কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। সেনাবাহিনীকে যে কোনো হামলার ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরই মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাশ্মীরে জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের নির্দেশনা দেয়।
শনিবার এনডিটিভি জানায়, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনার পর রাতেই বিমানে ১০ সহস াধিক সেনা সদস্যকে শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর অভিযান চালিয়ে কয়েকজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাসহ দেড় শতাধিক কাশ্মীরিকে আটক করা হয়েছে। ভারতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান- এমন তথ্য প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর সেনা মোতায়েনের এ খবর সামনে এলো।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, আমাদের সংগ্রাম কাশ্মীরিদের জন্য, তাদের বিরুদ্ধে নয়। কাশ্মীরে শুক্রবার রাতেই অতিরিক্ত ১০০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী পাঠায় ভারত। আধা সামরিক বাহিনীর একটি কোম্পানিতে সাধারণত ৮০-১৫০ জন সেনা থাকেন। এ হিসাবে সৈন্যসংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার। যার মধ্যে রয়েছে সিআরপিএফের ৪৫টি কোম্পানি, সীমান্তরক্ষীর ৩৫ এবং সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) ও ইন্দো-তিব্বত সীমা পুলিশের (আইটিবিপি) ১০টি কোম্পানি। পুলিশ এ অভিযানকে রুটিন তল্লাশি বলে জানিয়েছে। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ), তেহরিক-ই-হুরিয়ত এবং তার শাখা সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বড় অভিযান।
রাতে শ্রীনগরের বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেফতার করা জেকেএলএফ নেতা ইয়াসিন মালিককে। এরপর হানা দেয়া হয় রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বাড়ি ও ডেরায়। জামায়াতের নেতা আবদুল হামিদ ফায়াজ ও সংগঠনের মুখপাত্র আইনজীবী জাহিদ আলিকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে আটক করা হয়। জামায়াতকে জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল মোজাহিদিনের রাজনৈতিক শাখা বলে মনে করে ভারত। আটক করা হয়েছে জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম কাদির লোন, ইসলামাবাদের নেতা আবদুর রউফ, পহেলগাঁও নেতা মুদাসির আহমেদ, দিলগাঁওয়ের বখতিয়ার আহমেদ, ত্রালের মহম্মদ হায়াত, চাদুরার বিলাল আহমেদ, চক সাংরানের মোহাম্মদ দারসহ আরও অনেককে।
গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি নিরাপত্তা বাহিনীর হানার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব। তাদের দাবি, ৩৫(এ) ধারা নিয়ে এখন পর্যন্ত রায় শোনায়নি সুপ্রিমকোর্ট। তার আগেই গণগ্রেফতারি শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিশ্চয়ই এর পেছনে অন্য অভিসন্ধি রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের অনুপস্থিতিতে ওই ধারাটিকে ইচ্ছামতো বিকৃত করতে পারে।
১৯৫৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের নির্দেশে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ ধারায় ৩৫(এ) অনুচ্ছেদটি যোগ করা হয়। এর আওতায় কারা জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী নাগরিক বিবেচিত হবেন, তার দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় রাজ্য বিধানসভার হাতেই। এ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। সেটি বাতিল করতে ২০১৪ সালে শীর্ষ আদালতে পাঁচটি আবেদন জমা পড়ে।
গত বুধবার এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের রায় শোনানোর কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়। সোমবার পরবর্তী শুনানি স্থির হয়েছে। তার আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কাশ্মীরে সেনা অভিযান শুরু হল। পুলওয়ামায় হামলার পর কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে গোটা দেশ থেকে হিংসার খবর ছড়ানোর পর এই প্রথমবার মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী। রাজস্থানের টঙ্ক শহরে এক সভায় শনিবার মোদি কাশ্মীরিদের ওপর হামলার বিরোধিতা করে কঠোর ভাষায় জানালেন, আমাদের লড়াইটা কাশ্মীরের জন্য, কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নয়। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়তে লড়তে কাশ্মীরিরা ক্লান্ত, অবসন্ন। গোটা দেশের মানুষের তাদের পাশে দঁঁড়ানো উচিত।’
No comments:
Post a Comment