বিক্রিত টিকেটে পুনরায় এয়ারপোর্টে চেক-ইন কাউন্টারে ট্রাভেল ট্যাক্স কালেকশনের নামে বিশৃংখলা সৃষ্টি এবং যাত্রির হয়রানির জন্য গাল্ফ এয়ারকে তিন যাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে আজ বুধবার (১২ জুলাই) তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানার আদেশ প্রদান করেন।
বিমানবন্দরের এপিবিএন সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে বাহরাইনগামী গাল্ফ এয়ারের জিএফ-২৪৯ ফ্লাইটের যাত্রীদের চেক-ইন করার সময় অধিকাংশ যাত্রীর কাছে ট্রাভেল ট্যাক্স বাবদ ৩ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। কেন কিংবা কী কারণে এই ট্যাক্স জানতে চাওয়া হলে গাল্ফ এয়ারের পক্ষ থেকে যাত্রীদের বলা হয় যে, টিকেট কেনার সময় কোনও ধরণের ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়নি। এতে যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং বড় ধরনের হট্টগোল শুরু হয়। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) ডিউটি অফিসার সিনিয়র এএসপি আফতাব উদ্দিনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যাত্রিদের লিখিত অভিযোগ নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ জানান, ট্রাভেলট্যাক্সসহ যাবতীয় ট্যাক্স হিসেবে নিয়েই টিকেটের মুল্য নির্ধারণ করা হয়। টিকেটের মূল্য বলতে ট্যাক্স এবং ফ্লাইট ভাড়া যৌথভাবে বুঝানো হয়। সুতরাং যাত্রী টিকেটর মূল্য পরিশোধ করলে বুঝতে হবে তিনি ট্যাক্সও পরিশোধ করেছেন। যাত্রীর কাছে পুনরায় যাত্রাকালে এয়ারপোর্টে ট্যাক্স দাবি করার কোনও যুক্তি নেই। অনেক সময় নতুন অর্থবছরে ট্রাভেল ট্যাক্স বৃদ্ধি পেলে আগের অর্থ বছরের নির্ধারিত রেটে অগ্রিম বিক্রিত টিকেটে অনাদায়ী বর্ধিত ট্যাক্সের অংশ (৫০০-১০০০ টাকা) যাত্রির কাছে দাবি করতে আমরা দেখেছি। কিন্তু গাল্ফ এয়ারের ক্ষেত্রে সেটিও নয়। তারা সম্পূর্ণ ট্রাভেল ট্যাক্সই (তিন হাজার টাকা) এয়ারপোর্টে আদায় করেছেন বা করার চেষ্টা করেছেন।
মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, গাল্ফ এয়ারের সিস্টেম-তথ্য পরীক্ষা করে দেখা যায় তারা ট্রাভেল ট্যাক্সের তিন হাজার টাকা সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে অনেক যাত্রীর কাছেই টিকেট বিক্রি করেছেন। ধারণা করা হয় যে, তারা কিংবা তাদের অনুমোদিত এজেন্ট যোগসাজসে ট্যাক্স ডাটা ম্যানুপুলেট করে ট্যাভেল ট্যাক্স বাদ দিয়ে কম দামে টিকেট বিক্রি করেছেন। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে মূল্য কম দেখিয়ে যাত্রী আকর্ষণ করার কৌশল হয়ে থাকতে পারে। অন্যদিকে যাত্রীর ভ্রমণকালে চেক-ইন কাউন্টারে ঠিকই সেই ট্যাক্স আদায় করে নিচ্ছেন। এটি নিছক একটি প্রতারণা এবং যাত্রীর অধিকার লঙ্ঘন।
এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইউসুফ আরও জানান, শুনানিতে গাল্ফ এয়ার কর্তৃপক্ষ বলেছেন তাদের অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্টদের কেউ কেউ হয়তো ম্যানুয়েলি মানুপুলেট করে ট্যাক্স বাদ দিয়ে টিকেট ইস্যু করে থাকতে পারেন। কিন্তু তাদেরই চুক্তিবদ্ধ ট্রাভেল এজেন্টদের কাছে এই অনাদায়ী ট্যাক্স না চেয়ে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে যাত্রীদের কাছে এয়ারপোর্টে কেন চাওয়া হচ্ছে, এ প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব গাল্ফ এয়ার কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি।
ভোক্তা অধিকার আইনের ৫৩ ধারায় এ জরিমানার আদেশের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম থেকে বিরত থাকার জন্য গাল্ফ এয়ারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করা হয়।
No comments:
Post a Comment