জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্টে অর্থ পাঠিয়েছিলেন ওই সময়ের কুয়েতের আমির। বিষয়টি আদালতকে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী।
রাজধানীর বকশীবাজারে ঢাকা আলীয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান খানের আদালতকে আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে তার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী এ কথা জানান।
আজ সপ্তম দিনের মতো এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলে। এর আগে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন তার আইনজীবী রেজাক খান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। গতকালও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এ জে মোহাম্মদ আলী।
আজ মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, তিনি ঢাকায় অবস্থিত কুয়েত অ্যাম্বেসির মাধ্যমে এ ট্রাস্টে পাঠানো টাকার ব্যাপারে কুয়েতের আমিরের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন। তারাও এর জবাব দিয়েছেন। কুয়েতের আমির জানিয়েছেন, এ অর্থ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে পাঠানো হয়েছে। এটি একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষার্থে এ টাকা পাঠানো হয়েছে।
এ সময় আদালত এ বক্তব্যের ডকুমেন্ট চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাম্বেসি থেকে পাঠানো চিঠি আদালতে উপস্থাপন করেন।
মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, ৭ জন সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তা মিলে জাল নথি তৈরি করে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এসব ভুয়া কাগজপত্র ও জাল নথিতে কারো সাক্ষর নেই। এসব নথিতে ওভাররাইটিং ও ঘষামাজা করা আছে। এ ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় করা ডকুমেন্টে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো স্বাক্ষর বা অনুমোদন নেই।
এ জে মোহাম্মদ আলীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় আদালত আগামী ১০ ও ১১ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ ডিসেম্বর তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে খালেদার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করেন। ২০ ডিসেম্বর খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন তার আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান। এ দিন শেষ না হওয়ায় ২১ ডিসেম্বর পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন আদালত। ২১ ডিসেম্বর খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থান শেষ না হওয়ায় ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। ওই সময়ের মধ্যে যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে জন্য ৩ ও ৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
No comments:
Post a Comment