Social Icons

Friday, February 8, 2019

সাপে কাটলে তাৎক্ষণিক করণীয় ও চিকিৎসা

সাপ দেখলে বা সাপের কথা শুনলে গা শিরশির করে না, এমন মানুষ মেলা ভার। অথচ সাপের প্রতি এই ভীতি অনেকাংশেই অহেতুক। গোখরো ও ব্ল্যাক মাম্বা ছাড়া কোনো সাপই আসলে বিনা প্ররোচনায় মানুষকে কামড়ায় না। এই দুই প্রজাতির সাপের মধ্যে শুধু প্রথমটিই আমাদের দেশে দেখা যায়। সাপের কামড় বিষয়ে প্রথম জাতীয় জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের গ্রামে বছরে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬২৩ জন সাপের কামড়ের শিকার হন। এই হিসাবে গ্রামে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন সাপের কামড়ের শিকার হন। এদের মধ্যে বছরে মারা যান ৬ হাজার ৪১ জন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে যান মাত্র ৩ শতাংশ।
সাপ নিয়ে এই অহেতুক ভীতির ফলে সাপের কামড় নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক কৃসংস্কার। বাংলাদেশে মূলতঃ বর্ষাকালে সাপের উৎপাত অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বাড়ে। তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এবং প্রাথমিক চিকিৎসার দু’-একটি নিয়ম জানা থাকলে সাপে কামড় দেওয়া ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয়।
সাপে কাটার লক্ষণ:
১. পাশাপাশি দু’টো ক্ষত থাকে (সাধারণত বিষাক্ত সাপের ক্ষেত্রে)।
২. কোনো কোনো সাপের কামড়ে ক্ষতস্থানে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
৩. ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে পারে।
৪. কোনো কোনো সাপের কামড়ে ক্ষতস্থান ছাড়াও নাক, মুখ বা শরীরের অন্য স্থান থেকেও রক্ত ঝরতে পারে।
৫. ক্ষতস্থানের চারপাশ ফুলে যেতে পারে, এমনকি ফোস্কা পড়তে পারে।
৬. ক্ষতস্থানের চারপাশ কালচে বা নীলচে হতে পারে।
৭. চোখে দেখা, কথা বলা বা শ্বাস নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
৮. চোখে তীব্র ব্যথা হতে পারে, শরীর অবশ হয়ে আসতে পারে।
দংশনের পর তাৎক্ষণিক করণীয়:
১. মনে রাখবেন, সাপে কাটলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই রোগীকে ওই স্থানেই শুইয়ে দিন। রোগীর নড়াচড়া সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে, যাতে বিষ তাড়াতাড়ি শরীরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
২. সাপ হাতে বা পায়ে কামড় দিলে দংশিত স্থানের কিছুটা ওপরে দড়ি বা হাতের কাছে যা পান, তা দিয়েই বেঁধে ফেলুন। মনে রাখবেন, বাঁধন যেন অস্থিসন্ধিতে যেমন কনুই, কবজি বা গোড়ালি এবং গলা বা মাথায় না হয়। যে দড়ি বা কাপড় দিয়ে বাঁধবেন তা যেন চওড়ায় দেড় ইঞ্চি হয়, সরু সুতা বা রাবার ব্যান্ডের মতো না হয়। বাঁধনটি যেন খুব শক্ত না হয়। এমনভাবে বাঁধতে হবে যেন একটা আঙুল ওর মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। বাঁধনটি তাড়াতাড়ি খুলবেন না। এর উদ্দেশ্যই হলো রক্ত চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা। তবে বাঁধন একটানা ২০ মিনিটের বেশি একভাবে রাখবেন না। সম্ভব হলে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর তা আলগা করে দিন।
৩. দংশিত স্থানটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে দিন।
৪. এবার জীবাণুমুক্ত ছুরি বা ধারালো ব্লেড দিয়ে দংশিত স্থান দু’টির প্রত্যেকটি সতর্কভাবে ১ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১ মিলিমিটার গভীরভাবে চিরে দিন।
৫. চেরা স্থানে ছয় মিনিট মুখ দিয়ে চুষলে তিন-চতুর্থাংশ বিষ বেরিয়ে আসে। তবে ৩০ মিনিট চোষা ভালো। মুখ দিয়ে চোষার ক্ষেত্রে যিনি চুষছেন তাঁর মুখে কোনো ক্ষত থাকা চলবে না। চোষার জন্য রাবার বাল্ব কিংবা ইলেকট্রিক সাকার শ্রেয়।
৬. বিষ চুষে বের করার পর দংশন স্থানে আয়োডিন টিংচার কিংবা স্পিরিট লাগাতে হবে। স্থানটিতে এসিড কিংবা ফুটন্ত তেল দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৭. প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীকে দ্রুত নিকটতম হাসপাতালে কিংবা স্থাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে অ্যান্টিভেনম সিরাম বা সর্পবিষনাশী সিরাম মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে রোগীকে টিটেনাস বা ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিষেধক দিতে হবে।
চিকিৎসা:
সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারলে সাপের কামড়ের চিকিৎসা মোটেও জটিল কিছু নয়। একটি সাধারণ এন্টিভেনম ইনজেকশন ও এর সংগে একটি এন্টি-টিটেনাস সিরাম ইঞ্জেকশনই যথেষ্ট একজন রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য। আমাদের দেশে শুধু শঙ্খচূড় সাপ ছাড়া প্রায় সব বিষাক্ত সাপেরই এন্টিভেনম ইনজেকশন বাজারে পাওয়া যায়। শঙ্খচূড় শুধু রাজশাহী অঞ্চলেই দেখা যায়। তাই, সাপে কামড়ালে ভয় পেয়ে দিশাহারা না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
সাপের কামড় থেকে বেঁচে থাকার কিছু টিপস:
১. আশেপাশে কোথাও সাপ দেখলে তাকে চলে যাবার সুযোগ দিন। আঘাত করবেন না বা এমন কিছু করবেন না যাতে এটি কামড়াতে প্ররোচিত হয়। বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা হচ্ছে, আঘাত করার পরও যদি সাপটি চলে যায় তাহলে সাপ ঐ আঘাতকারীকে চিনে রাখে এবং রাতে আঘাতকারীর বাড়ি বা ঘরে গিয়ে দংশন করে। মূলতঃ সাপের স্মৃতিশক্তি খুব কম এবং এ ধরনের অপ-ধারণার কোনো ভিত্তিই নেই।
২. ঘরে সাপ আছে এমন সম্ভাবনা থাকলে, বিশেষত মাটির ঘর হলে এবং তাতে ইঁদুরের গর্ত থাকলে কার্বলিক এসিড কিনে বোতলসহ ঘরের কোনাগুলোতে রেখে দিন। গর্তে কিছুটা কার্বলিক এসিড ঢেলেও দিতে পারেন।
৩. একগোছা খড়ের ভেতরে কয়েকটি শুকনো মরিচ নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে গর্তে ধোঁয়া দিলেও সাপ থাকলে বেরিয়ে যাবে।
৪. বাড়ির আশেপাশে ঝোপ-ঝাড় থাকলে তা পরিস্কার করে ফেলুন।
৫. বর্ষায় কোথাও ঘুরতে গেলে হাঁটা-চলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates