ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলাকে কেন্দ্র করে দিল্লি-ইসলামাবাদের টানাপড়েন সম্পর্ক আরো নাজুক হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবারের এ হামলায় ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর ৪৪ জন সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এজন্য পাকিস্তানকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে বলে শুক্রবার কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স, এনডিটিভি ও এএফপি।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের মহাসড়কে বৃহস্পতিবার আড়াই হাজার সেনা বহনকারী ৭৮টি যানবাহনের একটি গাড়িবহর যাচ্ছিল। এ গাড়িবহরে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) সদস্যদের বহনকারী দুটি বাসে ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক ভর্তি এক ভ্যান ধাক্কা দিলে কমপক্ষে ৪১ জন সেনা প্রাণ হারান। শুক্রবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ জনে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের ইসলামপন্থী জঙ্গি দল জইশ-ই-মোহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মাত্র কয়েক মাস আগে এ হামলার ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী মোদি কড়া ভাষায় পাকিস্তানকে সতর্ক করেন। জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের নিরাপত্তাবিষয়ক বৈঠক শেষে মোদি বলেন, ‘সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের আমি বলতে চাই, তারা খুব বড় একটি ভুল করে ফেলেছে। এজন্য তোমাদের খুব বড় ধরনের মূল্য দিতে হবে। আমি সবাইকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যারা এ হামলার পেছনে রয়েছে তাদের আমরা বিচারের আওতায় নিয়ে আসব।’
একই দিন একটি জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের তাদের পদক্ষেপ গ্রহণের সময়, স্থান ও ধরন সম্পর্কে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মন্ত্রিপরিষদের নিরাপত্তাবিষয়ক বৈঠকের পর জানান, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এছাড়া দেশটিকে দেয়া ‘মোস্ট ফেভরড নেশনস’ তকমাও প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। এ হামলায় যারা জড়িত এবং যারা এর সমর্থন দিয়েছে, তাদের চড়া মূল্য চুকাতে হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ঘটনা নিয়ে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে নিন্দা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে পাকিস্তানকে ‘তাদের দেশ থেকে কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব সন্ত্রাসী দলগুলোকে সমর্থন ও আশ্রয় প্রদান বন্ধের’ আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার আগে কাশ্মীরে সর্বশেষ ভয়াবহ হামলাটি হয় ২০১৬ সালে। সে সময় জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্যরা উরিতে ভারতীয় সেনাদের একটি ঘাঁটিতে হামলা করলে ২০ সেনা প্রাণ হারায়। এর কয়েক সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রী মোদি পাকিস্তানের কাশ্মীরের সীমান্তলগ্ন সব সন্দেহভাজন জঙ্গিঘাঁটিতে অভিযানের নির্দেশ দেন।
No comments:
Post a Comment