চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও বিশ্বমানে পৌঁছায়নি বাংলাদেশে। ফলে প্রতি বছর বিরাট সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য অন্য দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে। বাংলাদেশি রোগীদের এক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণ এবং উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থাকায় ভারতে চিকিৎসা নিতেই বেশি আগ্রহী বাংলাদেশিরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পাশাপাশি থাইল্যান্ডের ব্যাংককেও চিকিৎসা সেবা নিতে ছুটছেন অনেক বাংলাদেশি।
ব্যাংককের হাসপাতালগুলোর উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং মানসম্পন্ন পরিবেশ শেখানে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের রোগীদের। ব্যাংককে চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও উন্নত এবং আধুনিক চিকিৎসার জন্যই মূলত শেখানে আগ্রহী হচ্ছেন রোগীরা।
ব্যাংককের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভয়েস বাংলার সাথে কথা বলেন থাইল্যান্ডের প্রবাসী বাংলাদেশি রবিউল আলম সিদ্দিক তুষার। তুষার ব্যাংকক ডুসিট মেডিকেল সার্ভিস(বিডিএমএস) এর অধীনে পায়াথাই ২ ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘ ব্যাংককের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক উন্নত। সেখানকার হাসপাতালগুলো আমেরিকান মানদন্ড জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল(জেসিআই) অনুসরণ করে’। এছাড়া পুরো দেশেই একই মানের চিকিৎসা সেবা দেয়াতে থাই সরকার বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ এদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতালগুলোর থেকে সরকারি হাসপাতালগুলো বেশি কার্যকর। এদেশের হাসপাতালগুলোকে খরচের দিক থেকে পাঁচটা গ্রেডে ভাগ করা যায়। কিন্তু এই সবগুলো হাসপাতালেই চিকিৎসার মান একই। কেবল বিলাসবহুলতার দিক থেকে পার্থক্যের জন্য খরচের তারতম্য হয়’। আর একারণেই বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের রোগীরা তাদের চিকিৎসার জন্য ব্যাংককের হাসপাতালগুলোকে বেছে নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তুষার বলেন, ‘ থাই সরকার নিজেদের বৈদেশিক আয় বাড়াতে মেডিকেল বিজনেসের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে এখন। তারা মেডিকেল বিজনেস থ্রু সার্ভিস- এই নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের নজরদারির কারণে চিকিৎসা সেবার মান খুবই উন্নত এখন থাইল্যান্ডে’।
কিন্তু মান ভাল হলেও ব্যাংককে চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুলও। ভারতের তুলনায় প্রায় তিন গুণ খরচ বহন করতে হয় ব্যাংককে। তাহলে কেন বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে যাবে এই প্রশ্নের উত্তরে তুষার বলেন, ‘ এখানে ডাক্তাররা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন। তবে সেটার থেকেও গুরুত্বপূর্ন হল এদের টেকনিশিয়ানরা। এরা খুবই শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত। ফলে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে এবং চিকিৎসা পরবর্তী সেবায় ব্যাংককের হাসপাতালগুলো অতুলনীয়’। এছাড়া ব্যাংককে চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশিদের আরও আগ্রহী করতে গত ১৪ জুলাই ঢাকার রিজেন্সি হোটেলে এক প্রদর্শনী ও সেমিনারের আয়োজন করে পায়াথাই ২ হাসপাতাল।
ব্যাংককের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি ডাক্তারদের কাজের সুযোগ সসম্পর্কে জানতে চাইলে তুষার বলেন, ‘ থাইল্যান্ড চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেদেশে প্রায় সবাই থাই ডাক্তার। আর একারণে অন্যদেশ থেকে চিকিৎসক নিতে খুব বেশি আগ্রহী হয় দেশটি’। এছাড়া থাইল্যান্ডে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সেদেশের লাইসেন্স পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে হবে। আর এই পরীক্ষা হবে থাই ভাষায়। তাই অন্যান্য দেশ থেকে গিয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা সেবা দেয়া কষ্টকর বলে জানান তুষার। নার্সদের ক্ষেত্রেও একই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়তই উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীরা ছুটছে বাইরের দেশগুলোতে। প্রচুর টাকা খরচ করে বাইরের দেশে যাওয়ার পরেও অনেকে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বর্তমানে তাদের জন্য সঠিক গন্তব্য হতে পারে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক। উন্নত সেবা, অত্যাধুনিক চিকিৎসা সামগ্রি এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে গড়ে ওথা ব্যাংককের হাসপাতালগুলো অপেক্ষা করছে রোগীদের সেবার জন্য।
No comments:
Post a Comment