Wednesday, July 5, 2017
দীর্ঘ সময়ের জন্য জলাবদ্ধতার আশঙ্কা
ভারী বর্ষণে ও ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়িয়া ঢলের পানিতে সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তীরে বন্যার অবনতি হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এ দিকে সারা দেশে কিছুদিন বিরতির পর আবারো ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টার বর্ষণে নিচু এলাকায় পানি উঠে গেছে। জলাশয়গুলো প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য জলাবদ্ধতা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী শনিবার থেকেই বৃষ্টি কিছুটা হ্রাস পাবে। কিন্তু দু’দিন বিরতি দিয়ে আগামী সোমবার থেকে আবারো মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ শুরু হতে পারে। মওসুমি বায়ু বাংলাদেশের আকাশে বেশ সক্রিয়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। মওসুমি বায়ুর অক্ষ বর্তমানের বাংলাদেশের মধ্যভাগ অতিক্রম করে যাচ্ছে। এসব কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশের সর্বত্রই মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে ২৭১ মিলিমিটার। বাংলাদেশের আকাশে মওসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় রয়েছে বলে প্রবল বর্ষণে দেশের সর্বত্র জমে গেছে পানি। অপর দিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মওসুমি বায়ু মাঝারি থেকে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। ফলে আরো দু’দিন জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যেতে থাকবে এবং মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে ভারী বর্ষণের পানি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে আসছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী হয়ে এ পানি সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। অপেক্ষাকৃত অগভীর হওয়ার কারণে এ দুই নদী বেশি পানি ধারণ করতে পারে না। ফলে সহজেই এ দুই নদীর তীরে উপচে পড়ে। এ মুহূর্তে দেশের বাইরের পানি ও অভ্যন্তরীণ বর্ষণে সুরমা ও কুশিয়ার নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যাপরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে, এ দুই নদীর পানি বর্তমানে স্থিতিশীল থাকলেও আবারো বাড়বে এবং বন্যার অবনতি ঘটবে। অপর দিকে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এ এলাকার অন্যান্য উপনদীর পানি এসে যমুনায় পড়ছে। যমুনা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে বাহাদুরাবাদ ঘাটে ২২ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ৩৭ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ৫৩ সেন্টিমিটার এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্যা বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার, সুরমা দিরাই পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা শেরপুর-সিলেট সীমান্তে ২২ সেন্টিমিটার, সুরমা শেওলা পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জ সীমান্তে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত সুরমা নদী কানাইঘাটে ৭২ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা অমলশীদে ৭৮ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৬৮ সেন্টিমিটার, শেরপুর-সিলেট সীমান্ত পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার, হালদা নদী নারায়নহাটে ১০ সেন্টিমিটার, মাতামুহুরী নদী চিড়িঙ্গায় বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা নদীর পানি কয়েক দিন যাবৎ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে দেশীয় পানি প্রবাহের সাথে সীমান্তের ওপারের পানি এসে যোগ হচ্ছে। ফলে এ দুই নদীর পানি আরো বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া গঙ্গা-পদ্মায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তি পানি যোগ হবে। আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে ২৭১ মিলিমিটার। টেকনাফে ২২৩ মিলিমিটার, কুতুবদিয়ায় ১৯৭ মিলিমিটার, ফেনীতে ১৪১ মিলিমিটার, পটুয়াখালীতে ১১৩ মিলিমিটার, খুলনায় ৬৪ মিলিমিটার, গোপালগঞ্জে ৬৪ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ৮০, চাঁদপুরে ৬৭ মিলিমিটার, বগুড়ায় ৭৮ মিলিমিটার, মংলায় ৭৪ মিলিমিটার, খেপুপাড়ায় ৪৬ মিলিমিটার, মাদারীপুরে ৬৪ মিলিমিটার, ফরিদপুরে ৫৪, ঢাকায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে গতকাল বুধবার বাতাসে এত বেশি আর্দ্রতা ছিল যে যথেষ্ট ঠাণ্ডা অনুভূত হতে থাকে সকাল থেকে। খুব কম বাসা-বাড়িতে বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরেছে গতকাল। আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে সারাদিনই বাসার ফ্লোর ঘামতে শুরু করে। সারাদিন সূর্যের আলো না থাকায় কাপড় শুকানো যায়নি। শুকনো কাপড়-চোপড়গুলো বেশ ভেজা ভেজা মনে হয়েছে, পরিধান করে আরাম পাওয়া যায়নি ভেজা ভেজা অনুভূতি লাগায়। গতকালে বিকেলে ৮৪ শতাংশ সকাল ৯টায় রাজধানীতে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment