টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকার একটি‘ল’ কলেজের শিক্ষার্থী রূপা খাতুনকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাইয়ুম খান সিদ্দিকীসহ আরও তিনজন রবিবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য দুই জন হলেন রূপা যে বাসে ধর্ষনের শিকার হয়েছে সেই পরিবহনের মালিক আমেনা খাতুনের স্বামী মো. আখতারুজ্জামান এবং ছেলে সাব্বির হোসেন।
টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার সাক্ষ্য প্রদান করেন। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন ও শামীম চৌধুরী তাকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত জেরা করেন। পরে আদালত এক ঘণ্টার জন্য মুলতবি করা হয়। পরে আবার বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাকে জেরা করা হয়। আদালতের সময় শেষ হয়ে গেলে আগামি মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) পুনরায় জেরার দিন ধার্য করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার আগে বাসের মালিক আমেনা খাতুনের স্বামী মো. আখতারুজ্জামান ও ছেলে সাব্বির হোসেন সাক্ষী প্রদান করেন। আমেনা খাতুন ওই পরিবহনের চালক, সুপারভাইজারসহ পাঁচ শ্রমিকের বিষয়ে যে প্রত্যায়নপত্র দিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান ও সাব্বির তা সত্যায়িত করেন। উল্লেখ্য, এই ঘটনার পর ওই পরিবহনের মালিক আমেনা খাতুন মৃত্যুবরণ করেছেন।
এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার ২৭ জনের সাক্ষী গ্রহণ হলো। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ কৌশুলী একেএম নাছিমুল আক্তার জানান, আগামী তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষী গ্রহণের মধ্য দিয়েই এই মামলার সাক্ষী গ্রহণ পর্ব শেষ হবে। এর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৩ জানুয়ারি মামলার বাদী মধুপুরের অরণখোলা ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূুপা খাতুনকে চলন্ত বাসে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্ষণ করে। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ ওই রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদি হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
রূপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ওই পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫) এবং সহকারি শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে(১৯) গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছে তারা রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। ২৯ আগস্ট বাসের তিন সহকারি শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং ৩০ আগস্ট চালক হাবিবুর এবং সুপারভাইজার সফর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা সবাই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে আছে। ৩১ আগস্ট রূপার লাশ উত্তোলন করে তার ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে সিরাজগঞ্জের তাঁরাশ উপজেলার নিজ গ্রাম আসানবাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
No comments:
Post a Comment