাদেশীদের ফেরানোর বিষয়ে ঢাকার কোনো আপত্তি নেই। এ-সংক্রান্ত এসওপি নিয়েও বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ইতিবাচক।
কিন্তু ভিন্নমত রয়েছে এসওপির কিছু ধারা এবং ইইউ যেভাবে সময়সীমা বেঁধে দিতে চায় তা নিয়ে। ইউরোপ থেকে অনিয়মিত বাংলাদেশীদের ফেরানো-সংক্রান্ত এসওপির যে খসড়া ইইউ প্রস্তাব করেছে, সেখানে সংশোধনীর সুপারিশ করে পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
তাতে ‘অনিয়মিত বাংলাদেশীদের অবশ্য ফেরত আনা হবে, এ নিয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে’ জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা অনুসরণ করেই তাদের ফেরানো হবে।
এজন্য সবার আগে ওই ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ব্যাপক যাচাই-বাছাই (ভেরিফিকেশন) করতে চায় ঢাকা। এ কাজে যেটুকু সময় প্রয়োজন, তা-ই নিতে চায় বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সুচারুভাবে সম্পন্ন করতেই জোর দিচ্ছে ঢাকা। এ কাজে কোনো টাইম ফ্রেম বা সময়সীমা বেঁধে দেয়া সমীচীন হবে না বলে মনে করে বাংলাদেশ।
এ নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক পরামর্শ বৈঠক হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুনের সঙ্গে। বৈঠকে ঢাকার পাল্টা প্রস্তাব এবং সংশোধনীর সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ইইউ দূত শিগগিরই ব্রাসেলস যাচ্ছেন। সেখানে ১২ জুলাই বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের বৈঠক হবে। বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সচিব পর্যায়ের ওই বৈঠকে অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরতের আলোচনা ছাড়াও উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), জলবায়ু পরিবর্তন, এশিয়া-ইউরোপ বৈঠক (আসেম) নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে, ইউরোপে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) পরিসংখ্যান অধিদপ্তর ইউরোস্ট্যাট। সংস্থাটির তথ্য বলছে, ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করেন ২০১৫ সালে, ২১ হাজার ৪৬০ জন। এরপর সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ করেন ২০১২ সালে। ওই বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পাড়ি দেন ১৫ হাজার ৩৬০ জন বাংলাদেশী। ২০১৪ সালেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী ইউরোপে প্রবেশ করেন। ওই বছর সংখ্যাটি ছিল ১০ হাজার ১৩৫। এর বাইরে ২০০৮ সালে ৭ হাজার ৮৫, ২০০৯ সালে ৮ হাজার ৮৭০, ২০১০ সালে ৯ হাজার ৭৭৫, ২০১১ সালে ১১ হাজার ২৬০ ও ২০১৩ সালে ৯ হাজার ৪৯০ জন বাংলাদেশী ইইউভুক্ত দেশগুলোয় অনুপ্রবেশ করেন। ইউরোপের দেশগুলোয় প্রবেশের পর বিভিন্ন সময় তারা আটকও হয়েছেন।
এর আগে গত মাসের শেষ দিকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, সেসব দেশের নাগরিকদের জন্য ইইউর ভিসা সীমিত করা হবে। ইউরোপে বাড়তে থাকা শরণার্থীর চাপ সামলাতেই এ উদ্যোগ বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় গত আট বছরে ওইসব বাংলাদেশী পাড়ি দিয়েছেন। তাদের অনেকে শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন।
কেউ কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। অনেক দিন ধরেই তাদের ফিরিয়ে আনার চাপে রয়েছে ঢাকা। এসব বাংলাদেশীর ফিরিয়ে না আনলে বাংলাদেশীদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানানো হয়েছে।
No comments:
Post a Comment