জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকের শালদুধ পান করালে শতকরা ৩১ ভাগ নবজাতকের মৃত্যুরোধ হতে পারে। শালদুধ শিশুর প্রথম ও অত্যন্ত কার্যকর টিকা হিসেবেও কাজ করে।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফএফ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করালে ১৩ শতাংশ শিশুমৃত্যু এবং ৬ মাস বয়সের পর মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করলে শতকরা ৬ ভাগ শিশুমৃত্যু হ্রাস করা সম্ভব।
এতে দেখা যায়, যেসব শিশু মায়ের দুধ পান করেনি তাদের তুলনায় যারা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করেছে তাদের বুদ্ধিমত্তা গড়ে ২ দশমিক ৬ গুণ বেশি। দেশে প্রতিদিন পাঁচ বছরের কম বয়সি ২৫০ জন শিশু অপুষ্টিতে প্রাণ হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) সূত্র মতে, ২০০৪ সালে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল শতকরা ২৪ ভাগ, ২০০৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ শতাংশে, ২০১১ সালে এই হার ৪৭ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৬ মাস পর্যন্ত শিশু বুকের দুধ পান করে দেহ বৃদ্ধি ও মেধা বিকাশের সম্পূর্ণ উপাদান পেতে পারে। এছাড়া শিশুকে বুকের দুধ পান করালে নারীর স্তন ক্যান্সার, গর্ভাশয় ক্যান্সার, স্থুলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. এস কে রায় জানান, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে নানা জটিলতা থেকে শিশু মুক্ত হতে পারে। শিশুর ৬ মাসের পর দুধের শক্তি চাহিদার ৪০ শতাংশ আসে মায়ের দুধ থেকে। পরে আরো কম আসে। তাই ৬ মাস বয়সের পর শিশুকে মায়ের দুধের পর বিকল্প খাবার দিতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের দুধে আছে প্রচুর আমিষ, ভিটামিন-এ, বি-১২,ভিটামিন-ই, জিংক এবং আই জি এ নামের ইমিউনোগ্লোবুলিন, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা ও বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে শিশুকে সুরক্ষা করে। মায়ের দুধের উপাদানে তারতম্য হয়। প্রথম দিকের দুধকে বলে প্রারম্ভিক দুধ এবং শেষের দুধকে বলা হয় শেষের দুধ। প্রথম দিকের দুধ শেষের দুধের চাইতে পাতলা, এটা বেশি পরিমাণে তৈরি হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা এবং অন্যান্য পুষ্টি থাকে। শেষের দুধ দেখতে সাদা হয়। কারণ এতে অনেক চর্বি থাকে। এ চর্বি মায়ের দুধের বেশিরভাগ শক্তি সরবরাহ করে থাকে। এজন্য শিশুকে একটি স্তনের দুধ সম্পূর্ণ পান করানোর পর পরের স্তনের দুধ পান করাতে হবে। যদি শিশুকে এক স্তনের দুধ পান করানো হয় তবে, শিশু পূর্ণ পুষ্টি পাবে না এবং শিশুর ওজন বৃদ্ধি হবে না। অনেক মা মনে করেন, তার শিশু যথেষ্ট পরিমাণে দুধ পাচ্ছে না, যা সঠিক নয়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। বাসস।
No comments:
Post a Comment