এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা বিভাগ। খুলনা বিভাগের খুলনা, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে এইডস ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষা না করা, নিষিদ্ধ পল্লী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা, কনডম অনীহার কারণে এ পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসাপাতালে স্ট্রেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ জেলায় এইচআইভির সংখ্যা প্রায় ১৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছে ১০৬ জন। এছাড়া ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে আরও ১০ জনকে এইডস রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত এক বছরে শিশুসহ সনাক্ত করা হয় ৩৬ জনকে।
সূত্র আরও জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় prevention of mother to child of HIV (PMTC) সেবাটি দেয়া হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালে ওই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্যা মো. নুরুল আসলাম বলেন, তাদের এ সেবার আওতায় খুমেক হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস সনাক্ত করা হচ্ছে। প্রতিমাসে গড়ে তিনজন করে এইচআইভি পজেটিভ ব্যক্তি সনাক্ত হচ্ছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ সালে ১৫ নবেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ২৬৯ জন গর্ভবতী মায়ের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে দুজন গর্ভবতী মা ও একজন শিশুর পজেটিভ পাওয়া গেছে।
এছাড়া একই সময়ের মধ্যে খুমেক হাসপাতালে এআরটি সেন্টার থেকে এক হাজার ৬১ ব্যক্তিকে রক্ত পরীক্ষা করে ৩৯ জনের শরীরে এইডস রোগী সনাক্ত করা হয়। যার মধ্যে শিশু রয়েছে ছয়জন। এ সময়ে শিশুসহ সাতজন মারা যায়।
তথ্য মতে, খুলনাসহ ১২ জেলায় ২০১৮ সালে ২৬ নবেম্বর পর্যন্ত ১৯৪ জন এইচআইভি/এইডস পজেটিভ সংখ্যা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ৬৫ জন, যশোরে ৫১ জন, সাতক্ষীরায় ২৬ জন, নড়াইলে ২৬ জন, বাগেরহাটে নয়জন, গোপালগঞ্জে চারজন, পিরোজপুরে তিনজন, ঝিানইদহে পাঁচজন, ফরিদপুরে তিনজন এবং বরগুনা ও চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে একজন করে।
এছাড়া ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে আরও ১০ জনের এইডস রোগী সনাক্ত হয়। এর মধ্যে যশোরে একজন, খুলনায় দুইজন, নড়াইলে তিনজন, বাগেরহাটে দুইজন ও সাতক্ষীরার দুইজন বাসিন্দা রয়েছে। এর মধ্যে এইডস পজেটিভ গর্ভবতী এক মায়ের মৃত্যু হয়। এ তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, খুলনা বিভাগ এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
খুলনায় মুক্তি সেবা সংস্থার (কেএমএসএস) আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় উল্লেখ করা হয়, ট্রাক চালকদের অবাধে নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত, পুরুষ সমকামী (এমএসএম) বৃদ্ধি, কনডম ব্যবহারে অনীহার কারণে এ অঞ্চলে এইডসের ভয়াবহতা বেড়ে যাচ্ছে।
ওই সভায় সিভিল সার্জন এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভাসমান যৌনকর্মী যারা বিভিন্ন রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, নিষিদ্ধ পল্লী, যৌন কর্মী, মাদকসেবি, হিজড়া, সমকামীদের কারণে এ অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রকল্পের পরিচালক ডা. এ টি এম এম মোর্শেদ বলেন, সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এইচআইভি সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়া মানুষদের সনাক্তকরণ সহজ হয়।-
No comments:
Post a Comment