অবৈধ অভিবাসন থামানোর কথা বললেও বৈধ অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনও বাধা নেই বলে জানান ট্রাম্প। তবে বিদ্যমান অভিবাসন পদ্ধতি সংস্কার করে অবৈধ অভিবাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ভাষণের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘তার এ ভাষণ রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য নয়। এই ভাষণ মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র দুই দলের নয়, বরং এক জাতি হিসেবে পরিচালিত হবে। তার ভাষায়, ‘কোনও দলের জন্য জেতাটা বিজয় নয়, দেশের জন্যে বিজয় হচ্ছে প্রকৃত বিজয়।’
ভাষণ চলাকালে কংগ্রেসে উপস্থিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তিন যোদ্ধাকে পরিচয় করিয়ে দেন ট্রাম্প। ৫০ বছর আগে চাঁদে অবতরণকারী নভোচারী বাজ অলড্রিনকেও পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, “বিংশ শতাব্দীর আমেরিকা মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। বিজ্ঞানের প্রসার ঘটিয়েছে এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনমান উন্নত করেছে। গোটা দুনিয়ার তা জানা আছে। এখন আমাদের সাহসের সঙ্গে শক্তভাবে সমৃদ্ধ আমেরিকা গঠনের নতুন অধ্যায় রচনায় মনোনিবেশ করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর জন্য জীবনমানের এক নতুন মানদণ্ড তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে বসে আমরা দশকের পর দশক ধরে চলা রাজনৈতিক মতানৈক্য দূর করতে পারি। আগের বিভক্তি দূর করতে পারি। অতীতের ক্ষত মুছে ফেলতে পারি। নতুন জোট করতে পারি। নতুন সমাধান খুঁজতে পারি।’
ট্রাম্প বলেন, ‘জ্বালানি খাতে আমরা নতুন বিপ্লব তৈরি করেছি। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র পুরো দুনিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঈর্ষণীয়। মার্কিন বাহিনী পুরো দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। প্রতিদিনই বিজয় লাভ করছে যুক্তরাষ্ট্র।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘অভিবাসন পদ্ধতির সংস্কার যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। এর মাধ্যমে আমেরিকানদের জীবন ও চাকরির নিশ্চয়তা নিশ্চিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীবাহিনী ও রাজনীতিকদের মধ্যে বিভক্তির অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীরা। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করে সে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’
দেয়াল নির্মাণের বিষয়ে ট্রাম্প যখন বলেন, ‘আমি এটা নির্মাণ করাবো’ তখন রিপাবলিকান সমর্থকরা দাঁড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘দেয়াল যদি উঁচু হয়, অবৈধ সীমান্ত পারাপার কমে যায়।’ তিনি বলেন, ‘এই দেয়াল হবে একটি ইস্পাতের প্রাচীর, কংক্রিটের দেয়াল নয়।’
৫৭০ কোটি ডলারে প্রাচীর তৈরির ‘স্বপ্ন’ ভঙ্গ হলে, জাতীয় সংকট তৈরি হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সীমান্তে শক্তিশালী প্রতিবন্ধকতা তৈরির ফলে অবৈধ উপায়ে সীমান্ত পারাপার কমেছে। এতে করে সানডিয়াগো এবং এল পাসোর মানুষের জীবন নিরাপদ হয়েছে।’
মার্কিন আরও প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমেরিকার কর্মক্ষেত্রে অধিক সংখ্যক নারী যুক্ত হয়েছেন। কংগ্রেসে বিপুল সংখ্যক নারী নির্বাচিত হয়েছেন। আজকের এই অধিবেশনকে তারা আলোকিত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করার লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।’
বাণিজ্য নীতি শক্তিশালী করার কথাও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘চীন বহু বছর ধরে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করেছে। তারা আমেরিকান চাকরির বাজার দখল করেছে। এসব বন্ধের সময় এসেছে। চীনের কাছে ২৫০ বিলিয়ন ডলারের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি ডলার আয় হচ্ছে, যা আগে কখনও হয়নি।’
ভাষণে ছয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ট্রাম্প। এরমধ্যে প্রথমেই নিজের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সফল বলে উল্লেখ করেন তিনি। গুরুত্বারোপ করেন সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের ওপর। অবকাঠামো উন্নয়নে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৫০ কোটি ডলার খরচের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এইডস দূরীকরণের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ না করেই দেশটিকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করাকে নিজ প্রশাসনের সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা, সিএনএন।
No comments:
Post a Comment