Social Icons

Sunday, January 3, 2016

দীর্ঘশ্বাস ভারী হয়েই চলেছে জুবায়েরের

বাড়ি ফিরেছেন দিন চারেক আগে। দিন দুয়েক থাকবেন বলে। জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, সামনে ব্যস্ত ক্রিকেটসূচি—আবার কবে বাড়ি ফেরার ফুসরত মেলে! কিন্তু জামালপুর গিয়েই এমন এক দুঃসংবাদ পেলেন, আপাতত আর ঢাকায় না ফিরলেও চলে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জন্য ঘোষিত জাতীয় দলের ২৭ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডেও যে ঠাঁই হয়নি জুবায়ের হোসেনের! ঢাকায় ফেরার তাড়া নেই তাই। বরং প্রিয়জনের সান্নিধ্যে একটু যেন লুকিয়ে থাকতে পারলেই বাঁচেন ২০ বছরের এই তরুণ। মুঠোফোনের ও-প্রান্ত থেকে যাঁর দীর্ঘশ্বাসটা টের পাওয়া যায় স্পষ্ট, ‘এখন বরং যত দেরিতে ঢাকায় যাওয়া যায় ততই ভালো। সবাই আমার সামনে দিয়ে অনুশীলন করবে, আবার কিভাবে কিভাবে তাকাবে। থাক, দরকার কী ফেরার! এখানেই থাকি কয়েকটা দিন।’ অথচ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেই খেলেছেন জুবায়ের। খুব খারাপও কি করেছেন তাতে? প্রথম ওভারে ১৭ রান দিলেও পরের ওভারে তুলে নেন দুই উইকেট। তবু পরের ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ, তবু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দল পাননি, তবু জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে থাকে না তাঁর নাম। উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ান তাই জুবায়ের। দিকভ্রান্তের মতো হাতড়ে খোঁজেন পথের দিশা। বুকের খুব গহিনের এক চিলতে কষ্টের মতো তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, ‘মাঝে মাঝে নিজেকে খুব দুর্ভাগা মনে হয়। মনে হয়, লেগ স্পিনারদের আসলে আমাদের দেশে কোনো মূল্য নেই।’ অথচ এই জুবায়েরের মধ্যে অমূল্য রত্নের ছায়াই দেখেন জাতীয় দলের কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ‘এ’ দলের কোচের দায়িত্বে থাকা রিচার্ড হালসাল টিম মিটিংয়ে ঘোষণা দেন, ‘তোমাদের দেশের সবাই শুধু তাত্ক্ষণিক ফল চায়। সেটি না করে যদি এই ছেলেটিকে সময় দাও, উল্টাপাল্টা কথা না বলে সাহায্য করো, তাহলে ও বাংলাদেশকে অনেক ম্যাচ জেতাতে পারবে।’ সেই সফরে প্রতিপক্ষ কোচ এমনকি আম্পায়াররা পর্যন্ত মুগ্ধ তাঁর লেগ স্পিন দেখে। তাতে উদ্ভ্রান্ত জুবায়ের বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন আরো, ‘সবাই বলেন যে, আমি নাকি খুব ভালো বোলার। আমি নাকি অনেক দূর যেতে পারি। কিন্তু কই, আমাকে তো কেউ খেলারই সুযোগ দেয় না। ঢাকা লিগেও একাদশে থাকি না, বিপিএলে পর্যন্ত দল পাই না। যদি খেলারই সুযোগ না পাই, তাহলে আমি ভালো না খারাপ বোলার—সেটি কিভাবে বুঝব!’ নিজেকে তাই দুর্ভাগা মনে হয় জুবায়েরের। দুর্ভাগা কি এই হতভাগা বাংলাদেশও নয়? এমন স্পেশালিস্ট একজন লেগ স্পিনার পেয়েও তাঁর প্রতিভা যে কাজে লাগাতে পারছে না! বিপিএলে এলেবেলে কত বোলার দল পেয়ে যায়! কিন্তু জুবায়েরকে দলে নেওয়াটা অসম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর। ২০ বছরের এই তরুণ তাই একাডেমি মাঠে ন্যাশনাল গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে অনুশীলন করে যান একা একা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে খেলে লেগ স্পিনের ওই বিরল শিল্প ঝালাই করার চেষ্টায় মগ্ন। সংলগ্ন শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে কানে বেজে আসে বিপিএলের সুর। কিন্তু সেখানে এক দিন গিয়েই যাওয়ার তৃষ্ণাটা মরে যায় জুবায়েরের, ‘খুব কষ্ট লেগেছে, জানেন! আমাকে যে কেউ নেয়নি, সেটি তো জানে সবাই। এক দিন স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম, তখন সবাই এমনভাবে আমার দিকে তাকাতে লাগল যে, খুব অসহায় লেগেছে। দ্রুত তাই স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে এসেছি একাডেমিতে। আর যাইনি।’ বিপিএলে না থাকাটা তবু মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় দলের ২৭ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডে না থাকাটা তাঁর মনে এঁকে দিয়েছে গভীর ক্ষতচিহ্ন। তাই তো জুবায়েরের কণ্ঠ চিরে বেরিয়ে আসে অভিমানের পংক্তিমালা, ‘বিপিএলের মালিকরা আমাকে না ডাকতে পারে। কিন্তু জাতীয় দলে তো আমি সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও খেলেছি। তাহলে এবার ২৭ জনের মধ্যেও কেন থাকতে পারব না! কোথা থেকে যে কী হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। কে জানে, আমি হয়তো এর যোগ্যই না।’ আবার ওয়ানডে-টি টোয়েন্টির এই রমরমা যুগে, অর্থ-বিত্তের ওই ঝনঝনানির সময়ে একজন ২০ বছরের তরুণ কী করে ওই দুই ফরম্যাটের কথা ভুলে শুধু টেস্টে মনোযোগ দেয়! তা-ও যদি বাংলাদেশ টেস্ট খেলত নিয়মিত! এই বছরের প্রথম টেস্ট খেলতে খেলতে হয়তো আগস্ট। লেগ স্পিনারদের যেখানে বেশি বেশি ম্যাচ খেলা প্রয়োজন, সেখানে বসে থাকতে থাকতে জুবায়েরের না বোলিংয়ে ঘুণ ধরে যায়! তবে তাঁকে ব্রাত্য বলে ঘোষণা করা হলেও, একের পর এক আঘাত এলেও হাল ছেড়ে দিতে নারাজ জামালপুরের তরুণটি। অভিমানী মন নিয়েও লড়াইয়ের ঝাঁঝ ঠিকই তাঁর কণ্ঠে, ‘লেগ স্পিনার বলে আমার এই অবস্থা তো! কিন্তু আমি এ ছাড়া আর কিছু পারি না। যত দিন ক্রিকেট খেলব, লেগ স্পিনই করব। আর তা দিয়ে আবার দেখবেন ঠিকই জাতীয় দলে জায়গা করে নেব। সামনে বিসিএল, ঢাকা লিগ আছে। সেখানে ভালো করে আগে টেস্ট খেলি। সেখানে খুব ভালো করলে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি দলেও হয়তো আবার ডাকবেন আমাকে।’ তাই যদি হয়, তাহলে তো কথা নেই। নইলে অনেক কথাই থেকে যাবে কিন্তু। গণ্ডায় গণ্ডায় বাঁহাতি স্পিনারের দেশে বিরল প্রজাতির প্রতিভা হয়ে এসেছেন এই লেগ স্পিনার। সেই জুবায়ের হোসেনের প্রতিভা যদি বিকশিত না হয়, সেটি অপচয়ের দায় তখন এড়াতে পারবেন না বাংলাদেশের ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট কেউ। কেউ না! 

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates