হুমকি-ধামকি বা নির্যাতন যেকোনো সম্পর্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুকাল থেকেই অনেক শিশু অত্যাচারী হয়ে ওঠে। অন্য শিশুদের বা ছোট ভাই-বোনের প্রতি অত্যাচারী শিশুটিকে সামলে নেওয়ার দায়িত্ব বাবা-মায়ের। অনেক শিশু রয়েছে যারা অন্যদের হুমকি-ধামকি দিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এমন অভ্যাস নিয়ে বড় হতে থাকলে শিশুটি বড় হয়ে নির্যাতনকারী হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞ রোহান সাবহারওয়াল জানান, টিনএজ বয়সে আমি বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলাম। এটা এক মারাত্মক অভিজ্ঞতা দেয়। যেকোনো মানুষের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গবেষণায় এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। ছোট-বড় সবার ক্ষেত্রে হুমকি-ধামকি সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
অনিচ্ছাকৃত হুমকি? : সাবহারওয়াল জানান, যারা হুমকি দেন তাদের ৯০ শতাংশ পরবর্তিতে এমন আচরণের জন্য অনুতাপ অনুভব করেন। মেন্টাল হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট রেশমা ভালিয়াপ্পান বলেন, অধিকাংশ হুমকি না বুঝে করে মানুষ। এ কাজের পর মানুষের আত্মবিশ্বাসী কমে আসে। অন্যকে নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা তার কমে আসে। বরং শিশুরা এক পর্যায়ে তার এমন আচরণের জন্য চরম মনঃকষ্টে ভুগতে থাকে।
সহজ শিকার : দুর্বলতা যেখানে রয়েছে, সেখানেই শিকারীরা হস্তক্ষেপ করতে পারে। কনসাল্টিং সাইকিয়াট্রিস্ট এবং ফ্যামিলি কাউন্সিলর মাধুরী সিং জানান, শিশুরাও এমন সুযোগ খোঁজে। তারা অন্য শিশুদের মাঝে দুর্বলতা খুঁজে পেলে তাকে হুমকি দিতে চায়। একবার সফল হলে বার বার কাজটি করতে চায়। দুর্বলতার কারণেই মানুষ মূলত অন্যের এমন আচরণের শিকার হয়।
নিয়ন্ত্রণের নেশা : শিশুরা কি বলে হুমকি দিচ্ছে তা জানতে হবে। এর মাধ্যমে তার মানসিকতা সম্পর্কে ধারণা মেলে। সে এসব ধামকির মাধ্যমে কি হাসিল করতে চায় তা জানতে হবে। এসব তথ্য জানলে তাকে বোঝানোর উপায় বেরিয়ে আসবে। মানসিক চাপের কারণেও এমন আচরণ করতে পারে শিশুরা। তার সমস্যাগুলো বুঝতে হবে।
এমন স্বভাব কিভবে হয়? : বলা হয়ে তাকে, এসব বাবা-মায়ের কাছ থেকেই শেখে বাচ্চারা। যারা বাবা-মায়ের হুমকি-ধামকির শিকার হয়, তারা নিজেরাই এমন হয়ে ওঠে। শিশুরা সব সময় বড়দের স্বভাব-চরিত্রে প্রভাবিত হয়। অনেক সময় অন্যদের অনুসরণ করে। আবার যে শিশুরা অন্য শিশুদের কারণে এমন অভিজ্ঞতা পায়, তারাও ধীরে ধীরে নির্যাতনকারীতে পরিণত হতে পারে। আবার যে শিশুরা একাকী সময় কাটায় এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে পায় না, তাদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়। এসব ঘটনা তাদের মাঝে এমন বাজে স্বভাব সৃষ্টি করতে পারে।
বাবা-মা সহায়তা করতে পারেন : এ ক্ষেত্রে একমাত্র বাবা-মা শিশুকে ক্ষতিকর আচরণ থেকে বের করে আনতে পারেন বলে মন করেন সাবহারওয়াল। শিশুরা কি চায় তার দিকে খেয়াল দিতে হবে। আসলে ছেলে-মেয়ের মধ্যে এসব স্বভাব দেখা দিলে তাদের সঙ্গে কথা বলাটা সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হয়ে ওঠে। গোপনে এমন স্বভাব তৈরি হতে থাকলেও জানতে হবে। হয়তো সবার মাঝে সে চুপচাপ হয়ে থাকে। কিন্তু স্কুলে বা বাইরে অন্যদের হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযোগী করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, এমন আচরণ সবার কাছে অগ্রহণযোগ্য। বাবা-মা এ কাজে ব্যর্থ হলে, সন্তানটি এমন এক মানুষে পরিণত হবে যাকে কোনভাবেই আশা করে না সমাজ।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া


No comments:
Post a Comment