Social Icons

Friday, July 7, 2017

চিকুনগুনিয়া : আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত শব্দ চিকুনগুনিয়া। সাধারণত মশার কামড়ে মানব শরীরে চিকুনগুনিয়া নামক ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে প্রচণ্ড জ্বর, শরীর ব্যথাসহ আরও কিছু উপসর্গ প্রকাশ পায় যা চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ নামে পরিচিত।

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ প্রথম নির্ণয় হয় ১৯৫২ সালে ম্যাকন্ডি নামক জনগোষ্ঠীর জ্বরাক্রান্ত মানুষের সিরাম বা রক্তরসে। এই জনগোষ্ঠীর প্রধান বসবাস ক্ষেত্র মোজাম্বিক ও তানজানিয়ার সীমান্তবর্তী একটি মালভূমিতে। চিকুনগুনিয়া শব্দটি ম্যাকন্ডি শব্দ ‘বেঁকে যাওয়া/to become contorted’ হতে উৎপত্তি লাভ করেছে।

চিকুনগুনিয়া হলে শরীরের বিভিন্ন সংযোগস্থলে প্রচণ্ড ব্যথা হয় ফলে তা বাঁকানো/সোজা করা কঠিন হয়ে পড়ে, এমন বাস্তবতায় চিকুনগুনিয়া শব্দের আবির্ভাব। প্রাথমিকভাবে চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে তা অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

২০০৫ সালে ভারতে এই ভাইরাস ভালোভাবে তার উপস্থিতি জানান দিয়েছে, আর ২০০৭ সালে ইতালি, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া এবং ক্যারিবীয় দ্বীপাঞ্চলের লোকজন এই ভাইরাসের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে।

২০১৫ সালে আমেরিকাবাসী এই রোগের ভয়াবহতা টের পায়।

২০১৭ সালে পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এ রোগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যমতে বিশ্বের ৬০টি দেশে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় এলার্জি ও সংক্রামক ব্যাধি ইন্সটিটিউট চিকুনগুনিয়াকে সি ক্যাটাগরির জীবাণু হিসেবে নিবন্ধিত করেছে।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ

সাধারণত আক্রান্ত মশকীর কামড়ের ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সময় ১২ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। সবার ক্ষেত্রে একই লক্ষণ প্রকাশ পাবে এমনটি না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়।

* প্রচণ্ড জ্বর (৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০২.২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি)

* শরীরের সংযোগস্থল সমূহে ব্যথা

* সংযোগস্থল ফুলে যাওয়া

* মাংসপেশিতে ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়া

* মাথাব্যথা

* শরীরে ফুসকুড়ি/র‌্যাশ

* বমি বমি ভাব

* অরুচি

* সাধারণ দুর্বলতা প্রভৃতি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ডেঙ্গুজ্বরে শরীরের সংযোগস্থলগুলোতে ব্যথার মাত্রা মৃদু থেকে মাঝারি হয় আর চিকুনগুনিয়াতে এই মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করে। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়াতে মাথাব্যথা মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার হয়ে থাকে আর ডেঙ্গুতে তা হয় তীব্রমাত্রার। ডেঙ্গুতে চোখের পেছনের দিকে বেশ ব্যথা অনুভূত হলেও চিকুনগুনিয়ায় তা এতটা প্রকট হয় না।

চিকুনগুনিয়া নির্ণয়

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় সম্ভব। এনজাইম লিংকড ইমিউনোসরবেন্ট এসে (এলিসা)-র মাধ্যমে এন্টি-চিকুনগুনিয়া এন্টিবডি (IgM এবং IgG)-র উপস্থিতি পরিমাপ করে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

চিকিৎসা

চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই বললেই চলে তবে উপসর্গ দেখে তার বিপরীতে চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। যেমন- সংযোগ স্থলের ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক (এসপিরিন বা কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ না দেয়াই ভালো), জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে। তবে চিকিৎসার জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে, নিজে থেকে কোনো চিকিৎসা না দেয়াই ভালো। অদ্যবধি চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি তাই প্রতিরোধের সুযোগ খুব সীমিত। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং বেশি পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার খেলে আরোগ্য লাভের সময় কমে আসে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশের ৭ দিনের মধ্যে চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের জ্বর ও শরীরের সংযোগস্থল সমূহে ব্যথা কমতে শুরু করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শরীরের সংযোগস্থল সমূহে ব্যথা পুরোপুরি কমতে মাসাধিককাল সময় লাগতে পারে।

প্রতিরোধ

দুই ধরনের মশকী চিকুনগুনিয়া ছড়ায়-এদের একটি হল এডিস এইজিপটি এবং অন্যটি হল এডিস এলবোপিকটাস (এশিয়ান টাইগার মশা)। এই মশকীরাই ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্যও দায়ী। চিকুনগুনিয়া সরবরাহকারী মশকী শুধু রাতে কামড়ায় এমনটি নয়, সকালে ও শেষ বিকালেও এরা বেশ সরব থাকে। তাই সব সময়ই এদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে হবে। রাতে মশারি টানানোর পাশাপাশি দিনের বেলা প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক কয়েল জ্বালানো যেতে পারে। কোন নির্দিষ্ট এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব হলে ওই এলাকায় বিচরণ কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে চিকুনগুনিয়া কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। সতকর্তামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মশকের বংশবিস্তার রোধে ভূমিকা রাখতে হবে।

চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুর আশংকা নেই বললেও চলে। ডেঙ্গুর সঠিক চিকিৎসা না করালে মৃত্যুহার শতকরা ৫০ ভাগ (সর্বোচ্চ) হলেও চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে এই হার একেবারেই কম এবং অনেকের মতে এই রোগে (চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ) মৃত্যুহার শতকরা ০.১ ভাগ অর্থাৎ প্রতি হাজারে একজন। তবে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর বয়স ২ বছরের নিচে বা ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে অথবা অন্যান্য অসুখের উপস্থিতি থাকলে কোনো অবস্থাতেই তা সাধারণভাবে নেয়া যাবে না, দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক : ফার্মাসিস্ট

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates