কানাডা পৃথিবীর অন্যতম শান্তিপ্রিয়, ধনী ও বিরাট দেশ। তবে এ কথাও সত্য যে এখানে এমন বাস্তবতা আছে যা আপনি এখানে আসার আগে কল্পনাও করতে পারবেন না। সব জেনে এর মুখোমুখি হলে কষ্ট কম এবং তুলনামূলকভাবে দ্রুত পেশাগত উন্নতি হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা কানাডায় যারা থাকি তারা অধিকাংশ সময় এ ব্যাপারে দেশের লোকদের সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হই। অবশ্য এর অনেক কারণও থাকতে পারে। যেমন কেউ যদি তাঁর আত্মীয়স্বজন বা কাছের লোকদের এই বাস্তবতার কথা বলেন তাহলে তারা ধরে নিতে পারে যে তিনি তাদের কানাডায় আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহী করছেন। আবার হয়তো আমরা আমাদের সঠিক অবস্থাটি বলতে হীনমণ্যতায় ভুগি।
ফলে আমাদের দেশের অনেক ভাইবোন কানাডায় এসে বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। না পারেন দেশে ফিরে যেতে আবার না পারেন এটা সহ্য করতে। তাঁর জীবনটা হয় বিষাদময় আর তিনি নিজের মনেই নিজে বলতে থাকেন, আগে যদি জানতাম।
এটা জানানোর জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। নানা ভাবে মানুষ কানাডাতে অভিবাসী হন। অনেকে ভ্রমণ ভিসায় বা কেউ কেউ ছাত্র হিসেবে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এতে কেউ সফল হন এবং কেউ হন না। আবার অনেকে কোনো সংগঠনের Sponsored রিফিউজি হিসেবেও আসেন বা জাতিসংঘের রিফিউজি কোটাতেও আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা না থাকলেও চলে। বিজনেস বা ইনভেস্টর ক্যাটাগরিতেও অনেকে আসেন।
আমার এ লেখার মূল উদ্দেশ্য স্কিলড ইমিগ্রান্ট ক্যাটাগরি নিয়ে। এ ক্যাটাগরিতে উচ্চশিক্ষা থাকতে হবে। শিক্ষা অনুযায়ী পেশাগত অভিজ্ঞতা এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতাও থাকতে হবে।
যাঁরা স্বল্পশিক্ষিত, অপেশাদার এবং কোনোভাবেই দেশে কিছু করতে পারছেন না তাঁরা কানাডায় আসলে এখানকার আশাতীত বাস্তবতা তাঁর জন্য তেমন সমস্যার হবে না, বরং তিনি ভালোই করবেন। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত ও পেশাদার যাঁরা তাঁদের বলছি, ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে এবং ইংরেজি ভাষায় নিজেকে প্রফেশনাল লেবেলে এনে তারপর এখানে পাড়ি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করবেন।
বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা ও বড় পদে চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনি চাইবেন না এখানে এসে আপনার বাকিটা জীবনটা খারাপভাবে কাটুক। যেমন রেস্টুরেন্টের কর্মী হিসেবে, রাস্তায় চা-কফি বিক্রি, দোকানে কাজ করে, পিজ্জা ডেলিভারি দিয়ে বা ট্যাক্সি চালিয়ে।
দুঃখজনক হলেও অনেক উচ্চশিক্ষিত ও পেশাদার ইমিগ্রান্ট এখানে এগুলি করছেন। কারণ তাদের দেশে যাওয়ার এবং ফিরে গিয়ে আবার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বা ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সমস্ত বাস্তবতা সহ্য করে দিন পার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক চিকিৎসক ও প্রকৌশলীকে দেখা যায় এখানে এ ধরনের কাজ করতে।
তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখানে জীবন সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দের হবে যদি একটি প্রফেশনাল চাকরি পান। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু জিনিস নতুন করে শুরু করার শক্ত উদ্যোগ থাকতে হবে। দেশ থেকে এসে দুই-এক মাসের মধ্যেই একটি প্রফেশনাল চাকরি পাওয়ার সুযোগ শতকরা দুই-তিন ভাগের ক্ষেত্রে। নিজের দক্ষতা বা যোগ্যতার ব্যাপারে আস্থা থাকলেই আপনি এই সুযোগের আশায় দেশ ত্যাগ করতে পারেন।
TOEFL, IELTS, ইংরেজিতে বেশি মার্কস এবং ইংরেজিতে ভালো কথা বলার যোগ্যতা এখানকার প্রফেশনাল কাজের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই আপনাকে এখানে এসে নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আপনার একটি প্রফেশনাল ডিগ্রি থাকলেও আপনাকে ছোটখাট কিছু করতে হবে কারণ আমাদের দেশের এবং এখানকার অনেক ব্যবস্থা আলাদা ধরনের। কত সময় বা কি পরিমাণ পরিশ্রম ব্যয় করতে হবে সেটা সম্পূর্ণ আপনার ওপর নির্ভর করবে। এটা যদি করতে পারেন তাহলে আপনি এখানে একটি প্রফেশনাল চাকরি পেতে পারেন। যদি একটি প্রফেশনাল চাকরি যদি পান তাহলে আপনার বাকি জীবন তুলনামূলকভাবে নিরাপদে, নির্ভয়ে এবং ভালোভাবে কাটাতে পারবেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মটিভেটেড, পজিটিভ, কমিটেড এবং কনফিডেন্ট মানুষের জন্য এখানে মানিয়ে নেওয়া এবং ক্যারিয়ার ডেভলপ করা অনেক সহজ।


No comments:
Post a Comment