টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। এর মধ্যেই বিপিএলের চতুর্থ আসরের শিরোপা উঠল ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের হাতে।
আগেও দুইবার বিপিএল শিরোপা জিতেছে তখনকার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর। দুবারই শিরোপা উঠেছিল অধিনায়ক মাশরাফির হাতে। এবার চতুর্থ আসরে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমবারের মত বিপিএলের শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন সাকিব। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ রাজশাহী কিংসকে ৫৬ রানে হারিয়ে ঢাকাবাসীদের আনন্দে মাতাল সাকিব-সাঙ্গাকারা-ব্র্যাভোরা। ম্যান অব দ্য ম্যাচ কুমার সাঙ্গাকারা।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে টসে জিতে সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটসকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ড্যারেন স্যামির রাজশাহী কিংস। ঢাকার দেওয়া ১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় রাজশাহী। ব্যক্তিগত ৫ রানেই আবু জায়েদের বলে আন্দ্রে রাসেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান নুরুল হাসান। এরপর মমিনুলের সঙ্গী হন গত ম্যাচে দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে ফেরা সাব্বির রহমান। দুজনে মিলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন।
এরপরই হঠাৎ করেই ছন্দপতন ঘটে। ৪ রানের ব্যাবধানে ফিরে যান মমিনুল আর সাব্বির। ২২ বলে ২ চারে ২৬ রান করা সাব্বির দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হন। এরপর সাকিবের বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন ৩০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২৭ রান করা মমিনুল। সেই মুহূর্তে দরকার ছিল একটি বড় জুটির। কিন্তু জেমস ফ্রাংকলিনকে (৫) ফিরিয়ে দেন সানজামুল। বিপজ্জনক হয়ে উঠার আগেই কিংস অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিকে (৬) ফিরিয়ে দেন সাকিব। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তখন ঢাকার হাতে। সানজামুলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন সামিট প্যাটেল (১৭) । দলীয় ৯৮ রানে ফরহাদ রেজাকে (২) ফেরান ডোয়াইন ব্র্যাভো। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে কেসরিক উইলিয়ামস ফিরে যাওয়ার পর আন্দ্রে রাসেল নাজমুল ইসলামকে (১) সাঙ্গাকারার ক্যাচে পরিণত করে রাজশাহীর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ঢাকার দুই ওপেনার মিলে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও ৪২ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। দলীয় ২৩ রানে প্রথম আঘাত হানেন তরুণ স্পিন সেনশেসন মেহেদী হাসান মিরাজ। মেহেদীর ঘূর্ণিতে উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাড়া জাগানো ওপেনার মেহেদী মারুফ (৮)। এরপর ১২ রানের ব্যবধানে এই বিপিএলেই চমক দেখানো টিনএজ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেনের বলে উইকেটকিপার নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ দেন নাসির হোসেন। দলের বিপদে নাসিরের অবদান ৭ বলে মাত্র ৫ রান!
এরপর মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে কিংস অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির। তরুণ মোসাদ্দেক হোসেনকে (৫) সরাসরি বোল্ড করে দেন তিনি। তখনও উইকেটের একপ্রান্ত আগলে আছেন ওপেনার এভিন লিউয়িস। শ্রীলংকান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার সঙ্গে ৪১ রানের ভীষণ প্রয়োজনীয় একটি জুটি গড়েনি তিনি। হাফ সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করেই ছন্দপতন ঘটে লিউয়িসের। ফরহাদ রেজার বলে উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৩১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৪৫ রান করা এই ওপেনার। সাঙ্গাকারার সঙ্গী হয়ে আসেন ডোয়াইন ব্র্যাভো। কিন্তু বেশীক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ডিজে। ১০ বলে ১ চার এবং ১ ছক্কায় ১৩ রান করে দূর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হন তিনি।
দলের এই কঠিন সময়ে ১১ বলে ৮ রান করে সামিট প্যাটেলের শিকার হন আন্দ্রে রাসেল। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও এদিন ব্যর্থ ছিলেন। ফরহাদ রেজার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে তিনি ৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১২ রান করেন। আলাউদ্দিন বাবুও ১ রান করে ফিরে যান। ২০ তম ওভারের পঞ্চম বলে ফরহাদ রেজার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন কুমার সাঙ্গাকারা। বোলার ফরহাদ রেজার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তিনি ৩৩ বলে ২ চার এবং ১ ছক্কায় সময়োপযোগী ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। মূলত তার ব্যাটেই শেষ চার ওভারে ৪৪ রান তুলতে সক্ষম হয় ঢাকা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে সাকিব আল হাসানের দল। ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন ফরহাদ রেজা।
No comments:
Post a Comment