Social Icons

Thursday, September 1, 2016

রুসেফের অভিশংসন: কীভাবে দেখবে ইতিহাস?

 ১৯৯২ সাল। ওই বছর ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো কোলার ডি মেলোকে (কোলার নামে বেশি পরিচিত) অভিশংসনে এককাট্টা হয়েছিলেন দেশটির সিনেট ও কংগ্রেসের সদস্যরা। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। অথচ এর মাত্র তিন বছর আগে ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে কোলার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কোলারের অভিশংসন নিয়ে তেমন কোনো কথা ওঠেনি। অবৈধ উপায়ে পাওয়া টাকায় গাড়িসহ অন্যান্য জিনিস কেনার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।
এই ঘটনার ২৪ বছর পর ব্রাজিলের দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের খড়্গে কাটা পড়লেন দিলমা রুসেফ।
রুসেফের বিরুদ্ধে ওঠা প্রধান অভিযোগ, তিনি দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে ভোট পাওয়ার জন্য দেশের আর্থিক অবস্থা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছেন। ভোটের কথা মাথায় রেখে তিনি অবৈধভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অর্থ নিয়ে তা জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্পে বেশি বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন।
কোলারের সঙ্গে রুসেফের অভিশংসনের বড় তফাত হলো, কোলারের দুর্নীতির বিষয়ে জনমনে সন্দেহ ছিল না। কিন্তু দিলমার যে দোষে তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে হলো, তা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ইতিহাসই বা এই বিষয়টিকে কেমন করে দেখবে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে নির্বাচিত হন রুসেফ। বিরোধীরা ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলেছিল। অনেকেই বলেন, অভিশংসনের বীজ সেখানেই রোপিত হয়েছিল। তিনি যে মুহূর্তে ক্ষমতা নিলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা তখন অনেকটাই নাজুক। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার মাত্র তিন মাসের মধ্যে নাজুক অবস্থার প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাসে দুর্নীতির অভিযোগ তাঁর দল ওয়ার্কার্স পার্টির আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় ২০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয় বলে কোম্পানি স্বীকার করে। গ্রেপ্তার হন পার্টির কোষাধ্যক্ষ। এর পাশাপাশি তীব্র মূল্যস্ফীতিতে কয়েক লাখ মানুষ চাকরি হারান। ব্রাজিলের মুদ্রার মান অর্ধেকে নেমে আসে।
গত বছরের শেষ দিকে রুসেফের সঙ্গে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার এদোয়ার্দো কুনহার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কুনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিশংসনের অভিযোগ গ্রহণ করা না-করার বিষয়টি স্পিকারের হাতেই থাকে। তিনি তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করে রুসেফের বিরুদ্ধে অভিশংসনের আবেদন গ্রহণ করেন।
আর্থিক অভিযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও পড়েন রুসেফ। গত মার্চ মাসে তাঁর জোটসঙ্গী পিএমডিবি জোট ছাড়ে। রুসেফের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল টেমার ভেতরে-ভেতরে রুসেফের বিরুদ্ধে লেগে পড়েন। রুসেফের সরকারের পতন তাতে আরও ত্বরান্বিত হয়।
রুসেফ ও তাঁর সমর্থকেরা বরাবরই বলে আসছেন, তাঁকে ঠান্ডা মাথায় সরিয়ে দেওয়ার জন্যই অভিশংসন করা হয়েছে। এটিকে রুসেফ ‘ক্যু’ বা ‘অভ্যুত্থান’ বলে আখ্যায়িত করে আসছেন।
দুই যুগ আগে প্রেসিডেন্ট কোলারকে অভিশংসনের সময় ব্রাজিলের সমাজ যতটা বিভক্ত ছিল, এখন এর চেয়ে অনেক বেশি।
রুসেফকে যেসব প্রক্রিয়ায় অভিশংসন করা হলো, ইতিহাস নিশ্চয়ই এর চুলচেরা হিসাব করবে। দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে টেমার সরকার কতটা সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারে, এর ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।









No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates