Social Icons

Sunday, January 3, 2016

নবান্নে সাহায্য চেয়েও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু দুঃস্থ তরুণীর

'অনাহারে মৃত্যুপথযাত্রী দুই প্রতিবন্ধী সন্তানসহ অসহায় মা। একটু খাদ্য ও ওষুধের ব্যবস্থা করে আমাদের বাঁচান...।' এই কয়েকটা কথা লেখা চিঠিটা নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দন্তরে গিয়েছিল গত বছরের আগস্ট মাসে। প্রেরক হতদরিদ্র শোভা সমাদ্দার, থাকেন নবান্ন থেকে মাত্র আধঘণ্টা দূরেই, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে পূর্বপাড়ায় খালপাড়ের বস্তিতে। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও জেলা শাসক, মহকুমা শাসক, হাওড়া পুরসভার মেয়র, শিবপুর কেন্দ্রের বিধায়ক এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে সেই আবেদনপত্রের প্রতিলিপি দিয়েছিলেন শোভা। কেউ কোনো উত্তর দেননি। গতকাল শনিবার নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনে সেই শোভার চোখের সামনেই অর্ধাহারে এবং কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হলো তাঁর ২৬ বছরের মেয়ে যুথিকার। চিকিৎসক মৃত্যুর সার্টিফিকেটে অসুস্থতার কথা বললেও শোভার দাবি, অনাহারে মৃত্যু হয়েছে মেয়ের। ওই পরিবারের চরম দারিদ্র্য ও ছেলে-মেয়ের অসুস্থতার কথা মেনেও নিয়েছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ত্রিলোকেশ মণ্ডল। কিন্তু সব জেনেও কেন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্য চিকিৎসার সুযোগ তাঁদের দেওয়া গেল না, সেই উত্তর দিতে পারেননি তিনি। শোভার স্বামী, পেশায় রাজমিস্ত্রি জিতেন সমাদ্দার ১৯৯৩ সালে মারা যান। তার পর থেকেই পরিবারে চরম দারিদ্র্য। স্নায়ুর অসুখে শোভার মেয়ে যুথিকা দীর্ঘদিন অসুস্থ। দুই ছেলে উত্তম এবং তরুণেরও প্রতিবন্ধকতার কারণে হাঁটার ক্ষমতা নেই। সরু লিকলিকে দুটি পা, পাঁজর দেখা যায়। ছেলে-মেয়েদের দেখভাল ও চিকিৎসার জন্য পাড়াতেই বাড়িতে কাজ করে সামান্য রোজগার করেন শোভা। তাতে চারজনের সংসারে দুই বেলা খাবার জোটে না। তার ওপর চিকিৎসার খরচ। দিন কেটেছে অনাহারেও। প্রতিবেশীরা চাঁদা তুলে পরিবারটির পাশে দাঁড়াতেন। তাঁদেরই উদ্যোগে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানিয়ে চিঠি লেখেন শোভা। অভিযোগ, তার পরও পরিবারটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ। শনিবার সকালে যুথিকার মৃত্যুর পর তার সৎকারের অর্থও ছিল না শোভার কাছে। শেষে প্রতিবেশীরা চাঁদা তুলে সৎকারের ব্যবস্থা করেন। যদিও কাউন্সিলর ত্রিলোকেশ মণ্ডলের দাবি, এটা অনাহারে মৃত্যু বলা যাবে না। মেয়েটি অসুস্থ ছিল। দারিদ্র্যের কারণে শোভারও খুব খারাপ অবস্থা। দুই ছেলে প্রতিবন্ধী। পরিবারটির জন্য তিনিই উদ্যোগ নিয়ে গমের ব্যবস্থা করে দেন। ত্রিলোকেশের কথায়, ২০১৫ সালের ১১ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ আমিই নিয়েছিলাম। মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে সেই চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শোভা সেদিন মন্ত্রীর কাছে আসতে পারেননি। পরে অন্য কাউকে দিয়ে নবান্নে চিঠিটি পাঠান।  তা হলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা হলো না কেন? কাউন্সিলরের বক্তব্য, চিঠি দেওয়ার পর সেভাবে তদ্বির করা হয়নি। শোভার চিঠি নিয়ে দায় এড়িয়েছেন হাওড়া পুরসভার মেয়র তথা চিকিৎসক রথীন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, অপুষ্টি বা অনাহারে মৃত্যু। ডাক্তার যদি সার্টিফাই না করে তা হলে বলা সম্ভব নয়। পরিবারটি না খেতে পেয়ে দিন কাটাচ্ছে, এমন অভিযোগও পাইনি। সত্যি হলে পুরসভা সহযোগিতা করবে। খালপাড়ের বস্তিতে এক টুকরো ইটের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শোভা কিন্তু নিজের অপারগতার কথাই আবার জানালেন। তাঁর কথায়, স্বামী বেঁচে থাকাকালীন ছেলে-মেয়েরা ভালোই ছিল। পরে নার্ভের রোগে হাঁটা-চলা বন্ধ হয়ে যায়। মেয়ে শেষ চার দিন ধরে অসুস্থ ছিল। কিন্তু ডাক্তার দেখানোর টাকা কোথায়? পাড়ার লোক, কাউন্সিলর কিছু কিছু সাহায্য করত। আমি মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুটো প্রতিবন্ধী ছেলেকে কে দেখত? তাই বিনা চিকিৎসাতেই তাকে কোনোদিন সামান্য ভাত, কোনোদিন মুড়ি দিচ্ছিলাম। 

সূত্র : এই সময়

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates