গুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার সেই তরুণী ও তাঁর মা। ছবি : এফএনএস
বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ একাধিকজনের বিরুদ্ধে এক তরুণী ও তাঁর মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন ওই তরুণী।
আজ শনিবার বগুড়া সদর থানায় নারী নির্যাতন ও অপহরণের অভিযোগে মামলা করেছেন তরুণীর মা। পরে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল শুক্রবার রাতে কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির বোন আশার স্বামী তুফান সরকারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের অপবাদে ওই তরুণী ও তাঁর মাকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। রুমকি ও আশাসহ আরো ১০-১২ জন সহযোগী তাঁদের নির্যাতন করেন। পরে নাপিত ডেকে এনে এলাকার সবার সামনে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। মারধরে আহত অবস্থায় তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ কথা বলেন ওই তরুণী। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসায় তো তালা দিছিল আশা আপু, আমার বাসায়, নানুর বাসায়, মামার বাসায়। ঢাকায় থেকে শুনলাম। তারপর রুমকি মামি আমাদেরকে বলতেছে, তোদেরকে মারলে আমার কিচ্ছু হবে না। আমি তিনটা ওয়ার্ডের কমিশনার, পুলিশকে টাকা খাওয়ালেই শেষ, তোরা কী ভাবতেছিস। আবার আশা আপু আমাকে ফোন করে বলে, এসিড মারব। অনেক ম্যাসেজ লিখছে জঘন্য ভাষায়, আছে এখনো ম্যাসেজগুলো। তো আমি তারপর, আমাদের তো আসতে হবে এখানে, মোকাবিলা তো করতেই হবে।’
তরুণী বলেন, ‘সবাই বলল, আস, রুমকি একটা বিচার করবেনি। তো গেলাম, আমরা সরাসরি ঢাকা থেকে গিয়ে রুমকি মামির বাসায় গিয়ে উঠলাম। পা ধরে আমি সব দোষ আমার ঘাড়ে নিয়ে ক্ষমা চাইছি, ক্ষমা করল না। বলতিছে, আশা আসুক। আশা কী বলল, তারপর বিচার হবে। আশা আপু গুণ্ডা-পাণ্ডাদের নিয়ে আসল, আশা আপু অনেক মারধর করল। আশা আপুর মা, রুমকি মামি অনেক মারধর করছে। ওরা করছে আবার মুন্না ওদের বাসার কাজের ছেলে, সে আমার বেনিটা আগে কেটে দিল। তারপর তার মা আমার চুল ছোট ছোট করে কেটে দিল, মামি কেটে দিল। কেটে দিয়ে নাপিতকে ডেকে এনে একদম নাড়ু (ন্যাড়া) করে দিল। আমাকে করছে ভালো কথা, আমার মাকেও একদম নাড়ু করে দিছে!’
‘ওদের চিন্তা-ভাবনা যে, আমার ওর (আশা) বরের সঙ্গে রিলেশন (সম্পর্ক), যার জন্যে ওরা এত কিছু করে ফেলল। আমার পুরা জীবনটাই নষ্ট করে ফেলল। এখন আমি চাচ্ছি, যার জন্য আমার এত বললাম (বদনাম) হয়ে গেছে, এখন তো আর কিুছু করার নাই। সব কিছু হয়ে গেছে, পুরা বাংলাদেশ জেনে গেছে। ও (আশার স্বামী) এখন আমাকে বিয়ে করুক আমার কথামতো। ও তো বিয়ে করার জন্য রাজি, কিন্তু আমি যা বলব, সেই হিসেবে বিয়ে করতে হবে, তাহলে ও ছাড়া পাবে।’
নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী আরো বলেন, ‘এখানে আমি শুনলাম, আমাকে যখন মারধর হচ্ছিল, তারপর নাকি পুলিশকে ও (আশার স্বামী) পাঠাই দিছে। কিন্তু পুলিশ একটু দেরি করছে, তখন তো আমরা বাসায় আসতেছি। ২টার সময় গেছি, চার ঘণ্টা ধরে আমাদের নির্যাতন হয়েছে।’
‘পাড়ার সবার সামনে তো মারধর ও নাড়ু করে দিল। তারপর আমাকে একটা রুমের ভেতর তুলল, ওখানে ১০-১২টা ছেলে ছিল, আশা ছিল আর রুমকি মামি ছিল। তো দিপু এসে আমার মাথায় অনেকগুলো বাড়ি দিছে (মেরেছে) নাড়ু অবস্থায়। আমি একদম বসে পড়েছি, আশা আপু আবার নাকে লাত্থি দিছে, খুব ব্যথা। তারপর বসে বসে রুমকি মামি আমার …হাত দেয়। হাত দিয়ে ছেলেদেরকে বলতিছে, তোরা সবায় কী করবি কর। কিন্তু ছেলেরা কিছু করেনি ওখানে। ওখানে শুধু আমাকে সব জিজ্ঞাসা করতেছিল, আমি সব বললাম।’
তরুণী বলেন, ‘তারপর ওখানে আমাদের মা-মেয়ের জবরদস্তি সাইন (স্বাক্ষর) করে নিল সাদা পেপারে। এখন সবাই বলতেছে, পাড়ার সবার সাইন করে নিচ্ছে। আমি তো সব দোষ আমার ওপর নিয়ে মাফ চাইছি। ওদের তো উচিত ছিল আমাকে মাফ করা একবার। সব যদি আমারই দোষ হইত, এখন ওরা পালাইল কেন? আমি চাই এটার একটা বিচার হোক।’
এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আজ এ ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এ ঘটনায় আসামি তুফানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান তিনি।