Saturday, February 9, 2019
ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক সংকট নিয়ে উরুগুয়ে, মেক্সিকো দিল চারদফা প্রস্তাব
ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধানে চারদফা প্রস্তাব দিল উরুগুয়ে এবং মেক্সিকো। লাতিন আমেরিকার এই দুই দেশের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার উরুগুয়ের রাজধানী মন্তেভিদিও’তে শুরু হয়েছে ভেনেজুয়েলা নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠক। শুরুতে, ‘নিরপেক্ষ দেশের’ সম্মেলনের উদ্যোগ উরুগুয়ে, মেক্সিকো নিলেও, জানুয়ারির শেষের দিকে এতে যুক্ত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সঙ্গে কোস্টারিকা, বলিভিয়া এবং উরুগুয়ে। চারদফা প্রস্তাব ব্যাখ্যা করে উরুগুয়ে এবং মেক্সিকোর বিদেশমন্ত্রীরা বলেছেন, প্রথম পদক্ষেপ হলো অবিলম্বে আলোচনা, যাতে ভেনেজুয়েলার শাসকদল, রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে স্বঘোষিত অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি হুয়ান গুইদোর নেতৃত্বে বিরোধী দক্ষিণপন্থীদের সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করা যায়। এরপরে হবে বোঝাপড়ার পর্ব, তা শেষ হলে অঙ্গীকারের পর্ব, একেবারে শেষে অঙ্গীকার রূপায়ণের পর্ব। বিরোধীদের দাবি মেনে এখনই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের উপর জোর দিতে চায় না কনট্যাক্ট গ্রুপ। কেন তা ব্যাখ্যা করে উরুগুয়ের বিদেশমন্ত্রী রোদোলফো নোভোয়া বলেছেন, ‘এমন এক পরিস্থিতিতে আমরা যদি নির্বাচন করতে বলি, তাহলে আলোচনার উপর আমরা শর্ত চাপিয়ে দেব। আমরা কোনও শর্ত চাপিয়ে দিতে চাই না।’ ‘রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে ভেনেজুয়েলাকে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক পদক্ষেপকে’ ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। এল পিরিয়োদিকো’তে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেইজ ‘আলোচনার পথ’কে সমর্থন জানিয়েছেন, একইসঙ্গে ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’ বজায় রেখেছেন। এল পিরিয়োদিকো’র তরফে সামরিক হস্তক্ষেপের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে, তাঁর অবস্থান ছিল স্পষ্ট, ‘আমি মনে করি তেমন কিছু ঘটবে না।’ জানান, ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের যুগ আমরা বহুদিন পেরিয়ে এসেছি।’ ভেনেজুয়েলার জন্য উরুগুয়ে, মেক্সিকোর উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব আদৌ মেনে নেয়নি। নিন্দা করেছে মার্কিন হুমকির। রাশিয়াকে এই বৈঠকে থাকতে না দেওয়ার উস্মা প্রকাশ করেছেন উপবিদেশমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। বলেছেন, ‘আমরা অন্তত পর্যবেক্ষক দেশ হিসাবে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের বলা হলো এই কাঠামোয় তা সম্ভব নয়।’ ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে হুয়ান গুইদোকে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে ব্রিটেন, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন সহ ইউরোপের দেশগুলি। তার আগে মাদুরোর উদ্দেশে শুনিয়েছিল চরমপত্র। ‘আট-দিনের মধ্যে হয় নতুন করে নির্বাচন করতে হবে, নতুবা তারা বিরোধী নেতার দাবিকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেবে।’ রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সোমবার বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক আইনকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চাই, সেকারণে লাতিন আমেরিকার দেশগুলি, বিশেষত মেক্সিকো ও উরুগুয়ের উদ্যোগকে সমর্থন জানাচ্ছি।’ কারণ, ‘তারা ভেনেজুয়েলার সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।’ যদিও, দুঃখজনক হলো ইউরোপ আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চাইছে। ওরা চরমপত্র দিয়েছে। এটা মধ্যস্থতার পথ হতে পারে না। এদিকে, ভেনেজুয়েলার শান্তির জন্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার পথকে সমর্থন জানিয়েছেন লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের ২৭টি দেশের ৫০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁদের এই বক্তব্য পাঠানো হয়েছে উরুগুয়ের রাষ্ট্রপতি তাবারে ভাজকুয়েজ এবং মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি লোপেজ ওব্রাডোরের কাছে। তাতে তাঁরা বলেছেন, ‘ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক জীবনে বাইরের হেনস্থা এবং হস্তক্ষেপের কারণে আমাদের অঞ্চলের শান্তি, সুস্থিতি, সহযোগিতা ও ঐক্য বিপদের মুখে, যা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’ যোগ করেছেন, ‘কেউ কেউ আবার যুদ্ধের ধুয়ো তুলছে, হস্তক্ষেপ চাইছে।’ মন্তেভিদিও’র বৈঠককে তাঁরা সমর্থন জানিয়েছেন। ‘এই অঞ্চল, এই বিশ্বের শান্তির জন্য আলোচনা এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়াকে আমরা সমর্থন জানাই।’ উরুগুয়ে, মেক্সিকো, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েদর ছাড়া কনট্যাক্ট গ্রুপে রয়েছে জার্মানি, স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল, ব্রিটেন এবং সুইডেন। কারাকাসে সম্প্রতি এক বিক্ষোভসভা থেকে গুইদো নিজেই নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেন। বিবিসি’র বয়ানে ‘মিনিটকয়েকের’ মধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে স্বীকৃতি দেন। একইসঙ্গে, গুইদোকে সমর্থনের জন্য অন্যান্য দেশের কাছে আরজি জানান। ট্রাম্পের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, চিলি, পেরু, ইকুয়েদর, আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়ে— লাতিন আমেরিকার সাতটি দক্ষিণপন্থী সরকার ইতিমধ্যেই গুইদোকে অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গুইদোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস)। কিউবা ছাড়াও মেক্সিকো, বলিভিয়া, উরুগুয়ে, নিকারাগুয়া, এল সালভাদোর দাঁড়িয়েছে মাদুরোর পাশে। এদিকে ভেনেজুয়েলায় নতুন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো। রুশ আরটি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কোনও সম্ভাবনা নেই।—সিনহুয়া/এএফপি
Labels:
লাতিন আমেরিকা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment